36 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
বিকাল ৩:৫৮ | ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
ক্ষতিকর হাইড্রোলিক হর্নে বধির হচ্ছে বহু মানুষ
পরিবেশ দূষণ পরিবেশ বিজ্ঞান

ক্ষতিকর হাইড্রোলিক হর্নে বধির হচ্ছে বহু মানুষ

ক্ষতিকর হাইড্রোলিক হর্নে বধির হচ্ছে বহু মানুষ

হাইড্রোলিক হর্নের কারণে বহু মানুষ বধির হয়ে যাচ্ছে। তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না এই ক্ষতিকর হর্নের ব্যবহার। রাজধানীর সচিবালয়ের আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হলেও হর্নের শব্দে সেখানে টেকা দায়।

নীরব এলাকা নীরব রাখতে হলে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ আর জনসচেতনতা নিয়ে আরও বেশি কাজ করা দরকার বলেন মনে করছেন সাধারণ মানুষ, ড্রাইভার, ট্রাফিক পুলিশ এবং বিশেষজ্ঞরা।

রমনা বিভাগের শাহবাগ জোনের দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি তো দায়িত্ব পালন করছিই। কিন্তু হর্ন তো কন্ট্রোল করতে পারছি না।

সচিবালয়, মসজিদ, স্কুল—এগুলোর সামনে লেখা থাকে হর্ন বাজানো নিষেধ। কিন্তু সেখানেই হর্ন বেশি বাজায়। কীভাবে এটা কন্ট্রোল করবো জানি না। আমার মনে হয় হর্ন বাজাতে যদি টাকা খরচ হতো তাহলে এটা কমতো।

রাইড শেয়ারের কাজ করেন সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, পাবলিকের সচেতনতা ছাড়া বিকল্প কোনও পদ্ধতি নেই। আমি চালক আবার আমিই কিন্তু পাবলিক। তাই আমাকেই সচেতন হতে হবে।

একটা মানুষ যখন হেডফোন কানে দিয়ে রাস্তা পার হয়, আবার কোনও দিকে খেয়াল রাখে না—তখন কিন্তু আমাকে হর্ন বাজাতেই হবে। তাই আমি যখন চালক তখন আমাকে যেমন এদিকে খেয়াল রাখতে হবে, আবার আমি নিজেই যখন পথচারী তখনও আমাকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। তাহলেই শব্দদূষণ কমানো সম্ভব।

সচিবালয়ের পাশের রাস্তা দিয়ে হর্ন বাজিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন হামিদুর রহমান। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোড়ের সিগন্যালে থামে তার গাড়ি। তখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, সচিবালয় নীরব ঘোষিত এলাকা।

বিভিন্ন জায়গায় তা লেখাও রয়েছে। তাহলে কেন এই রাস্তায় হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছিলেন? হামিদুর বলেন, এটা নীরব এলাকা সেটা আমি জানি। কিন্তু সামনের গাড়ি যদি ঠিকমতো না চালায় তাহলে তো হর্ন বাজাতেই হবে।



ড্রাইভারদের গাড়ি চালানো শিখতে হবে ভালো করে। তাহলে আর এরকম আমাদের করতে হবে না। অযথা হর্ন বাজানো লাগবে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শুভ রয় বলেন, শব্দদূষণের কারণে আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। আমার তো শ্রবণশক্তিতেই সমস্যা হয়েছে। আগে আমি যেরকম স্পষ্ট শুনতে পেতাম এখন সেটা পারি না।

তিনি বলেন, যেকোনও সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য সেটার গভীর থেকে সমাধান করা প্রয়োজন। সড়কে যানবাহনের কারণে যে শব্দদূষণ হয় তার মূল কারণ হচ্ছে সড়কের অব্যবস্থাপনা।

কারণ যখন রাস্তা ফাঁকা থাকে তখন কিন্তু কেউ হর্ন বাজায় না। যখন রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি থাকে তখনই ড্রাইভাররা হর্ন বাজায়। সড়কে যদি শৃঙ্খলা ফেরানো যায় তাহলে অনেকাংশেই শব্দদূষণ কমানো যাবে।

অযথা হর্ন বাজানো অথবা শব্দদূষণ কমাতে কী করা প্রয়োজন জানতে চাইলে রমনা বিভাগের শাহবাগ জোনের পুলিশের সার্জেন্ট মো. জহিরুল হক বলেন, মামলা দিয়ে হর্ন বাজানো বন্ধ করা যাবে না। এখানে যিনি চালক, তার সচেতন হওয়া জরুরি। সচেতনতাই শব্দদূষণ রোধ করতে পারে।

সচেতনতা বাড়াতে কী করা প্রয়োজন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবার একত্রিত হয়ে কাজ করা প্রয়োজন। লিফলেট বিতরণ করা, নাটিকা তৈরি করাসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো দরকার।

মানুষকে শব্দদূষণের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক জানাতে হবে। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব দিয়ে ছোট ছোট নাটিকা তৈরি করে সেগুলো টেলিভিশনসহ সব জায়গায় প্রচার করতে হবে।

আমরা দেখেছি, জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যখন বিভিন্ন নাটিকা বিটিভিতে প্রচার করা হতো সেগুলো অনেক কার্যকর হয়েছিল। তাই আমার মনে হয় সবার সমন্বিত কাজের মাধ্যমে শব্দদূষণ রোধ করা সম্ভব।

শব্দদূষণ নিয়ে কাজ করেন প্রফেসর মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, আমাদের টোটাল যে শব্দদূষণ তার ৬০-৭০ শতাংশ হয় গাড়ির হর্ন থেকে। আর হর্নের মধ্যে হাইড্রোলিক হর্নটা আমাদের এখানে নিষিদ্ধ করা আছে। এটার ব্যবহার, আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ।

কিন্তু ঢাকা শহরে মোটামুটি ৩০ শতাংশ যানবাহনে এখনও হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু কোনটা হাইড্রোলিক হর্ন আর কোনটা প্রেসার হর্ন সেটা বোঝা বিশেষজ্ঞদের কাজ। কারও গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন আছে কিনা সেটা কিন্তু সে বুঝে উঠতে পারবে না।

আবার প্রেসার হর্ন নির্ধারিত মাত্রার (৮৫ ডেসিমেল) চেয়ে বেশি শব্দ করছে কিনা সেটা কিন্তু চালক বা মালিক বুঝতে পারবে না। ফলে সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই হচ্ছে মনিটরিং এবং এনফোর্সমেন্টের ব্যর্থতা। এটার কারণেই শব্দদূষণটা কমছে না।

তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ, পরিবেশ অধিদফতর, বিআরটিএ’কে যৌথভাবে নিয়মিতভাবে এনফোর্সমেন্ট টিম নিয়ে অভিযান চালাতে হবে এবং দায়ীদের জরিমানা করতে হবে। আবার যেসব গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন পাওয়া যাবে তাদের মালিককেও মামলা বা আইনের আওতায় আনতে হবে।

কারণ তাদের ধরে শুধু হাইড্রোলিক হর্ন খুলে রেখে দিলে হবে না, তারা আবার ওই হর্ন লাগাবে। তাই তাদের যদি জরিমানার আওতায় না আনা হয় তাহলে এটা বন্ধ হবে না।

আমাদের মনে রাখতে হবে, এই হাইড্রোলিক হর্নের কারণে লাখ লাখ মানুষ বধির হয়ে যাচ্ছে। এটার কারণে লাখ লাখ শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মগ্রহণ করছে। হার্টের রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বিনষ্ট হচ্ছে।

কারও বাসা যদি রাস্তার পাশে ১০ তলার উপরেও হয় তাহলেও সে রাতের বেলা ঘুমাতে পারবে না, এই হাইড্রোলিক হর্নের জন্য। আর রাতের বেলা যদি কেউ ঘুমাতেই না পারে তাহলে দেশের একজন কর্মক্ষম মানুষ হিসেবে সকালে কী সার্ভিস দেবে?

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত