24 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৪:৫৪ | ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
সবুজ ঢাকা ক্রমেই ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে
পরিবেশ দূষণ

সবুজ ঢাকা ক্রমেই ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে

সবুজ ঢাকা ক্রমেই ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে

প্রায় দেড় কোটি জনসংখ্যার শহর ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ ঘনবসতিপূর্ণ এবং শীর্ষ দূষিত শহরগুলোর একটি। বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় এর অস্থান বিশ্বে সপ্তম।

এ জন্য সবুজের আচ্ছাদন কমে যাওয়া এবং কংক্রিটের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় সবুজ কমে যাওয়া নগরবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে।

সরকারি হিসাবে ঢাকার দুই সিটি নিয়ে পুরো শহরের আয়তন প্রায় ৩০৬ বর্গ কিলোমিটার, যা আগে ছিল প্রায় ১৩০ বর্গ কিলোমিটার। সর্বশেষ জনশুমারি (২০২২) অনুযায়ী, এই দুই সিটিতে মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮২ জন।



এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ৫৯ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৭ জন এবং দক্ষিণে ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৫ জন। ঢাকা উত্তরে জনসংখ্যা বেশি হলেও দক্ষিণে ঘনবসতি সবচেয়ে বেশি, প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৯ হাজার ৩৫৩ জন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০১৯ সালের এক গবেষণা বলছে, ঢাকায় সবুজ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মোট আয়তনের ৯ দশমিক ২ শতাংশ।

গাছপালা থাকা এলাকার হিসাব করলে এটি আরও অনেক কম হবে। শহরটির মোট আয়তনের মধ্যে ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশই কংক্রিট আচ্ছাদিত। বাকি এলাকার মধ্যে ৯ দশমিক ২ শতাংশ সবুজ আচ্ছাদিত, ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ উন্মুক্ত স্থান এবং ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ জলাভূমি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালে ঢাকার সবুজ এলাকার পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৯৭ বর্গ কিলোমিটার, যা ২০১৯ সালে এসে ১২ দশমিক ৩৩ বর্গ কিলোমিটার হয়েছে।

তবে সার্বিবভাবে গত ২০ বছরে এই সবুজ এলাকা হ্রাস পেয়েছে ৩৭ শতাংশ। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা সবুজ রূপ হারাতে থাকায় নগরবাসীর জন্য পরোক্ষভাবে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

যেসব কারণে সবুজ রূপ হারাচ্ছে ঢাকা, তার মধ্যে অন্যতম, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ইমারত ও অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে সবুজের ওপর গুরুত্বহীনতা, কংক্রিটের পরিমাণ বৃদ্ধি, উন্মুক্ত স্থান ও জলাভূমি ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন এবং প্রাকৃতিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি। এ ছাড়াও নগরবাসীর সীমাহীন লোভ ও কংক্রিটের শোভা বর্ধনের কারণেও সবুজ ঢাকা ক্রমেই ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, এসব কারণে এক সময়ের গাছপালায় ঘেরা ও সবুজে আচ্ছাদিত ঢাকার বিমল বায়ু পরিণত হচ্ছে দূষিত বায়ুতে। যা এই শহরকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে প্রতিনিয়ত। ঢাকার দুই সিটিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এদিকে নজর দেওয়া জরুরি। না হয় পরিস্থিতি আগামীতে আরও খারাপ হবে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. কাজী জাকের হোসেন বলছেন, ‘কোনও জনপদের মোট ভূমির ২৫ শতাংশ গাছপালা থাকা প্রয়োজন। সেই হিসাবে জনসংখ্যার তিনগুণ গাছপালা থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকার অবস্থা খুবই খারাপ, যা রীতি মতো চিন্তার বিষয়।’



পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই অনুপাতে সবুজ বাড়ছে না। উল্টো কমছে। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে। তাপমাত্রা বাড়ছে। জনজীবনে এর প্রভাব পড়ছে। সবুজ আচ্ছাদন সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যথায় নগরবাসীর জন্য ঝুঁকি বাড়বে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।’

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মো. মেহেদী আহসান বলেন, ‘২০১৯ সালের গবেষণায় যে চিত্র উঠে এসেছে, গত দুই বছরে তো পরিস্থিতির তার থেকে উন্নতি হয়নি, বরং আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিনিয়ত সবুজ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ কমছে। উদ্যানগুলোর গাছ কাটা হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। উন্মুক্ত স্থান ও জলাশয়ের পরিমাণ কমছে, যে টুকু আছে তাও রক্ষা করা হচ্ছে না।’

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এলাকায় গাছ লাগানো এবং সবুজ এলাকা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত বাড়িগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। অনুমোদিত ডিজাইন মানা হচ্ছে না।

হাতিরঝিল ও গুলশান লেকের মতো জায়গাগুলোকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। ২০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৩৫ সাল) ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) করা হলেও তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেই। এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হতো।’

চলতি বছরের ২৩ জুন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজউক প্রণীত ড্যাপ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য গেজেটের খসড়া অতিসত্বর মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এখানকার সবুজ ও নীল নেটওয়ার্ক বাঁচাতে হবে। কারণ আমরা এই শহরটিকে কংক্রিটের জঙ্গলে রূপান্তরিত করছি। এর তাপমাত্রা পাশের শহরগুলোর চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি প্রতিকারে উন্মুক্ত স্থানে সবুজায়নের বিকল্প নেই। রাজউক, সিটি করপোরেশন এবং বন বিভাগের নগর বনায়নের জন্য যৌথ কর্মসূচি থাকতে হবে। নগরীর সব ছাদকে বাগানে রূপান্তর করা গেলে কমপক্ষে ২ ডিগ্রি তাপমাত্র কমে আসবে। এ জন্য আমাদের সেভাবে কাজ করতে হবে।’

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত