বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের এগিয়ে আসা জরুরি
দেশের তরুণরা যার যার অবস্থান থেকে পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার হলে বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ড. সালীমুল হক বলেন, পরিবেশ বা বাস্তুসংস্থান রক্ষায় দেশে আইন থাকলেও সেটা মানা হয় না। কয়েকজন মানুষের সুবিধার জন্য দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
তরুণদের উচিত তাদের আশপাশের পরিবেশ ধ্বংসের ও বিনষ্টের প্রতিটি বিষয় নজরে আনা এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানকে জানানো।
তরুণদের সোচ্চার হওয়া আহ্বান জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা সুইডিশ এক তরুণী গ্রেটা থুনবার্গ দেখিয়ে দিয়েছে যে, তরুণরা চাইলে অনেক পরিবর্তন ঘটাতে পারে। আমরা যদি বাংলাদেশের তরুণদের প্রতি সমর্থন দিই, তাহলে এখানেও অনেক গ্রেটা থুনবার্গের আবির্ভাব হবে।
আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রাকিবুল হাসান মুকুল বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নতির দোহায় দিয়ে বাস্তুসংস্থান ধ্বংস করা হলে, তা লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করবে। আবার শুধু বাস্তুসংস্থান রক্ষার কথা বললেও সেটা যুক্তিসঙ্গত হবে না। কারণ, এর উপর নির্ভরশীল মানুষের চাহিদার কথাও ভাবতে হবে। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে যদি ঐকমত্যে আনা যায় তবেই এ ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া যাবে।”
ওয়েবিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, উন্নয়ন এবং গবেষণা সংস্থার তরুণ কর্মীরা মতবিনিময় করেন।
তরুণ গবেষক অনুশ্রী ঘোষ বলেন, চলনবিলের মধ্য দিয়ে সড়ক নির্মাণ করে সমৃদ্ধ এই বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আগে পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করার প্রয়োজন।
ওয়েবিনারের সভাপতির বক্তব্যে ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, বৈশ্বিক জিডিপির অর্ধেকই প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারে প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগ করলে ৩০ ডলার সমান সুবিধা পাওয়া যায়। দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা দূরীকরণসহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টি লক্ষ্য অর্জনেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার।
জাতিসংঘের তথ্যের হিসাব দিয়ে তিনি বলেন, বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বের ৩২০ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। বাস্তুসংস্থান হ্রাসের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ দশ লাখ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে বৈশ্বিক জিডিপি। ২০৪০ সাল নাগাদ বিশের কৃষি উৎপাদনের ১২ শতাংশ হ্রাস পাবে এবং খ্যাদ্যের দাম বেড়ে যাবে ৩০ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, সময় থাকতেই আমাদের সোচ্চার হতে হবে। আর সেক্ষেত্রে তরুণরাই পারবে বৈকল্পিক ভূমিকা রাখতে।