তুরস্কের মারমারা সাগর এখন নিত্যদিনের দূষণের শিকার
জলবায়ু পরিবর্তন ও লাগামহীন জঞ্জালের কারণে তুরস্কের মারমারা সাগরে মাছের পরিমাণ এখন অনেক কমে গেছে৷ পরিবেশ বিপর্যয়ের পরিণতির মাত্রা এখনো স্পষ্ট নয়৷ সরকার ও প্রশাসনের বিলম্বিত উদ্যোগেও তেমন ভালো ফলের আশা করা হচ্ছে না৷
চারিদিকে কাদার মতো ভাসমান পদার্থ৷ এমনকি ইস্তানবুল শহরের বন্দরও রেহাই পায়নি৷ আলি কসকুন সেই দৃশ্য দেখে স্তব্ধ৷ বিশেষ করে জেলেদের জন্য এটা একটা বড় বিপর্যয়৷ আলি বলেন, পানিতে মাছ কীভাবে বেঁচে থাকবে?
কাদায় আটকা পড়লে দুই মিনিটের মধ্যেই মরে যাবে৷ মাছ নয়, প্লাস্টিক ধরছেন জেলেরা। জাল খোলার পর মাছের সঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্য দেখছেন জেলেরা৷ গ্রিসের রয়েছে ২৫০টি ট্রলারের বিশাল মাছ ধরার বহর৷ এই বহর সমুদ্রের একটি নির্দিষ্ট গভীরতা অবধি জাল ফেলে মাছ ধরতে পারে৷
আলি কসকুমের মতো জেলেরা অতীতে শহরের মানুষদের সরাসরি তাজা মাছ সরবরাহ করতেন৷ কিন্তু কয়েক বছর ধরে মাছের পরিমাণ কমে চলেছে৷ দূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে৷ তবে এর আগে কখনো এত বড় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেনি৷
মারমারা সাগরের একটা বড় অংশ কাদার মতো পদার্থের গালিচায় ঢেকে গেছে৷ আলি কসকুন বলেন, চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকেও আমরা সমুদ্রে এমন দূষণের গালিচা দেখেছি৷ মাছের জাল থেকে কাদার মতো সেই পদার্থ ধুয়ে ফেলে বিষয়টি ভুলে গেছি৷ কারণ এর ফলে মাছের তো কোনো ক্ষতি হয়নি৷
এবার আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না৷ সামুদ্রিক জীবের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা পুরু এই পদার্থ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে পানির উপর ও নীচের অংশ ঢেকে দিচ্ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি এবং ইস্তানবুল শহরের বর্জ্য পদার্থই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী৷
কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে বিশেষ জাহাজ নামিয়ে পাম্প চালিয়ে সেই কাদার মতো পদার্থ দূর করার চেষ্টা করছে৷ তবে সেই উদ্যোগে কাজ হবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ কারণ কিছু জায়গায় সেই গালিচা এমনকি ৩০ মিটার পর্যন্ত গভীর৷ পরিস্থিতি বদলাতে হলে মারমারা সাগরের তীরে অসংখ্য নিকাশী ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আধুনিক করে তুলতে হবে৷
সরকার দ্রুত এক ‘মারমারা অ্যাকশন প্ল্যান’ শুরু করেছে৷ তুরস্কের পরিবেশ মন্ত্রী মুরাত কারুম বলেন, ‘‘আমরা তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমুদ্র সংস্কার অভিযান চালাবো৷ দেশের সব মানুষকে এ কাজে সহায়তার ডাক দিচ্ছি৷”
মের্ট গ্যোকাল্পের মতো তুরস্কের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীদের মতে, এই কাজে বড় দেরি হয়ে গেছে৷ সমুদ্রের ইকোসিস্টেম আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
মের্ট বলেন, দুটি প্রণালীর মাধ্যমে মারমারা সাগর কৃষ্ণ সাগর ও ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে যুক্ত৷ এই সাগর প্রায় হ্রদের মতো৷ প্রায় ৫০ বছর ধরে আড়াই কোটি মানুষের বর্জ্য সেখানে গিয়ে পড়ছে৷
আলি কসকুম শ্লেষ্মার কারণে সমুদ্রে আর জাল ফেলতে পারছেন না৷ জাল আর পানির নীচে নামছে না৷ নামলেও মাছ ছাড়া অন্যান্য পদার্থে ভরে যাচ্ছে৷
সে কারণে তিনি প্রায় ৪০ বছর পর জালের বদলে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো মাছ ধরা পড়ছে না৷ আলি কসকুনকেও সম্ভবত নিজের পেশা পাকাপাকিভাবে ছেড়ে দিতে হবে৷
সমুদ্রে সাঁতারের কথাও এখন ভাবা যাচ্ছে না৷ কারণ দূষিত গালিচার মধ্যে মানুষের জন্য বিপজ্জনক জীবাণু ও ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে৷ কয়েক জন বিশেষজ্ঞ এমনকি কলেরার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন৷
সে কারণে মারমারা সাগরের তীরে বেশ কয়েকটি সৈকত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ এককালে সমুদ্রে মাছের অভাব ছিল না৷ আজ দূষণের কারণে পরিস্থিতি বদলে গেছে৷