তুরস্কে ৬৪ বছর বয়স্ক এক নারীর পরিবেশ রক্ষার অসম লড়াই
তুরস্কের তুরগুত গ্রামের এই নারীর নাম তাইবে ডেমিরেলা শহরের কাছের নিজের ছয় হেক্টর জমির জলপাই বাগানসহ তুরগুত গ্রামও যেতে বসেছিল কয়লা খনির গ্রাসে। দারুণ সাহসিকতায় ডেমিরেল আপাতত সব রক্ষা করেছেন কয়লা খনি ইয়াতাগান পাওয়ার স্টেশনের কাছ থেকে। কয়লা খনির প্রভাবে ইতিমধ্যে জলপাই বাগানের ওপাশে যে বিরান ভূমি হয়েছে সেখানে একসময় অনেক গাছপালা ছিল।
এর্দোগান সরকার বিদ্যুৎ আমদানি কমাতে চায়। কেননা, সরকারি তথ্য বলছে মোট আমদানি ব্যয়ের শতকরা পাঁচভাগ যায় বিদ্যুৎ খাতে আর দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্র পাঁচ ভাগ মেটে তাতে যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম ও ব্যয়বহুল। বিদ্যুৎ খাতের আমদানিনির্ভরতা কমানোর একমাত্র উপায় হিসেবে কয়লা বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে বর্তমান তুরস্ক সরকার৷
ইউরোপীয় অলাভজনক সংস্থা হেল্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যালায়েন্স (এইচইএএল, বা হিল)-এর হয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন জলবায়ু বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্ট ডেনিজ গুমুজেল৷ তার এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুরস্কের ওই অঞ্চলে দূষণের কারণে গত ৪০ বছরে মারা গেছে অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ৷
অ্যাক্টিভিস্ট ডেনিজ গুমুজেল বলেন, ‘‘বন এবং বাস্তুসংস্থান রক্ষা করার বিষয়টি স্থানীয়দের জন্য একটা যুদ্ধের রূপ নিয়েছে৷’’ সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এখন ৬৪ বছর বয়সি তাইবে ডেমিরেল৷ ইয়াতাগান পাওয়ার স্টেশনের কারণে মুগলা রাজ্যের পাঁচটি গ্রামের পাঁচ হাজার হেক্টর জমির সবুজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে৷ জলপাই বাগানসহ নিজের ছয় হেক্টর জমি রক্ষায় তাই আদালতের শরণাপন্ন হন তাইবে ডেমিরেল৷
পাশের বড় বড় তিনটি পাওয়ার প্ল্যান্টের বিশাল চিমনিগুলোর ধোঁয়া এসে নিজের গ্রামও শেষ করে দেবে- এই আশঙ্কায় পাওয়ার প্ল্যান্টের বিস্তৃতির বিরোধিতা করেও কয়লাখনির বিস্তার রুখতে পারছিলেন না৷ বাধ্য হয়ে মামলা করেন৷ নিজে পড়াশোনা করতে গিয়ে পুরোনো এক মামলার রায় খুঁজে পান, যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, জলপাই বাগানে কয়লাখনি করা যাবে না৷ সেই রায় দেখিয়ে নিজের মামলাও জিতে যান তাইবে৷
ডেমিরেলা মামলা জিতে গেলেও শঙ্কা একেবারেই কাটেনি৷ নিজের ছয় হেক্টর জমি তো তিনি রক্ষা করতে পেরেছেন, কিন্তু চারপাশে কয়লা উত্তোলনের জন্য যে খোড়াখুড়ি শুরু হবে তা তিনি ঠেকাবেন কী করে? পারবেন কি ঠেকাতে? তাই লড়াকু এই নারী সবার কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘আমাদের পরিবেশ কে কেন আমরা ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিচ্ছি? অন্য কোন ব্যবস্থা কি করা যায় না?’’