সীতাকুণ্ডের পাহাড় রক্ষার কাজ করছে প্রশাসন
টিনের ঘেরা দিয়ে এক সপ্তাহ ধরে কাটা হচ্ছিল জঙ্গল সলিমপুর এলাকার পাহাড়। আড়াল করে চলা এমন কার্যক্রম থামাতে গিয়ে দেখা যায় প্রায় এক একর এলাকার পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে।
বায়েজিদ লিংক রোডের ৪ নম্বর ব্রিজের কাছে গত ১৭ মে ওই অভিযানে গিয়ে মাটি খনন করার দুটি এক্সকেভেটর ও একটি বুলডোজার জব্দ করলেও পাহাড় কাটায় জড়িত কাউকে পায়নি স্থানীয় প্রশাসন।
এভাবে পাহাড় কাটা চলছে নগরীর উত্তর পাহাড়তলি মৌজা, হাটহাজারীর জালালাবাদ মৌজা এবং সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর মৌজায়। এসব এলাকার পাহাড়গুলো সীতাকুণ্ড পাহাড় শ্রেণির অংশ।
ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত বায়েজিদ লিংক রোডের দুপাশে এসব পাহাড়ের অবস্থান। এই পাহাড়গুলো রক্ষায় করণীয় ঠিক করতে অনুসন্ধান কমিটি করেছে পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি।
মঙ্গলবার বায়েজিদ লিংক রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুপাশে জঙ্গল সলিমপুর, উত্তর পাহাড়তলি ও জালালাবাদ অংশে কয়েকটি স্থানে সীমানা প্রাচীর দিয়ে পাহাড় ঘিরে রাখা হয়েছে।
সড়ক লাগোয়া অংশে পাহাড় কাটা না হলেও ভিতরের দিকে পাহাড় কেটে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলার কাজ চলছে। এরমধ্যে টিনশেড, সেমিপাকা ও বহুতল ভবন আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়েজিদ লিংক রোডের কারণে ভাগ হয়ে গেছে সীতাকুণ্ড পাহাড় শ্রেণি। সড়কের দুপাশের ভেতরের অংশে এভাবে পাহাড় কাটা চলতে থাকলে এই এলাকার সব পাহাড় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. দানেশ মিঞা বলেন, আন্দোলন করেও পরিবেশবাদীরা বায়েজিদ লিংক রোডে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে পারেনি।
এই সড়কের জন্য পাহাড় কাটায় সীতাকুণ্ড পাহাড় শ্রেণি বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পরেছে বণ্যপ্রাণির ওপর। সড়কের দু’পাশে বণ্যপ্রাণিরা বিভক্ত হয়ে গেছে। এতে তাদের বংশবৃদ্ধি ও জীবনযাপন মারাত্মক হুমকির মুখে।
তিনি আরো বলেন, “পাহাড় কাটায় রাজনৈতিক ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীরা জড়িত। সরকারের কঠিন প্রতিজ্ঞা না থাকলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ নেই। আর সরকারি প্রতিষ্ঠান যখন পাহাড় কাটে তখন পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের থামাতে পারে কী?”
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, “জঙ্গল সলিমপুর এলাকার বাসিন্দারা সমিতির নামে একটি রিট করে, পুনর্বাসনের আগে তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না, উচ্চ আদালত থেকে এমন স্থগিতাদেশ নিয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রে যেসব পাহাড় ছিল সেগুলোতে অনেক আগেই হাজার হাজার স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে। গত এক দশকে ভারি বর্ষায় পাহাড় ধসে বহু প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। নগরীতে পাহাড় আর তেমন নেই জানিয়ে পাহাড় রক্ষায় পরিবেশবাদী সংগঠন পিপল’স ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, “শহরে এখন পাহাড় শুধু নামেই আছে।
বেশিরভাগ কেটে ভবন নির্মাণ করা হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের অন্যতম বড় পাহাড় শ্রেণি হলো সীতাকুণ্ড পাহাড় শ্রেণি। যা সীতাকুণ্ড থেকে নগরী এবং অন্য দিকে জালালাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত। এখন সেই পাহাড়গুলো ধ্বংস করছে পাহাড়খেকোরা।
চট্টগ্রামের বায়েজিদ চন্দ্রনগরের নাগ-নাগিনী পাহাড়ের নিচ থেকে কেটে রাখা হয়েছে, যাতে অতিবৃষ্টিতে সহজেই ধসে পড়ে মাটি। এই অংশের পাহাড় যে হুমকিতে তা চিহ্নিত করেছে পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটিও।
গত মার্চ মাসের সভায় এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে একটি অনুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে। কমিটির এক সদস্য জানান, যারা পাহাড় কাটে তাদের তালিকা দেবে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট থানাগুলো। আর কোন কোন জায়গায় পাহাড় আছে সেই তালিকা দেবে সহকারী কমিশনাররা (ভূমি)।
অনসুন্ধান কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল বলেন, “প্রতিবেদন আমরা ইতোমধ্যে জমা দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং ওসিদের কাছ থেকে আমরা মতামত নিয়েছি। সমাধানের জন্য তাদের সুপারিশও নিয়েছি। পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়।”