27 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
বিকাল ৪:৩৭ | ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
দুনিয়ার সবথেকে অভিনব এবং সবচেয়ে উঁচু পরিবেশবান্ধব দুটি বাড়ি
আন্তর্জাতিক পরিবেশ জানা-অজানা

দুনিয়ার সবথেকে অভিনব এবং সবচেয়ে উঁচু পরিবেশবান্ধব দুটি বাড়ি

ফিনল্যান্ড : কোন প্রকার গাছপালা না কেটে, পাথর না সরিয়ে প্রকৃতির মাঝেই এক অভিনব বাড়ি তৈরি করেছেন ফিনল্যান্ডের এক স্থপতি। পরিবারের সদস্যদের জন্য আলাদা ঘরও তৈরি করেননি তিনি। জাহাজের মতো দেখতে খোলামেলা এই বাড়িটি না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির উপকণ্ঠে মার্কো কাসাগ্রান্ডে-র বাড়ি৷ ২০১৩ সাল থেকে তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান সহ এখানে বসবাস করছেন। গোল জানালাওয়ালা বাড়িটি দেখলে জাহাজের কথা মনে হয়৷

বাড়ির নক্সা নিয়ে কাজ করার সময় এই আইডিয়া তাঁর মাথায় আসে। পাথুরে জমি ও তার উপর যে সব গাছপালা ছিল, সেগুলি অক্ষত রেখে মার্কো বাড়ি তৈরি করতে চেয়েছিলেন৷ ‘আপেলে’ বাড়ির মালিক মার্কো কাসাগ্রান্ডে বলেন, ‘‘তাই পাইন গাছ ও পাথরের মধ্যে বাড়িটিকে কোনোভাবে ‘ফিট’ করতে হয়েছিলো।

তখন মনে হয়েছিল, আমি যেন বাড়িটিকে কোনো স্বাভাবিক বন্দরে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ সেই ভাবনা থেকে ধাপে ধাপে নৌকোর ভাবনা এলো৷ আসলে এটা একটা জাহাজ যেটি এখানে এসে তার স্বাভাবিক বাসা খুঁজে পেয়েছে।”

অনেক ছোট ঘরের বদলে একটি বড় ঘর৷ মাঝখানে বাথরুম৷ ফিনল্যান্ডের নিজস্ব ‘টুপা’ ঐতিহ্যের মধ্যেই এই স্থপতি তাঁর আদর্শ খুঁজে পেয়েছেন। বড় তাঁবুর মধ্যে সবার জন্য জায়গা৷ মার্কো বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি ঘরের নির্দিষ্ট ব্যবহারের বদলে গোটা জায়গাটাই খুলে দিলে ব্যাপারটা অন্যরকম হয়৷ একেবারেই ‘বোরিং’ হয় না৷ একটা বড় ঘর দিন বা বছরের বিভিন্ন সময় অনুযায়ী বদলে যায়৷ সেটা মনে হয় অনেক কার্যকর হয়।”

এমনকি শোবার ঘরেও দরজা নেই। তাই বিভিন্ন অংশে বিভক্ত একটি বড় ঘরের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার হতে পারে। এর একটা বড় সুবিধা রয়েছে।



প্রায় ১৪০ বর্গ মিটার আয়তনের কোনো অংশই বেশি দিন অব্যবহৃত থাকে না। ঘরটি এমনভাবে বিভক্ত করা হয়েছে, যে পরিবারের সদস্যরা যে যার একান্ত জায়গা খুঁজে পায়৷ ঘর বন্ধ করে নিজস্ব ‘প্রাইভেসি’ খোঁজার তাগিদ অনুভব করেন না মার্কো।

শীতকালে ফায়ারপ্লেস সুন্দর উত্তাপ দেয়। তবে তার উৎস জিও-থার্মাল৷ গোটা বাড়িটাই কাঠের তৈরি, কোনো প্লাস্টিক নেই। কাঠের ফাইবার দিয়ে থার্মাল ইনসুলেশন করা হয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকা মার্কো-র কাছে কোনো ফ্যাশন নয়, সেটাই স্বাভাবিক স্পৃহা।

মার্কো বলেন, ‘‘আমি ল্যাপল্যান্ডে বড় হয়েছি। বার বার আমাকে বাড়ি থেকে জঙ্গলে পাঠানো হতো। আমি বাড়ির তুলনায় জঙ্গলেই বেশি সময় কাটিয়েছি। বাড়িতে আসতাম শুধু খেতে আর ঘুমাতে৷ তারপর আমাকে স্কুলেও যেতে হতো। তবে জঙ্গলেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম। আমি প্রকৃতি খুব ভালোবাসি।”

ফিনল্যান্ডে ‘আপেলে হাউস’-এর মাধ্যমে মার্কো কাসাগ্রান্ডে প্রকৃতির যতটা সম্ভব কাছে আসতে পেরেছেন৷

তাইওয়ান : দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু পরিবেশ বান্ধব ভবন। জ্বালানির কার্যকর ব্যবহার পরিবেশ রক্ষার এক চাবিকাঠি৷ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ শতাংশ জ্বালানি খরচ হয়ে যায় বাড়িঘরে, ভবনে৷ জ্বালানি সাশ্রয়ী ব্যবস্থা নিয়ে সুফল পেয়েছে তাইওয়ানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ‘সবুজ’ ভবন৷

তাইপে ওয়ান হান্ড্রেড ওয়ান
তাইপে ওয়ান হান্ড্রেড ওয়ান

সঠিক প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে বিদ্যুৎ, পানি বা গ্যাসের অনেকটাই যে বাঁচানো সম্ভব তার প্রমাণ দিল তাইওয়ানের মত একটি দেশ, যে কিনা সম্পদের ব্যাপারে সাশ্রয়ী মনোভাব না দেখিয়ে বরং দশকের পর দশক বিবেচনাহীন প্রবৃদ্ধির উপরই জোর দিয়েছে৷ সেখানেই যা ছিল একসময় বিশ্বের উচ্চতম ভবন, তা আজ হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পরিবেশবান্ধব ভবন।

এই আকাশছোঁয়া বহুতল ভবনের পোশাকি নাম ‘তাইপে ওয়ান হান্ড্রেড ওয়ান’। দেখতে অনেকটা বাঁশ-এর মত৷ উচ্চতা ৫শো মিটারেরও বেশি৷ তাইওয়ানে ট্যুরিস্টদের এই ভবন ঘুরে দেখতেই হয়। আগের সেই গরিমা সে হারিয়েছে। প্রায় ২’বছর হতে চলল নিজেকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম ভবন’ বলার অধিকার তার নেই।

তাইপের কাছ থেকে সে-সম্মান কেড়ে নিয়েছে দুবাই। ভবন পরিচালনা সংস্থার ভাইসপ্রেসিডেন্ট ক্যাথি ইয়াং অবশ্য আগে থেকেই নতুন কিছু খুঁজছিলেন – এমন কিছু যা ‘তাইপে ওয়ান হান্ড্রেড ওয়ান’এর প্রতীকী অবস্থানটাকে ধরে রাখতে পারবে।

ক্যাথি বলছেন, ‘‘মানুষ আমাদের দেখে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে। তাই আমরা সবকিছু ভাল আর নিখুঁতভাবে করতে চাই। যাতে আমাদের কর্মীরা অন্য কোন বিল্ডিং-এর জন্য কাজ না করে বরং আমাদের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। আমি মনে করি, ‘তাইপে ওয়ান হান্ড্রেড ওয়ান’-এর জন্য কাজ করাটা গর্বেরই ব্যাপার। এতো তাইওয়ানেরই একটা প্রতীক।’

২০০৮ সালে নতুন এক পথে যাত্রার সিদ্ধান্ত নিলেন ম্যানেজার ক্যাথি ইয়াং৷ জ্বালানির দাম তখন হুহু করে বেড়েই চলেছে৷ ক্যাথি জানতে পারলেন যে, জ্বালানি ও অন্যান্য সম্পদ সাশ্রয়ী ব্যবস্থার জন্য লিডস নামে একটা সনদপত্র দেয়া হয়ে থাকে। মালিকরা তাদের ভবনে স্বেচ্ছায় এধরনের ব্যবস্থা বসাতে পারে, নির্দিষ্ট পরিবেশবান্ধব মাত্রা মান্য করতে পারে এবং এভাবে পরিবেশ সুরক্ষার সনদপত্র পেতে পারে। সনদপত্রের মেয়াদ ৫ বছর। মেয়াদ ফুরোলে আবার নতুন করে পরীক্ষা করে দেখা হবে ভবনের সবকিছু পরিবেশ অনুকূল কিনা।

ম্যানেজার ক্যাথি ইয়াং বলছেন, ‘‘আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে ‘তাইপে ওয়ান হান্ড্রেড ওয়ান’ বিল্ডিংটা শতভাগ পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। আমাদের কোম্পানি সামাজিক এক দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। বিশ্বের এরকম এক উঁচু ভবন দুই বছর ধরে চেষ্টার পর এই-যে সবুজ আর টেকসই হয়েছে, তার প্রমাণ আমরা দিতে পেরেছি। এর ফলে অন্য ভবনের মালিকরাও একই ব্যবস্থা নিতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন।”

সব রকমের মান রক্ষা করে সবুজ সনদপত্র পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় দুটি বছর। ১১ হাজার মানুষ কাজ করেন এই বিশাল ভবনে। পানি আর বিদ্যুতের কম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হয়। আবর্জনার পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হয়। ঘরে বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা রাখতে হয়৷ আর এই কাজের সহায়ক হয় জার্মান কোম্পানি সিমেন্স-এর প্রযুক্তি আর কারিগরি জ্ঞান।

গোটা ভবন জুড়েই ১ লক্ষ ২০ হাজার বর্গমিটার কাচ৷ আর সেই কাচে এসে পড়ছে সূর্যের প্রখর আলো। এতে ঘর হয়ে যায় প্রচণ্ড গরম। ফলে এয়ারকন্ডিশনার ছাড়া গতি নেই। সারাক্ষণ চালিয়ে রাখার ফলে বিদ্যুতের খরচ সাঙ্ঘাতিক বেড়ে যায়। সিমেন্স কোম্পানির ইঞ্জিনিয়াররা লাইটিং-এর জন্য নতুন ব্যবস্থা প্রয়োগ করেন, বসিয়ে দেন সেন্সর। এতে জ্বালানির খরচ কমে যায় প্রায় ২০ শতাংশ। বছরে ৭ লক্ষ ডলার বেঁচে যায়। জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা নিতে ২০ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করতে হয়।

ক্যাথি ইয়াং-এর কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যখন তাদের ভবিষ্যত দপ্তরের জন্য স্থান নির্বাচন করবে, তখন লিড সার্টিফিকেট বা অন্য কোন সবুজ সনদপত্র একটা গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হয়ে দাঁড়াবে। ফলে ভবনের মালিকরা সবুজ, পরিবেশবান্ধব পথে যাবেন কিনা তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার প্রণোদনা পাবেন৷”

তাইওয়ান সরকার জলহাওয়া রক্ষার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সত্যি কথা, কিন্তু এখনও অনেক কিছু করা বাকি। তাইওয়ান বিশ্বের বৃহত্তম সোলার সেল উৎপাদক দেশগুলোর একটি হলেও ‘তাইপে ওয়ান হান্ড্রেড ওয়ান’ ভবন থেকে শহরের বাড়িঘরের ছাদে কোন সোলার মোডিউল চোখে পড়বেনা।  একটিমাত্র ভবন নয়, জ্বালানির সাশ্রয় ঘটাতে হবে সর্বক্ষেত্রে – পরিবেশ রক্ষার চেতনা জাগিয়ে তুলতে হবে সবার মধ্যে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত