বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের শতবর্ষী মৃত গাছ কেটে ফেলার জন্য আবেদন
ঐতিহ্যবাহী বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ শতবর্ষী মরা গাছ কেটে ফেলার জন্য জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়েছেন শার্শা-ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল রাহক ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র পাল স্বাক্ষরিত আলাদা দুটি চিঠি যশোর জেলা পরিষদের প্রশাসককে পাঠানো হয়েছে গত বুধবার।
জেলা পরিষদকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, যশোর-বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের দু-পাশে বেশ কিছু স্থানে শতবর্ষী মরা রেইনট্রি গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হিসেবে।
দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এশিয়ান হাইওয়ে এই মহাসড়ক দিয়ে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার পণ্যবাহী ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করে।
বিগত বছরগুলোতে আম্পানসহ সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ে বেশ কয়েকটি গাছ উপড়ে যাওয়ার পর থেকে পড়ে আছে সড়কের পাশে। আজও অপসারণ হয়নি এসব গাছ।
ঝিকরগাছা উপজেলা মোড় ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা, হাজিরালি মোড়, বেনেয়ালি মোড়, গদখালি মোড়, নবীনগর, চারাতলা কলাগাছি ও নাভারন পুরাতন বাজারের মতো জনসমাগম হয় এমন এলাকায় মৃত গাছ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সড়কটিতে যাতায়াতকারী যানবাহনসহ এলাকার মানুষ রয়েছেন আতঙ্কে। জরুরিভিত্তিতে গাছগুলো অপসারণ করা না হলে যেকোনো সময় বিশেষভাবে বর্ষা মৌসুমে ও ঝড়ের সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
চিঠিতে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের মৃত বা ঝুঁকিপূর্ণ গাছ জরুরিভিত্তিতে আইন ও বিধি মোতাবেক অপসারণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
যশোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম বলেন, ১৮৩০ দশকে জমিদার কালীবাবুর মা নড়াইল থেকে কলকাতায় যান এই সড়ক পথে। তিনি কলকাতা থেকে ফিরে ছেলেকে বলেছিলেন, রোদের তাপে আমার খুব কষ্ট হয়েছে।
তখন কালীবাবু ছায়াঘেরা সড়কের জন্য কলকাতা পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ করেছিলেন। সড়কটি পরে কালীবাবুর সড়ক নামেও আখ্যায়িত হয়। সেই থেকে আজ প্রায় ২০০ বছর ধরে কলকাতা পর্যন্ত এই বৃক্ষঘেরা ছায়াপথের সুবিধা নিয়ে আসছেন বাংলার মানুষ।
যশোর থেকে বেনাপোল সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার শতবর্ষী গাছ ছিল। পরে ফের এক জরিপে ২ হাজার ৩৫০টি গাছ পাওয়া যায়। বর্তমানে ৬২০টি গাছ আছে। এরমধ্যে ৭৫টি গাছ মৃত। অর্ধমৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ রয়েছে প্রায় ২০০টি। এরমধ্যে ৭-৮টি গাছ রাস্তার দুই ধারে পড়ে আছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুল হক বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে মৃত গাছগুলো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। যানবাহনসহ আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় মানুষ। গাছগুলো বিধি মোতাবেক অপসারণের জন্য জেলা পরিষদকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ উজ-জামান বলেন, ‘ইউএনওদের পাঠানো চিঠি আমরা পেয়েছি। আইনগত দিক ও জনসাধারণের ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে গাছ কেটে ফেলার কাজ চলছে।’