পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষায় কাজ করতে হবে সবাইকে
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় ভারত ও চীনের পরে বাংলাদেশের অবস্থান। অন্যদিকে, বড় শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে বিশ্বে রাজধানী ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল বার্ডেন ডিজিজ প্রজেক্টের প্রতিবেদনে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বায়ুদূষণকে চার নম্বরে দেখানো হয়েছে।
বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৫৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকরী পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বায়ুদূষণে পড়বে বাংলাদেশ। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টির লক্ষ্যমাত্রার প্রায় প্রত্যেকটির সঙ্গেই পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত।
বিশেষভাবে যে লক্ষ্যমাত্রাগুলো সরাসরি সম্পর্কিত সেগুলো হলো: এসডিজি-২, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টির উন্নয়ন ও কৃষির টেকসই উন্নয়ন; এসডিজি-৩, সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা; এসডিজি-৬, সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা; এসডিজি-৭, সকলের জন্য জ্বালানি বা বিদ্যুৎ সহজলভ্য করা; এসডিজি-১১, মানব বসতি ও শহরগুলোকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখা; এসডিজি-১২ সম্পদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার; এসডিজি-১৩, জলবায়ু বিষয়ে পদক্ষেপ; এসডিজি-১৪, টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ ও পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করা; এসডিজি-১৫, ভূমির টেকসই ব্যবহার; এসডিজি-১৬, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ, সকলের জন্য ন্যায়বিচার, সকল স্তরে কার্যকর, জবাবদিহি ও অংশগ্রহণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা; এবং এসডিজি-১৭, টেকসই উন্নয়নের জন্য এ সব বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের স্থিতিশীলতা আনা। কাজেই এসডিজি’র বাস্তবায়নে পরিবেশের প্রত্যক্ষ প্রভাব প্রতিভাত হচ্ছে।
প্রকৃতি হলো সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ও মানুষের লাগামহীন দূষণমূলক কর্মের ফলে প্রতিনিয়তই ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি। যে পরিবেশ মানুষকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে নিজের সবটুকু দিয়ে লালন-পালন করছে এ সমাজের মানুষকে, অন্যদিকে সে নির্মম মানুষগুলোই নির্বিচারে ধ্বংস করছে প্রকৃতি।
যার ফলে প্রকৃতি দিন দিন ভয়ানক রূপ ধারণ করছে। বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে লাগামহীনভাবে ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর আবহাওয়া।
শুধু তাই নয়, পরিবেশ দূষণের ফলে জলজ প্রাণীদের জলে থাকতে কষ্ট হয় কারণ তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। উদ্ভিদ সতেজ থাকতে পারছে না। বন জঙ্গল অবাধে উজাড় হচ্ছে ফলে বাসস্থান সংকটে পড়ছে বন্য প্রাণিসমূহ।
পরিবেশের বিপর্যয়ের প্রভাবে অনেক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, দাবানল, সুনামি, বন্যা, খরা প্রভৃতির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বেড়েই চলেছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা।
আর সে কারণে তলিয়ে যাচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। এ বিষয়ে ২০০৭ সালের জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্যানেলে বলা হয়েছিল যে, ২০৫০ সালের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা ১ মিটার পর্যন্ত বাড়বে।
এর ফলে মালদ্বীপ নামক দেশটা পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে। এমনকি বাংলাদেশের উপকূলের ১৭ শতাংশ ভূমি চলে যাবে সমুদ্রগর্ভে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে বাড়ছে লবণাক্ততা ও বাড়ছে বন্যা।
মাটির গভীরে পানির স্তর নেমে যাওয়াই দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির সংকট। ঋতু বৈচিত্র্যের ওপর পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে মারাত্মক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে সাম্প্রতিককালে।
ইটের ভাটার ধোঁয়ায় অনেক গ্রামের বাতাস ও ফসলের মাটি দূষিত হচ্ছে। এছাড়া অনুন্নত যানবাহন ও অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার দরুণ ঢাকার বাতাসে প্রতিনিয়ত দূষণ বাড়ছে, সেইসঙ্গে যানবাহনের হর্ন ও মাইকের বিকট শব্দের কারণে শব্দদূষণও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
নিষিদ্ধ পলিথিন পচনশীল নয়, তাই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের ফলে যেখানে সেখানে ফেলে দেয়ায় ড্রেন, ম্যানহোল বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্নভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে।
মানুষ নিষ্ঠুরভাবে প্রকৃতি পরিবেশকে বিনাশ করছে। পরিবেশ দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের চরিত্রও দূষিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন না হই, তাহলে আমরা বেশি দিন পৃথিবীতে টিকতে পারব না। আমাদের অপরিণামদর্শী কর্মের কারণে আমাদের ধ্বংস হবে।
পরিবেশ বাঁচানোর প্রথম পদক্ষেপ আমাদেরকেই নিতে হবে। জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করলে দূষণের মাত্রা আরও কমবে। যেমন প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে এবং সেইসঙ্গে তার ব্যবহারও।
নতুন প্রজন্ম বেশ ভাবতে শিখেছে। যদিও তারাই কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবেশ নষ্টের জন্য দায়ী, যা তারা সরাসরি বুঝতে পারছে না।