জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশি শিশুরা
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ইলশা নদীর পারে বাড়ি ছিল আলামিনের। গত বছর পর্যন্ত সে ইলশাপারের বাড়িতেই ছিল। কিন্তু নদীভাঙনে বাড়ি ও ফসলি জমি হারানোয় পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসে ১২ বছরের আলামিন। এখন আলামিনের ঠাঁই হয়েছে রাজধানী ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের একটি বস্তিতে।
আলামিনের বাবা নেই। জাহাজভাঙাশিল্পে কাজ করতে গিয়ে মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কয়েক বছর আগে আলামিনের বাবা মারা যান। তাঁর মা আমিনা বেগমও ওই শিপইয়ার্ডের কর্মীদের জন্য রান্না করতেন।
দুজনের আয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলত সংসার, আলামিন ছাড়াও পাঁচ ও তিন বছরের অন্য দুই সন্তানের মুখে খাবার জোগাতেন তাঁরা।
আমিনা বেগম বলেন, ‘একসময় আমাদের অভাব ছিল না। আমার স্বামী ও আমি আয় করতাম। কৃষিজমি থেকেও ফসল আসত। আমাদের ছেলে (আলামিন) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত।’ তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে।
আমিনা বেগম জানান, নদী বাড়ি–জমি কেড়ে নেওয়ায় তাঁরা উদ্বাস্তু হয়েছেন। টাকার অভাবে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। সঞ্চয় যা ছিল, তা–ও শেষ হয়ে গেছে।
আলামিন ও তার পরিবারের দুরবস্থার অন্যতম কারণ বৈরী আবহাওয়া। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গসহ পুরো নিম্নাঞ্চলে ঝড়–বন্যা–ভাঙন অনেক বেড়ে গেছে। এর ফলে এসব এলাকা থেকে হাজারো পরিবার উদ্বাস্তু হয়েছে। ঢাকার বস্তিগুলোয় মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
উদ্বাস্তু হওয়া পরিবারগুলোর শিশুরাও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম সংকটে পড়েছে। তাদের অনেকেরই পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও অনেকেই কাজে যুক্ত হয়েছে। আলামিনের মতো কম বয়সেই উপার্জন করে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে।