বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন
নাগরিক সুস্বাস্থ্য, পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ, শহরাঞ্চলের যানজট নিরসন ও সাইক্লিং নিরাপদ পথচলার নেটওয়ার্ক তৈরির দাবীকে সামনে রেখে ২০১০ সালে বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
২০১০ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম শুক্রবার ঢাকার ধানমন্ডি, রায়েরবাগ ও এতদসংলগ্ন এলাকার কয়েকজন পরিবেশবাদী ও সাইকেলরাইডপ্রেমী যুবক বাংলাদেশের সড়কের পাশে নিরাপদ সাইকেল লেনবাস্তবায়ন ও সাইকেলর জন্য প্রয়োজনীয় স্থানে স্থানে সাইকেল পার্কিং স্থাপনের দাবী আদায়ে
“বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ” নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে, যার নের্তৃত্বে ছিল প্রসিদ্ধ সমাজ সেবক ও সংগঠক মোঃ আমিনুল ইসলাম টুববুস। তখন হতে প্রতিবছর এপ্রিল মাসের প্রথম শুক্রবার বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ এর উদ্যোগে এ দিবসটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
গত ৫ এপ্রিল ছিল ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম শুক্রবার। এদিন মুসলমানদের প্রবিত্র মাহে রমজান মাসের পবিত্র জুমাতুল বিদা হওয়ায় খুবই স্বল্প পরিসরে অনাড়ম্বরভাবে রাজধানী গ্রীণ রোডের ক্রিসেন্ট প্লাজায় অবস্থিত ব্রেন্ড এন্ড লাইফ হসপিটাল সেমিনার রুমে বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ এর ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ এর ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এর প্রতিপাদ্য ছিল ”ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, পৃথক সাইকেল লেন বাস্তবায়ন করুন।“
এই প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ জাতীয় ভিত্তিক সম্মাননা সংগঠনের সাথে নিয়ে এদিন বিকাল ৪-৩০ মিনিটে ঢাকাস্থ গ্রীণরোডে সংক্ষিপ্ত সাইকেল র্যালি ও পথসভার মাধ্যমে দিনের কর্মসূচী শুরু করে।
অতপর আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার এবং প্রামান্যচিত্র প্রদর্শনী, পবিত্র জুমাতুল বিদা সামনে রেখে নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করা হয়।
সংগঠণের এর সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম টুববুস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহঃ ইফতিখার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও বিশিষ্ট পরিবেশবিদ মোঃ মাহফুজুর রহমান, পাঠক সমাবেশের সভাপতি লেখক-শিল্পী, গবেষক ও আর্কিভিস্ট আল আমিন বিন হাসিম। আরও উপস্থিত ছিলেন ব্রেন্ড এন্ড লাইফ হসপিটালের কর্ণধার জনাব ফকরুল হোসেন, ধানমন্ডি ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টের সভাপতি মোহাম্মদ তাহাজ্জত হোসেন, বাংলাদেশ ফটো অ্যান্ড ট্যুরিজম ক্লাবের পরিচালক মোঃ শহীদুজ্জামান বাদল, বিডি ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টের এর সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার শোভন কুমার সাহা, ঢাকা সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন, মিরপুর স্টান্ট বয়েজ সভাপতি মোহাম্মাদ আলী, বিডি ক্লিক এর সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ রিয়াজ, নারী সাইক্লিস্ট মারিয়া ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা ও সাইক্লিষ্টগণ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহঃ ইফতিখার পরিবেশ দূষণ হ্রাসে যান হিসাবে সাইকেল এর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং নিরাপদ বাই সাইক্লিং এর সড়কে আলাদা লেন প্রতিষ্ঠার দাবী যে সময়োপযোগী এবং যুক্তযুক্ত তা তুলে ধরেন্।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও বিশিষ্ট পরিবেশবিদ মোঃ মাহফুজুর রহমান মানননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মাট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে স্মাট যান হিসাবে বাই-সাইকেল এর গুরুত্ব বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোটর গাড়ী চালানোর জন্য আলাদা চালক নিযুক্ত করতে হয়- একটা বাড়তি খরচ, আবার নিদিষ্ট সময় ছাড়া তাঁকে পাওয়াও যায় না, তাই চালক না থাকলে হঠাৎ কোন কাজে কোথায়ও যাওয়ার জরুরী প্রয়োজন হলে মোটরযান থাকলেও ব্যবহার করা যায় না, আবার চালকের ব্যবস্থা হলেও যদি জ্বালাণী তেল না থাকে বা মোটর যান হঠাৎ নষ্ট হলে আরো বাড়তি সমস্যা।
অথচ বাই সাইকেলে এসব সমস্যা নাই, প্রয়োজনে যখন তখন বাইসাইকেল ব্যবহার করা যায়্। আবার আলাদাভাবে চালকের, জ্বালাণী তেলের, বেশী দামে গাড়ী ক্রয় করার ও রক্ষণা বেক্ষণের এবং বাড়তি পার্কিং স্থানের প্রয়োজন না থাকায – বাইসাইকেল অত্যন্ত ব্যয় সাশ্রয়ী।।
তাই মানণীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত বাংলাদেশকে স্মাট বাংলাদেশ গড়ার নিমিত্তে যান হিসাবে বাই সাইকেল একদম স্মাট যান। তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণ এখন বাংলাদেশে মারাত্বক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের বায়ু দূষণ সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
বিশ্বের বায়ু দূষণ পরিমাপক সংস্থা একিউআই (AQI-Air Quality Index) তথ্য অনুযায়ী বিগত কয়েক বছর যাবত বিশ্বের ১০টি বায়ু দূষিত শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান উপরের দিকে এবং শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ সময়ে বিশ্বের বায়ু দূষণের শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান শীর্ষে রয়েছে।
এ ছাড়াও সাম্প্রতিক প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের রির্পাটে শুধুমাত্র বায়ু দূষণের ফলে প্রতিবছর বাংরাদেশের ২,৭৩,০০০ জন লোকের মৃত্যু ঘটার বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
আর বায়ু দূষণের প্রধান কারণই হলো জীবাশ্ম জ্বালাণী (প্রেট্টোল, ডিজেল, অকটেন ইত্যাদি) চালিত মোটরযান। অথচ আমাদেরকে আমাদের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে জীবশ্মা জ্বালাণী এবং জীবাশ্ম জ্বালাণী চালিত মোটরযান আমদানী করতে হয়।
যদি সড়কে নিরাপদ বাইসাইকেল চলাচলকে উদ্বুদ্ধ করতে সড়কের পাশে আলাদা সাইকেল লেন স্থাপনসহ কাাঁচা বাজার, বিপণীবিতান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস- আদালত এর অভ্যন্তরে বা প্রাঙ্গণে, সড়কের পাশে, পার্ক, ষ্টেডিয়াম ইত্যাদি জনসমাগম স্থানে নিরাপদ সাইকেল পার্কিং স্থাপন করা যায়।
তবেই দেশের সর্বত্রই জ্বালাণীবিহীন যান হিসাবে বাইসাইকেল এর প্রসার ঘটবে এবং ধীরে ধীরে স্মাট যান হিসাবে সড়কে বাই সাইকেল এর ব্যবহার বাড়তে থাকবে ও ক্রমান্বয়ে জীবশ্ম জ্বালাণী তেল চালিত মোটরযানের সংখ্যা কমতে থাকবে।
এতে জীবশ্মা জ্বালাণী এবং জীবাশ্ম জ্বালাণী চালিত মোটরযানের আমদানী যেমন কমতে থাকবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ঘটবে, পরিবেশ এর দূষণ হ্রাস পাবে, শহরাঞ্চলের যানঝট হ্রাস পেয়ে কর্মঘন্টা বৃদ্ধি পাবে- জনগণের মানসিক ও শারিরীক স্থাস্থের উন্নতি ঘটবে, যাতায়ত ব্যয় হ্রাস পাবে- কতনাভাবে যে বাইসাইকেল দেশের উন্নয়নে সহায়তা করবে তা বলে শেষ করা যাবে না।
তাই পরিবেশ দূষণ রোধ ও দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার কথা মাথায় রেখে শহর ও গ্রামঞ্চলে প্রয়োজনীয় স্থানে বাই সাইকেল পার্কিং ও সড়কে বাই সাইকেল চালকদের নিরাপদ চলের ব্যবস্থা করণ এখন সময়ের দাবী।
ব্রেন্ড এন্ড লাইফ হসপিটালের কর্ণধার জনাব ফকরুল হোসেন বলেন, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ এর সাইকেল লেন বাস্তবায়নের সকল কর্মসূচীতে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে এবং সার্বিকভাবে সহায়তা করে আন্দোলনে একাত্বতা রয়েছি। আগামীতেও এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদে এর প্রধান সংগঠক ও সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম টুববুস সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর হতে নাগরিক সুস্বাস্থ্য, পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ, শহরাঞ্চলের যানজট নিরসন ও সাইক্লিং নিরাপদ পথচলার নেটওয়ার্ক তৈরির দাবীতে এ সংগঠন অত্যন্ত জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসসহ পরিবেশ ও জলবায় এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসে সড়কের পাশে সাইকেল র্যালী, মানব বন্ধন, শান্তিপূর্ণ সভাসমাবেশ এবং বিভিন্ন প্রগতিশীল, পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠনের সাথে বা এককভাবে বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামঞ্চলের সর্বত্রই আমাদের সংগঠণের দাবী এর গুরুত্ব ও উপযোগীতা বিষয়ে জনসাধারণের একটি বিশাল অংশের নিকট গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে।
এ সকল কর্মসূচীতে দেশ ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী- খেলোয়ার, পরিবেশবিদ, উচ্চ পর্যায়ের আমলা- প্রকৌশলী- ডাক্তার-অর্থনীতিবিদ, কৃষিবিদ, সমাজসেবী ও সংগঠকগণ অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের সড়কসমূহে নিরাপদ বাইসাইকেল ব্যবহারে প্রয়োজণীয কাঠামো স্থাপনে আমাদের দাবীর সাথে একাত্বতা প্রকাশ এবং আমাদের দাবীকে মহিমান্তিত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বত্রই নিরাপদে বাইসাইকেল চলাচলের অবকাঠামো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
প্রবিত্র মাহে রমজানের ইফতার সময় ঘনিয়ে আসায় অনুষ্ঠানে অতি সংক্ষিপ্তকারে বক্তব্য রাখেন, ধানমন্ডি ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টের সভাপতি মোহাম্মদ তাহাজ্জত হোসেন, বাংলাদেশ ফটো অ্যান্ড ট্যুরিজম ক্লাবের পরিচালক মোঃ শহীদুজ্জামান বাদল, বিডি ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টের সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার শোভন কুমার সাহা,ঢাকা সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন, মিরপুর স্টান্ট বয়েজ এ-র সভাপতি মোহাম্মাদ আলী রিমন, বিডি ক্লিক এর সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ রিয়াজ, নারী সাইক্লিস্ট মারিয়া ইসলাম,ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় গণসংযোগ বিভাগের কর্মী শারমিন জামান, সংবাদিক মো: লতিফ প্রমূখ।
প্রবিত্র মাহে রমজানের ইফতারী ও সন্মানিত উপস্থিতিগণকে প্রবিত্র কুরআন শরীফ বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।