ক্রমশ চাহিদা বাড়ছে পরিবেশ বান্ধব বাঁশের ঘরের
হাজার হাজার বছর ধরে বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোয় নির্মাণকাজে বাঁশের ব্যবহার হচ্ছে। তবে বর্তমানে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে এর ব্যবহার কমে আসছে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে এবং বিশ্বের অন্যান্য স্থানে টেকসই আবাসন তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার শুরু হয়েছে।
‘বাম্বো লিভিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান স্থপতি ডেভিড স্যান্ডস বাঁশ দিয়ে আধুনিক ও টেকসই নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইভিত্তিক এই কোম্পানি বাঁশের ঘর এবং অন্যান্য ভবন তৈরিতে সুনাম অর্জন করেছে।
রক স্টার স্যামি হাগার, অভিনেত্রী বারবারা হার্শে, মিউজিক মোগল শেপ গর্ডন, ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান ইবের প্রতিষ্ঠাতা পিয়েরে ওমিডিয়ার বাঁশের বাড়ির ক্রেতা। এমনকি ডেভিড স্যান্ডস নিজেও এ ধরনের বাড়ি ব্যবহার করছেন।
ডেভিড স্যান্ডস বলেছেন, ‘বাঁশ হলো বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ১০০ ফুট লম্বা হতে পারে এটি। বাঁশের বয়স তিন বছর হলেই এটি থেকে ভবন নির্মাণের অবিশ্বাস্য উপকরণ পাওয়া যায়। তখনই তাঁরা এগুলোকে বাড়ি তৈরির জন্য কাজে লাগান।’
তিনি বলেন, ‘বাঁশ সম্ভবত আমাদের বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করার দ্রুততম প্রাকৃতিক উপায়। সালোকসংশ্নেষণের মাধ্যমে এটি সেই কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে।
এরপর বাঁশ এটিকে শর্করায় পরিণত করে এবং শেষে প্রকৃত ফাইবারে (তন্তু) পরিণত করে। বায়ুমণ্ডল থেকে দ্রুত কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করার ক্ষেত্রে এটি একটি বিরাট ব্যাপার।’
ডেভিড স্যান্ডস বলেন, ‘সাধারণত আপনি যখন একটি গাছ কাটেন, আপনি এটিকে মেরে ফেলেন। কিন্তু বাঁশের ক্ষেত্রে ঘটে বিপরীত ঘটনা, প্রতি বছর নতুন কাণ্ড গজায়।
আপনি সেই কাণ্ডগুলোর এক শতাংশ সংগ্রহ করেন এবং এটি কেবল বাড়তেই থাকে। এভাবে বাঁশ ১২০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।’
একজন স্থপতির দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি কীভাবে বাঁশের শক্তি ও নমনীয়তা দেখে থাকেন- জানতে চাইলে ডেভিড স্যান্ডস বলেন, এটি একটি অবিশ্বাস্য রকম শক্তিশালী উপাদান।
ওজন ধারণের দিক থেকে এটি আসলে ইস্পাতের চেয়েও শক্তিশালী। সাধারণত নির্মাণের জন্য ব্যবহূত কাঠের চেয়ে বাঁশের দ্বিগুণেরও বেশি শক্তি থাকে এবং এটি কংক্রিটের মতোই ক্ষমতাধর।
তিনি বলেন, বাঁশ দিয়ে তিনি যেসব ভবন তৈরি করেছেন তা ক্যাটাগরি-৫ তথা ২০০ মাইল বা ৩২১ কিলোমিটার গতির একাধিক হারিকেন সামলেও টিকে রয়েছে।
তাঁদের এ ভবন ভূমিকম্পে ৬ দশমিক ৯ মাত্রায়ও সহনশীল। কারণ বাঁশের ওজন অনেক হালকা। এটি নমনীয় হতে পারে এবং তার পরে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে।
ডেভিড স্যান্ডস জানান, তাঁরা এখন ক্যারিবীয়, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বাঁশের বাড়ি তৈরির কাজ করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় একটি প্রকল্পে কাজ করছেন। ভারতেও অনেকে তাঁদের বাড়ি কিনতে চান।
তিনি জানান, বাঁশের বাড়ির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এ কারণে তাঁরা এখন উৎপাদন বাড়াচ্ছেন। তিনি মনে করেন, জলবায়ু সংকট নিয়ে উদ্বেগ এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
তিনি জানান, ৩০ বছর আগে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাউইতে নিজের জন্য একটি বাঁশের বাড়ি তৈরি করেছেন। নিজের বাঁশের বাড়ি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি এটা ভালোবাসি। এখানে প্রকৃতির সঙ্গে একটি সংযোগ রয়েছে। এ ধরনের বাড়ি জলবায়ু সংকট সমাধানে সহায়তা করছে।’