34 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ১১:৩৪ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
কৃষকদের জন্য সুখবর, গমের ছত্রাক চিহ্নিত করার জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন
কৃষি পরিবেশ পরিবেশ বিজ্ঞান

কৃষকদের জন্য সুখবর, গমের ছত্রাক চিহ্নিত করার জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন

গমে ব্লাস্ট রোগের ছত্রাক আছে কি না, তা চিহ্নিত করার মতো প্রযুক্তি এত দিন ছিল না।

এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের আগে ধান ও গমের ব্লাস্ট রোগের ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করেছেন বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিজ্ঞানীরা।

গমের ব্লাস্ট রোগ দ্রুত শনাক্ত করতে একটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের একদল বিজ্ঞানী। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গমগাছ, এর বীজ বা গমের দানা পরীক্ষা করে ব্লাস্ট রোগের ছত্রাক চিহ্নিত করা যাবে। এ জন্য সময় লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট।

গবেষণাটির ফলাফল চলতি মাসের শুরুতে বিজ্ঞান সাময়িকী ইঞ্জিনিয়ারিং–এ প্রকাশিত হয়েছে।

নতুন উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি অনেকটা মানুষের গর্ভধারণ পরীক্ষার মতো। গমের কোনো একটি অংশ নতুন উদ্ভাবিত ‘স্ট্রিপের’ মধ্যে রাখতে হবে। আধা ঘণ্টার মধ্যে জানা যাবে সেখানে ব্লাস্টের জন্য দায়ী ছত্রাক আছে কি না। এই যন্ত্রটি তৈরি করতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ পড়বে। ভবিষ্যতে তা আরও কমতে পারে।

এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই), যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইও স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) এবং চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্স। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে মূল গবেষণা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক আণবিক গবেষণাকেন্দ্র এতে কারিগরি ও আংশিক অর্থায়ন করেছে।



গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বশেমুরকৃবির অধ্যাপক মো. তোফাজ্জল ইসলাম। তিনি  বলেন, এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ধান ও গমের ব্লাস্ট রোগের ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এরপর এর ডিএনএর দুটি সুনির্দিষ্ট ক্ষুদ্র অংশকে আলাদা করা হয়েছে, যা শুধু গমের ব্লাস্ট রোগের ছত্রাকের জিনোমে থাকে। এরপর ওই জিনোমকে চিহ্নিত করার জন্য যন্ত্রটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। যন্ত্রটি দক্ষিণ আমেরিকা ও বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করা গমের ব্লাস্ট রোগের ছত্রাক শনাক্ত করতে পেরেছে, এটা গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বেষণাটির একটি অংশ হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে(আইবিজিই)। ছত্রাক চিহ্নিত করার যন্ত্রটি উদ্ভাবন করা হয়েছে চীনের একাডেমি অব সায়েন্সের ল্যাবরেটরিতে। আর তা মূল্যায়ন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ জন্য প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে।

বিশ্বব্যাপী গমের ব্লাস্ট রোগকে একটি ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। ১৯৮৫ সালে রোগটি প্রথম ব্রাজিলে দেখা দেয়। পরবর্তী সময় আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ের প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে তা ছড়িয়ে পড়ে। অনুকূল আবহাওয়া পেলে তা শতভাগ গম নষ্ট করে ফেলে। ব্লাস্ট গমের শিষের ভেতরে দানা তৈরি হতে দেয় না।

২০১৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে গমে প্রথম এই রোগটি দেখা দেয়। সে সময় চারটি জেলার ১৫ হাজার হেক্টর জমির গম নষ্ট হয়। এমনকি এই রোগটি ধানেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা বলেন বিজ্ঞানীরা। ওই রোগের আক্রমণে বাংলাদেশে গমের উৎপাদন ১২ লাখ টন থেকে কমে ৮ লাখ টনে নেমে আসে। ২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ার ৭০ হাজার হেক্টর গমের জমিতে তা ছড়িয়ে পড়ে।

জানতে চাইলে বশেমুরকৃবি উপাচার্য মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন মিঞা বলেন, গমের ব্লাস্ট রোগ দমনে ভবিষ্যতে নতুন গবেষণার দুয়ারও এর মাধ্যমে উন্মোচিত হলো। আর ব্লাস্ট রোগ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের খাদ্যনিরাপত্তায় বড় হুমকি। ফলে এই আবিষ্কার একই সঙ্গে বিশ্বের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে। জীবাণুমুক্ত গম উৎপাদন, আমদানি ও রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিজ্ঞানীরা জানান, এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের আগে এটি যেন সহজে ব্যবহার করা যায়, সেটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকেরা মাঠে খুব সহজে গমের যেকোনো নমুনা থেকে যেন এই ছত্রাক চিহ্নিত করতে পারেন এবং এর দামও যেন কৃষকের হাতের নাগালের মধ্যে থাকে, সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশে বছরে ১০ থেকে ১২ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়। বিদেশ থেকেও বাংলাদেশ প্রতিবছর ৬৫ লাখ টন গম আমদানি করে থাকে। বিশ্বের পঞ্চম আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দক্ষিণ আমেরিকা, কানাডা, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে গম আমদানি করে। কিন্তু কোনো গমে ব্লাস্ট রোগের ছত্রাক আছে কি না, তা চিহ্নিত করার মতো প্রযুক্তি এত দিন ছিল না।

এ ব্যাপারে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গুয়ো লিয়াং ইয়াং বলেন, গম বিশ্বের প্রধানতম খাদ্যগুলোর একটি। বিশ্বের শীর্ষ আমদানি-রপ্তানি খাদ্যপণ্য এটি। তাই গমে যে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ল, সেটি সবাইকে চিন্তিত করেছিল। এখন অন্তত কোনো দেশে এই রোগ ছড়িয় পড়ল কি না বা আমদানি-রপ্তানির সময় গমে ব্লাস্টের উপস্থিতি আছে কি না, তা দ্রুত জানা যাবে। সূত্র: প্রথম আলো

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত