কৃষিতে ভাসমান চাষাবাদ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য সহায়ক
জলবায়ু পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার স্ফীতি এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নে কৃষিজমির ব্যবহারের ফলে কৃষি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। খাদ্যনিরাপত্তায় চাপ বাড়ছে।
এই চাপ সামলাতে বিশ্বজুড়ে আগাম প্রস্তুতির বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঝুঁকি আরও বেশি। কারণ, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের দিক থেকে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এই পরিস্থিতিতে টেকসই অভিযোজনের পথ দেখাতে পারে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ভাসমান চাষপদ্ধতি। এ পদ্ধতি হাওর ও দুর্যোগকবলিত স্থানে সম্প্রসারণ করা গেলে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফএও) ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে প্রায় ৬৯ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৮৪ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি মাটির উর্বরতা, বৃষ্টির ধরন, শস্যের ফলন ও খাদ্য উৎপাদন, পুষ্টি উপাদান এবং পুষ্টির জৈব লভ্যতাকে প্রভাবিত করে পুরো খাদ্যব্যবস্থাকে বিরূপ করে। এসব পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহে ম্যাক্রো এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট হ্রাস করে।
কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের ক্রমাগত উচ্চতা বৃদ্ধিতে অদূর ভবিষ্যতে কৃষিজমি জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলের ভাসমান ধাপে ফসল চাষের পদ্ধতি খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। স্থানীয় কৃষক এই পদ্ধতির উদ্ভাবক।
এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ফসল উৎপাদন সম্ভব। ভাসমান চাষাবাদের পদ্ধতিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার হয় না বলে তা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য সহায়ক।
এ জন্য যথাযথ উদ্যোগ, আধুনিকায়ন এবং সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নেওয়া গেলে টেকসই অভিযোজনের পথ দেখাতে পারে ভাসমান কৃষি চাষপদ্ধতি। বাংলাদেশের ভাসমান সবজি চাষ এরই মধ্যে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতির স্বীকৃতি পেয়েছে। এফএও ২০১৫ সালে এই স্বীকৃতি দেয়।