যেখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য, হুমকির মুখে পরিবেশ
বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা বরগুনার প্রতিটি নদী আর প্রবাহমান খালে প্রতিদিনই ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক, পলিথিন এবং অপচনশীল বর্জ্য। বরগুনার বিষখালী, বুড়ীশ্বর (পায়রা) খাকদোন, বলেশ্বরসহ বঙ্গোপসাগরে ভাসছে টনকে টন প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিনসহ চিকিৎসায় ব্যবহৃত উচ্ছিষ্ট।
এই সকল প্লাস্টিক ও পলিথিনসহ অপচনশীল বর্জ্য পদার্থ পানিকে প্রতিনিয়ত দূষিত করাসহ জমির উর্বরতা শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে। একইসঙ্গে ঘটছে উপকূলীয় পরিবেশের বিপর্যয়।
সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর বা স্থানীয় প্রশাসন উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ সব বর্জ্যে নদী এবং খাল ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভাটার সময় দেখা যায় স্তুপ হয়ে আছে এই সব অপচনশীল দ্রব্য।
বরগুনার খাকদন, বিষখালী ও বরগুনার ভাড়ানীখাল ছাড়াও জেলার তালতলী, আমতলি, বেতাগী, বামনা ও পাথরঘাটার বিভিন্ন খালে অবাধে ফেলা হচ্ছে অপচনশীল বর্জ্য পলিথিন-প্লাস্টিক।
যার কারণে ক্ষতি হচ্ছে পানি ও মাটি এবং পরিবেশের। ভরাট হচ্ছে খাল-নদী-সাগর। পানি দূষণের পাশাপাশি নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। খালের তলদেশে প্রতিনিয়ত জমছে পলিথিনের স্তর। পানি ও খাল দুষণে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ এবং জলজপ্রাণী।
ইউনিয়ন পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা না থাকাযর কারনে যে যেখানে পারছে বর্জ্য ফেলছে। বিভিন্ন হাট-বাজারে ছড়িয়ে আছে প্লাস্টিকের পানির বোতল ও পলিথিন। এ সব অপচনশীল বর্জ্যে এলাকার খাল ও ডোবা-নালায় ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে জমতে থাকা এসব অপচনশীল বর্জ্যের কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট খাল। দূষিত হচ্ছে পানি।
পাথরঘাটা পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র পাথরঘাটা থানা মসজিদ টিঅ্যান্ডটি মাঠে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে যেখানে-সেখানে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরায় দূষিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার পরিবেশ। এছাড়াও পৌর শহরের কয়েকটি দিঘিতে বিভিন্ন বর্জ ফেলার কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়ছে।
পাথরঘাটায় দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা পরিবেশকর্মী কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম কাকন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার প্রতিবাদ করে আসছি এটি সবসময় অব্যাহত থাকবে। পাথরঘাটা পৌরসভা নির্ধারিত ডাম্পিং না থাকায় এমন অবস্থা হয়েছে। তবে শিগগিরই এর সমাধান হবে বলে আশা করছি।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক হাসানুর রহমান ঝন্টুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম হোসেন, সাংবাদিক মনির হোসেন কামাল, সদস্য শফিকুল ইসলাম খোকন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির বরগুনা শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ, বরগুনা পৌরসভার সচিব রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক মুশফিক আরিফ বলেন, বর্জ্য পলিথিন ও প্লাস্টিক আবর্জনা পানিতে ফেলার কারণে উপকূলের খাল ও বিল নদীর স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে নাব্যতা হারিয়েছে। আমরা প্রাকৃতিকভাবে যে মৎস্য সম্পদ পেতাম সেই মৎস্য সম্পদ আজ আমাদের নেই। পরিবেশবিদ হিসেবে আমরা উদ্বিগ্নিএবং চিন্তিত।
আগামী দশ বছরে এই খাল-বিল নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে চর পড়ে যাবে। আমরা পরিবেশ কর্মীরা সরকারের কাছে বিশেষ ভাবে আবেদন জানাই, বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার যে সব খাল ও বিলগুলো বর্জ্য আবর্জনায় নাব্যতা হারিয়েছে সেগুলোকে পুনঃখনন করে নাব্যতা ফিরেয়ে আনার। আর পরিবেশ অধিদফতরের বরগুনা জেলায় কোনো অফিস না থাকায় বরিশাল এবং পটুয়াখালী থেকে এসে নাম মাত্র কাজ করে দিয়ে যায়। এর দায়ভার পরিবেশ অধিদফতর এড়াতে পারে না। আর পলিথিনের বিষয় দোকানে অভিযানে কোনো সুফল হবে না। পলিথিন উৎপাদন কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।