মানুষের দয়ায় পৃথিবী বেঁচে থাকবে না
সমস্ত পৃথিবীই একটা সমাজ, এক বৃহৎ সমাজের মধ্যে কোটি কোটি সমাজ গড়ে উঠেছে, যেগুলি স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতির নিয়মেই গড়ে উঠেছে প্রকৃতির উপাদানগুলি যেমন, গাছ পালা, নদী নালা, পাহাড় সমুদ্র, পশু পাখি, মানুষ প্রভৃতির মধ্যে যেকোন একটি বা একাধিক যদি নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে যায়।
বিবর্তনের ধারায় যদি অত্যধিক এগিয়ে যায়, ছোট থেকে শুরু করে বৃহতী সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হতে থাকে। যার অনিবার্য পরিণাম স্বরূপ জীবনের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে থাকে। একদিন প্রবলতম সমাজের প্রজাতিটিও অবলুপ্ত হয়ে যায় বা বিবর্তিত হয়ে যায়। পৃথিবীর কোটি কোটি বছরের ইতিহাস দেখলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে ।
বর্তমান সময়ে মানুষ সেই প্রবল প্রজাতি। যারা সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করছে | মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদিনই নিজেদের কবরের পেরেকগুলি পুঁতে চলেছে | এখনই যদি মানুষ পরিবেশ পন্থী দর্শনকে উপলব্ধি না করে। তাকে জীবনে সমাজে রাষ্ট্রব্যবস্থায় অঙ্গীভূত না করে। বিলুপ্তি আসন্ন, বিলুপ্তির আগের ধাপগুলিও কম ভয়ঙ্কর নয় |
উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ু দূষণ
দেশের উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ু দূষণ। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের তথ্য বলছে, সম্প্রতি দেশের বায়ুর মান গড় হার থাকছে দেড়শ থেকে দুইশ, পিএম টু পয়েন্ট ফাইভ বা অস্বাস্থ্যকর বায়ু।
গবেষকদের মতে কলকারখানা ইটের ভাটা ও গাড়ির কালো ধোঁয়াই দূষণের প্রধান কারণ। যা স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি বিপর্যস্ত করে তুলছে জনজীবন।
বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরি উপাদান বায়ু। যার বিশুদ্ধতার মান নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে সরকারের ঊর্ধ্ব মহল। মাথা ব্যথা যেন নেই কারোরই।
অথচ দিন দিন এই বায়ু হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী। মাপ যন্ত্রের মিটার বলছে ঢাকার বায়ুর মান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বায়ু স্বাভাবিক মাত্রা শূন্য থেকে ৫০। অথচ বছরের অন্যান্য সময় সূচক একশোর মধ্যে থাকলেও শীতকালে তা ছাড়িয়ে যায় দেড়শও থেকে দুইশ পয়েন্ট।
ঢাবির গবেষক আবদুস সালাম বলেন, বর্তমানে যে বায়ু দূষণ বা বায়ুর মানের যে অবস্থা তা কোনও ভাবেই স্বাস্থ্যকর নয়। বায়ু মান সূচকেই ঢাকা শহর দুইশরও বেশি আছে।
বায়ুর মান আপডেটের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ওয়েব সাইট আইকিউ এয়ার তথ্য বলছে বিশ্বে সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান কখনো প্রথম আবার কখনো দ্বিতীয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ এর অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, শীতকালে অন্য দেশের তুলনায় দশ গুণ আর বর্ষার সময় ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি।
গবেষকরা বলছেন, নিয়ম না মেনে কলকারখানার পাশাপাশি ইটের ভাটা যানবাহন পরিচালন। সবই বায়ু দূষণের কারণ। বায়ু দূষণ রোধে রয়েছে আইন, রয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশনাও। কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউই।
আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, সঠিক ভাবে যদি আইনের নির্দেশ পালন করা হয় তাহলে অনেক কমে আসবে বায়ু দূষণ।
তাই দূষণ মুক্ত নির্মল বিশুদ্ধ বায়ুর দেশ গড়তে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কাজ করবেন এমনটি প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।
পরিবেশপন্থী সমাজ কেমন হবে ?
বর্তমানের মনুষ্য সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিজ্ঞানকে-প্রযুক্তিকে পরিবেশের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে – যেন এমনটা যে প্রগতি আর প্রকৃতি একে অপরের বিপরীত |
তারই অনিবার্য ফল হিসাবে পাহাড় পর্বত নদী নালা জঙ্গল নিঃশেষ করে গড়ে উঠেছে নগর সভ্যতা কল কারখানা – আধুনিক সভ্যতার সকল উপকরণ | প্রতিদিন লোক সংখ্যা বাড়ছে , বাড়ছে সুখ সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্য – ফলে প্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে একে একে কমে যাচ্ছে | এর কারন হল বর্তমানের সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা |
প্রাকৃতিক সম্পদ যথেচ্ছ পরিমানে কমে যাওয়ার ফলে যে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে তাতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমে জীব বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে – প্রভাব পরছে মানুষের উপর |
ফলে মানুষ প্রকৃতিকে রক্ষা করার একটা অসম্পূর্ণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে | নানা রকম বৃক্ষরোপন কর্মসূচি, গাছ পালা নদী নালা পাহাড় জঙ্গল বাঁচানোর আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে | রাষ্ট্র ব্যবস্থাও জঙ্গল নদী নালা খাল বিল জলাশয় বাঁচানোর মত কিছু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে | কিন্তু সব কিছুর মধ্যে অসম্পূর্ণতা বিরাজ করছে |
যেহেতু পরিবেশ পন্থী দর্শনকে আধার করে সমাজ ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা চালিত হয় না, তাই কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না – পরিবেশ প্রতিদিন আরো বিপন্ন হয়ে পড়ছে |
পরিবেশ পন্থী সমাজ যা ভবিষ্যতে পরিবেশ পন্থী রাষ্ট্র ব্যবস্থা সৃষ্টি করবে – যা প্রযুক্তিকে , বিজ্ঞানকে পরিবেশের বিপরীতে দাঁড় করায় না | এখানে প্রগতি সুস্থ ভারসাম্যযুক্ত পরিবেশের অন্তরায় নয় |
প্রতিদিন প্রগতির সাথে সাথে মানুষের সংখ্যা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পায়, বৃদ্ধি পায় তার সুখ স্বাচ্ছন্দ্য , ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির ভারসাম্য রক্ষা করতে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমান ও গুণাগুণেরও বৃদ্ধির পাওয়া আবশ্যক – কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় তার বিপরীতটিই পরিলক্ষিত হয় |
একটা উদাহরণ দিই – বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য | ধরা যাক নতুন একটি নগর গড়ে তুলতে হবে, বা নগরের লোক সংখ্যা ও তাদের চাহিদা বেড়ে গেছে – সেক্ষেত্রে বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা নতুন নতুন সড়ক, মহাসড়ক, স্কুল কলেজ, নানারকম প্রতিষ্ঠানাদি গড়ে তোলে |
প্রগতির সাথে এগুলি যেমন দরকার তেমনি প্রাকৃতিক সম্পদ – যেমন অক্সিজেন, জলের উৎসও বাড়ানো দরকার – মানে আরো বেশি গাছপালা, নদীনালা জলাশয় দরকার | কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা নতুন বাসস্থান সড়ক, স্কুল-কলেজ, প্রতিষ্ঠানাদি তৈরি করায় গাছপাল-জঙ্গল, নদীনালা জলাশয় ধ্বংস করে ফেলছে |
পরিবেশপন্থী সমাজ এমনটি করবে না, তারা প্রগতির সাথে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যেমন আরো আধুনিক বাসস্থান, সড়ক, প্রতিষ্ঠানাদি নির্মাণ করবে তেমনি গাছপালা নদী-নালা জলাশয় বৃদ্ধির জন্যও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করবে |
নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবে যাতে জঙ্গলে গাছের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, নদী নালা জলাশয়গুলির জল ধারণ ক্ষমতা যাতে আরো বৃদ্ধি পেতে পারে – কম জায়গায় আরো বেশি সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক হট স্পট গড়ে ওঠে |
মানে উন্নয়নের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহারে শুধু বাসস্থান , সড়ক , প্রতিষ্ঠানাদির বৃদ্ধি ও আধুনিকীরন পড়বে না তার সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, বৃদ্ধিও চিহ্নিত হবে |
অর্থাৎ পরিবেশপন্থী সমাজ ব্যবস্থা বিজ্ঞানকে প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবে | পরিবেশপন্থী সমাজ চালিত পৃথিবীতে প্রযুক্তি প্রকৃতির বিপরীত আসনে বসবে না – প্রকৃতি ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনে ভারসাম্যযুক্ত সুস্থ পৃথিবী গড়ে উঠবে – প্রগতির প্রকৃত স্বরূপ প্রতিষ্ঠিত হবে |
সিংগাপুরে চাষবাস বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ
আধুনিক নগররাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত সিংগাপুরে জায়গার অভাবে চাষবাস কার্যত অসম্ভব৷ আমদানির উপর নির্ভরতা কমাতে সে দেশের সরকার নানা অভিনব পথ বেছে নিচ্ছে৷ বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷
সিংগাপুরে এক বহুতল ভবনের ৩২ তলায় উঠলে দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়৷ মায়া হরি সেখানে তরমুজ ও ফুলকপির বীজ লাগাচ্ছেন৷ তিনি ছাদের বাগানে মরিচ, বেগুন ও কলা চাষ করছেন৷ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত মানুষটি অনেকের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন৷ সিংগাপুরের সরকার পারলে হাইটেক নগররাষ্ট্রটিকে অ্যালটমেন্ট বাগানে ভরিয়ে দিতে চায়৷
মায়া বলেন, ‘‘এখানে ঋতু না থাকলেও ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফলমূল ও শাকসবজি ফলানোর চেষ্টা করা যায়৷ তবে সিংগাপুরের বেশিরভাগ মানুষ ফ্ল্যাটে থাকে৷ সেখানেচাষবাস করা কঠিন৷ ফলে কাজটা বেশ সহজ নয়৷’’
সরকার শুধু ভিডিও তৈরি করে বাসায় শাকসবজি ফলানোর কাজে উৎসাহ দিচ্ছে না৷ বীজসহ নানা মালমশলা দিয়ে প্রায় দেড় লাখ ‘স্টার্টার কিট’ মায়ার মতো মানুষের কাছে পাঠানো হচ্ছে৷ নাগরিকদের এক সার্বিক পরিকল্পনার অংশ করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা
এখনো পর্যন্ত সিংগাপুর নিজস্ব চাহিদা মেটাতে মাত্র ১০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন করে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার সেই মাত্রা ৩০ শতাংশে আনতে চায়৷ মায়া হরির মতে, আরও বেশি স্বনির্ভরতা যে সঠিক কৌশল, করোনা মহামারি তা দেখিয়ে দিয়েছে৷
সিংগাপুরের মানুষ খাদ্যের স্থানীয় উপকরণের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখানোর ফলে সুবিধা হচ্ছে৷ শখের মালি হিসেবে মায়া হারি বলেন, ‘‘গোটা দেশ ও নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করে অনেক প্রযুক্তি সম্বল করে এবং আধুনিক পদ্ধতিতে গাছ বড় করার উদ্যোগের মাধ্যমে উৎপাদন আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে৷ শুধু বারান্দায় শাকসবজি ফলিয়ে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো না গেলেও সেটা একটা সূচনামাত্র৷’’
সিংগাপুরকে কৃষিভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে ভাবাই যায় না৷ অনেক দশক ধরে আর্থিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই দেশটি বহুতল ভবনে ভরা৷ সবুজের সমারোহ সত্ত্বেও কৃষিকাজ যেন অতীত যুগের কোনো কার্যকলাপ মনে হতো৷
কিন্তু সিংগাপুরের মানুষ এখন অন্যান্য দেশের উপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে৷ জায়গার অভাব প্রকট হওয়ার কারণে ছাদের উপর শাকসবজির খেত প্রস্তুত করা হচ্ছে৷ নতুন এই কৌশলের সুফল হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে৷
ছাদের উপর চাষবাস
বিজ্ঞাপন ক্ষেত্রের চাকরি ছেড়ে বিয়র্ন লো জনপ্রিয় এক শপিং মলের ছাদে ২০১৫ সাল থেকে পেঁপে, রোজমেরি ও প্যাশন ফ্রুট চাষ করছেন৷ সে সময়ে মানুষ হাসাহাসি করলেও এখন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁর চাহিদা বেড়ে চলেছে৷
এই উদ্যোক্তা গোটা শহরজুড়ে প্রায় ২০০ এমন বাগান তৈরি করেছেন৷ তিনি শিপিং কন্টেনারের মধ্যে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষাও করছেন৷ যেমন ক্রান্তীয় জলবায়ু এলাকায় কেল বা পাতাকপি ফলানো যায় না৷
কিন্তু এখানে পুষ্টিকর দ্রবণ ও সূর্যের বিকল্প হিসেবে এলইডি আলোর কল্যাণে বেশ কয়েকটি স্তরে দিব্যি এই সবজি ফলানো হচ্ছে৷ এমন ইতিবাচক প্রবণতার ফলে প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা সম্ভব হতে পারে৷ সেখানে অনেক কম ব্যয় করে খাদ্য উৎপাদন করা হয়৷
লো মনে করেন, তাঁর ফলানো শাকসবজির মধ্যে অনেক বেশি পুষ্টি রয়েছে বলে সেটা সম্ভব হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ক্রেতাদের স্বাস্থ্যের জন্যও এটা আরও ভালো৷ সে কারণে আমরা আমাদের শাকসবজির জন্য বাড়তি ২০ বা ৩০ সেন্ট চাইতে পারি৷ এভাবে সম্ভবত আমরা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেতে পারি৷’’