একটু একটু করে গলতে শুরু করেছে অ্যান্টার্কটিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় বিশাল হিমশৈল
একে বলা হয় ‘ঘুমন্ত দানব’। কারণ এটি যদি জেগে ওঠে অর্থাৎ গলে যায় তাহলে বহু দেশ, বহু বসতি সাগরে তলিয়ে যাবে। শঙ্কার বিষয়- একটু একটু করে গলতে শুরু করেছে অ্যান্টার্কটিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় বিশাল হিমশৈল।
কয়েকশ মাইলজুড়ে বিস্তৃত এ বরফের স্তরকে অল্প শব্দে ‘ঘুমন্ত দানব’ বলেন গবেষকরা। তাঁরা মনে করেন, বিশ্বের বৃহত্তম এ বরফের রাজ্যের ভাগ্য আমাদেরই হাতে। আমরা একে পুরোপুরি গলে যেতে দিলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ায় বরফের এ স্তর গলতে শুরু করেছে। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রার বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে না রাখতে পারলে সংকট প্রকট হবে।
এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেশ কয়েক ফুট উঁচু হতে পারে। বিশ্বের মোট বরফের সিংহভাগই পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায়। এগুলো যদি পুরোপুরি গলে যায়, তাহলে সমুদ্রের উচ্চতা ১৭০ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে! এমন হলে তার পরিণতিও কল্পনার বাইরে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মনে করা হতো যে ‘ঘুমন্ত দানব’ গলবে না। কিন্তু এখন এটা গলে যাওয়ার লক্ষণ দেখাচ্ছে। তিন হাজার বছরের মধ্যে বর্তমানে দ্রুতগতিতে গলছে মেরু অঞ্চলের এসব বরফের পাহাড়।
এতে যদি সমুদ্রের পানির স্তর কয়েক ফুট বাড়ে, তাতেই বিশ্বের মানচিত্র বদলে যাবে। নিউইয়র্ক, সাংহাইয়ের মতো শহরের উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ এর পরিণতি ভোগ করবেন।
কেবল গ্রিনল্যান্ডের বরফস্তর গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে প্রায় ২৩ ফুট। বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা এ বরফ গলে যাওয়া শুরুর দ্বারপ্রান্তে।
বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে উষ্ণতা বেড়ে এটি দ্রুতগতিতে গলতে শুরু করবে। গবেষকরা বলছেন, এসব বরফ কতটা গলবে, তা নির্ধারণ করবে আগামী বছরগুলোতে আমরা কীভাবে কার্বন নির্গমন করব।
পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়া প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস স্টোকস বলেন, এ বরফস্তরের ভাগ্য অনেকটাই আমাদের হাতে। তিনি বলেন, এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বরফস্তর। এ জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা এ ‘ঘুমন্ত দানব’ কে না জাগাই।
ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বরাত দিয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের সমান আকৃতির ‘ঘুমন্ত দানবে’র কয়েকটি স্থানে বরফ গলতে শুরু করেছে।
গবেষকরা বলছেন, তাঁদের কাছে তথ্য আছে যে প্রায় চার লাখ বছর আগে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ায় মেরু অঞ্চলের ৪০০ মাইলের বেশি এলাকার বরফ গলে যায়। এর পরিণতি ছিল ভয়াবহ।