প্লাস্টিকের বর্জ্য রপ্তানি বন্ধে একটি চুক্তি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন
বিশ্বের বিভিন্ন দরিদ্র দেশে প্লাস্টিকের বর্জ্য রপ্তানি বন্ধে একটি চুক্তি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU)। সোমবার ইউরোপীয় আইনপ্রণেতা এবং সদস্য দেশগুলো এ চুক্তিতে সই করেন।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে বেশিরভাগ ধনী দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইনকোনোমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভলোপমেন্ট (ওইসিডি) বাইরের দেশগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে সম্মত হয়েছে। প্লাস্টিক দূষণের ওপর একটি বৈশ্বিক চুক্তির জন্য কেনিয়ার নাইরোবিতে কূটনীতিকদের বৈঠক চলাকালে এই চুক্তিটি করা হলো।
প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মধ্যডানপন্থী ইপিপি গ্রুপের ডেনিশ সদস্য পার্নিল ওয়েইস। তিনি বলেন, ‘ওইসিডি বহির্ভূত দেশগুলোতে রপ্তানি নিষিদ্ধের মাধ্যমে ইইউ শেষ পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্যের দায়ভার নিজেদের কাঁধে নেবে।
আমরা মনে করি, সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বর্জ্যও একটি সম্পদ। তবে এর দ্বারা কোনো ক্ষেত্রেই পরিবেশ বা মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি করা উচিত নয়।’ নিয়মগুলো কার্যকর হওয়ার আগে ইউরোপীয় কাউন্সিল এবং সংসদের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রয়োজন।
চুক্তি অনুযায়ী, ধনী দেশগুলোর প্লাস্টিক বর্জ্য রপ্তানির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং ওইসিডি বহির্ভূত দেশগুলোতে রপ্তানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।
তবে পাঁচ বছর পরে যেসব দেশ ইইউয়ের প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানি করতে চাইবে, তারা ইইউ কমিশনকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করতে পারবে। তবে তাদের প্রমাণ করতে হবে যে, তারা এসব বর্জ্যের উপযুক্ত ব্যবহার করবে।
ইউরোপে বেশিরভাগ প্লাস্টিকের বর্জ্য পুড়ে ফেলা হয় এবং এক তৃতীয়াংশেরও কম পুনর্ব্যবহৃত হয়। পরিবেশকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, রিসাইক্লিংয়ের জন্য বিদেশে রপ্তানি করা প্লাস্টিক বর্জ্য শেষ পর্যন্ত রাস্তার পাশে বা খালে ফেলা হয়।
এনভায়রনমেন্টাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির প্রচারক লরেন ওয়েয়ার বলেছেন, ‘এটি বর্তমান বাধ্যবাধকতার উন্নতি, একইসঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্য সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধের প্রয়োজনীয়তার প্রমাণও বটে। এটি একটি সংকেত যে, ইইউ অবশেষে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণের জরুরি পরিস্থিতিতে নিজের দায় নিতে শুরু করেছে।’
নতুন নিয়মের আওতায় কিছু অপ্লাস্টিক বর্জ্য এখনো ওইসিডি বহির্ভূত দেশগুলোতে রপ্তানি করা যাবে, যদি তারা নির্দিষ্ট সামাজিক এবং পরিবেশগত মানদণ্ড পূরণ করে। আইনটি তুরস্কের মতো ওইসিডি দেশগুলোতে পাঠানো বর্জ্য বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তুরস্কের কুকুরোভা ইউনিভার্সিটির মাইক্রোপ্লাস্টিক গবেষক সেদাত গুন্দোগদু বলেন, ‘ওইসিডি বহির্ভূত দেশগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
তবে এটি হতাশাজনক যে, ইইউতে প্লাস্টিক বর্জ্যের বৃহত্তম আমদানিকারক এবং ওইসিডি সদস্য তুরস্কের ওপর সম্পূর্ণ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, এমনকি বিপজ্জনক এবং মিশ্র প্লাস্টিক বর্জ্যের ওপরও নিষেধাজ্ঞা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অতীতের শিক্ষা থেকে জানি যে, আংশিক নিষেধাজ্ঞা এবং অকার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্লাস্টিক বর্জ্যের অবৈধ রপ্তানিতে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।’