জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা কার্বণ-ডাই-অক্সাইড নির্গমনে বিমান সংস্থাগুলোকে কিছুটা ছাড় দিয়েছে
-সুলহাত সালেহীন
কারও জন্য এটি যুক্তিসঙ্গত হলেও কারও জন্য এটি ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত
জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ বৈশ্বিক বিমান শিল্পকে কার্বণ-ডাই-অক্সাইড (CO2) নির্গমনে কিছুটা শীতিলতা প্রদর্শণ করেছে যাতে শিল্পটি উঠে দাড়াতে পারে।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা(International Civil Aviation Organization -ICAO) এর ৩১জুলাই ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় সিংহভাগ ভোটের মাধ্যমে CO2 নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৬ সালে চুক্তির অধীনে বেসলাইন বছরটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা কর্সিয়া (CORSIA) নামে পরিচিত।
পরিকল্পনাটি সংশোধন করার আগে,এয়ারলাইনসগুলো ২০১৯ এবং ২০২০ এর গড় স্তরে ভবিষ্যতে CO2 নির্গমন হিসাব করার জন্য সম্মত হয়েছে, অন্যথায় কেউ এই সীমা অতিক্রম করলে অফসেট স্কিমগুলিতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ICAO এর হিসাব অনুসারে, বৈশ্বিক বিমান চালনায় CO2 নির্গমনের হার ২০০৫ সালের তুলনায় গত বছর প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি ছিল এবং করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল যে ২০৫০ সালের মধ্যে ৩০০ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পাবে।
তবে এই মহামারীটি মার্চ মাসের প্রথম দিক থেকে বাণিজ্যিক বিমান চালনায় স্থবিরতা এনে দিয়েছে।
যার অর্থ এই দাড়ায় যে বাণিজ্যিক বিমান থেকে ২০২০ সালে খুবই কম CO2 নির্গমন হবে; ফলে পরবর্তী বছর থেকে বিমানবন্দরগুলি অফসেটের জন্য অর্থ প্রদান করতে বাধ্য হবে।
ফলস্বরূপ, ICAO বলে যে শুধুমাত্র ২০১৯ সালই রেফারেন্স বছর হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
আইসিএও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন,”২০২০ সালের নির্গমনের জন্য এবং অসঙ্গত আর্থিক বোঝা এড়াতে ২০১৯ সালের নির্গমনের মান ব্যবহার করা হবে”।
ভবিষ্যতে আরও “সামঞ্জস্য” করা সম্ভব হওয়ার সম্ভাবনাটি সংস্থা ছেড়ে দিয়েছে।
বানিজ্যিক বিমান গ্রুপ ইন্টারন্যশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) এর প্রধান আলেকজান্দ্রি দে জুনিয়াক এই সংশোধিত নিয়মকে ” যুক্তিসঙ্গত” হিসেবে বর্ণনা করছেন”।
বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা সহায়তা (Billions in bailouts)
তিনি ফোনে সাংবাদিকদের বলেন যে “প্রথমত, বিমান সংস্থাগুলো সমান পর্যায়ে হওয়া নিয়ে যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল তা বজায় রেখেছে। দ্বিতীয়ত, তাদের পক্ষে যেন যুক্তিসংগত হয় কারণ তারা নিদিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে দূর বাস্তবতায় পৌঁছতে পারে। ”
আইওএটি বলেছিল, কোভিড-১৯ সংকটের কারণে ২০২০ সালে বিমান সংস্থাগুলোর যাএী পরিবহন খাতে আয় ৩১৪ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পাবে, যা কিনা ২০১৯ সালের এ খাতের আয়ের ৫৫%।
তদারককারী দলগুলো অবশ্য সংশয়সহ নিয়ে এই সংশোধনীর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।
আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল টেকসইতা জোট (International Coalition for Sustainable Aviation) বলেছে,”জলবায়ুর ধ্বংসলীলা এড়ানোর প্রয়োজনীয়তা হতে কর্সিয়া অনেক অনেক ক্ষীন।,”
যার সদস্যগন বিশ্বব্যাপি প্রাকৃতিক রক্ষা তহবিল (World Wide Fund for Nature – WWF), পরিবেশ প্রতিরক্ষা তহবিল (the Environmental Defense Fund), কার্বন মার্কেট ওয়াচ (Carbon Market Watch) এবং ব্রাসেলস-ভিত্তিক এনজিও পরিবহন এবং পরিবেশ (Brussels-based NGO Transport & Environment) অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
দলটি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, “কর্সিয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে অপসারণের পাশাপাশি ICAO কাউন্সিলের নির্বাচন ভবিষ্যত প্রজন্মের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং প্রোগ্রামটি নির্মাণের জন্য বহুপাক্ষিক কাজকে সামনে চাপিয়ে দেওয়া।”
নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলি উল্লেখ করেছে যে, উদ্যোগটি কোটি কোটি ডলার সরকারি সহযোগীতা প্রাপ্তির পরেও উচ্চাকাঙ্ক্ষা হ্রাস পাচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ কমিশনের তথ্যানুসারে বিমান চলাচল থেকে সরাসরি নির্গত বিশ্বব্যাপি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের দুই শতাংশের বেশি।
বিশ্ব বিমান চলাচল যদি এক দেশ হত তবে এটি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের ১০ম স্থানে থাকত।