২০১৯ সালে সাগরে ফেলা হয় ২২ কোটি পাউন্ড সমমূল্যের প্লাস্টিক বর্জ্য
পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক বর্জ্য একটি বড় সমস্যার নাম হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বের গভীরতম সমুদ্রেও দূষণের ক্ষেত্রে একক ধ্বংশ্বাত্ত্বক দূষক বস্তু হিসেবে এটি সবার ওপরে বা প্রায় অবিনশ্বর বলা যেতে পারে।
২০১২ সালে, গবেষণার মাধ্যেমে আমাদের জানানো হয় যে, সমগ্র বিশ্বের সমুদ্রে আনুমানিক ১শত ৬৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য আছে ৷ সমুদ্রের পানিতে ৫ ট্রিলিয়নের বেশি প্লাস্টিক ভেসে থাকে এবং ১৪ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক প্রতিবছর সুমুদ্রে জমা হচ্ছে।
এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে শুধু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন পণ্য পরিবহন ও এর মোড়কে ব্যবহৃত প্লাস্টিক দ্রব্য থেকেই যে হারে সমুদ্র দূষণ হয়েছে তা অকল্পনীয়। ২০১৯ সালে এ ধরনের সমুদ্র দূষণকারী প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণ ছিল ২২.৪০ কোটি পাউন্ড।
এ সম্পর্কিত গবেষণাটি করেছে ওক ফাউন্ডেশন ও রকফেলার ব্রাদার্স ফান্ডসহ বিশ্বের আরও কয়েকটি শীর্ষ জনহিতকর ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত গবেষণা সংস্থা ‘ওশানার’, যার পরিচালিত সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্বব্যাপী নামি-দামি ই-কমার্স কোম্পানি ও প্যাকেজিং দ্রব্যাদি প্রস্তুতকারী কোম্পানি থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে ওশানার জানায়, এই প্লাস্টিক দূষণে বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স কোম্পানি আমাজনের ব্যবহৃত প্লাস্টিক দ্রব্যাদি দূষনের দৌড়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে।
এছাড়াও বিশ্বের শত শত বড় ও মাঝারি ই-কমার্স কোম্পানির পণ্যের মোড়কে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক সরাসরি এসে মিশছে পানির সঙ্গে, যা একসময় খাল-বিল নদী ও নর্দমা বেয়ে এখন সাগরে এসে পড়ছে।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। প্লাস্টিক দূষণ সামুদ্রিক মৎস্য প্রজাতির উপর প্রভাব সবচেয়ে বেশি, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মৃত্যু, সামুদ্রিক কচ্ছপের মৃত্যু, প্রাণীকুলের খাদ্যচক্রের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে, শুধুমাত্র সামুদ্রিক মাছের উপর নয় সামুদ্রিক পাখির উপরও রয়েছে এই দূষণের প্রভাব।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে নানা ধরনের আইনও করা হয়েছে। কিন্তু এখনো এই প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহার কমানো যায়নি। কোনো কিছুতেই যেন কিছু করা যাচ্ছে না আর এর ব্যবহারের বিপরীতে যেন কিছুই দাড়াতে পারছেনা।
বিশ্বের পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনগুলো এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দলনে সোচ্চার। ওশানার বলছে, এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এনে দিতে পারে আমাজনের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর সচেতনতা।
পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়ে তারা দায়বদ্ধ হলে এ সংকট থেকে ক্রমে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর এই দায়বদ্ধতা তৈরির জন্য পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে আরও সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।