অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষায় সতর্ক বার্তা চালুর নির্দেশ হাইকোর্টের
বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে দূষিত এলাকার তালিকা করা এবং দূষণ কমাতে কী পরিকল্পনা, তা দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং পরিচালকের (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রবিবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে উপযুক্ত স্থানে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ‘কন্টিনিউয়াস এয়ার মনিটরিং স্টেশন’ বসানো এবং বিপজ্জনক-অস্বাস্থ্যকর বায়ু থেকে জনগণকে রক্ষায় ‘অ্যালার্ট’ (সতর্কবার্তা) পদ্ধতি চালু করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া পোড়ানো ইটের বিকল্প পদ্ধতির উন্নয়ন ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে চার মাসের মধ্যে বিবাদীদের আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ২৬ জুন পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন আদালত।
বায়ুদূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রিটটি করে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্য অনুয়ায়ী গত জানুয়ারি মাসে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে ছিল আট দিন।
জানুয়ারির ২০ দিনের মধ্যে ১১ দিনই ঢাকা বায়ুদূষণের তালিকায় এক নম্বরে ছিল। ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে দেশের মানুষের গড় আয়ু কমছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। আর ঢাকায় গড় আয়ু কমছে প্রায় সাত বছর সাত মাস।
এমন পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সতর্কতা ছাড়াই নগরবাসী স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য সতর্কতা না থাকার ফলে প্রতিবছর বায়ুদূষণজনিত রোগে প্রায় দেড় লাখ মানুষ মারা যায়।
ভারত, ফিলিপাইন, চীনসহ যেসব দেশের বায়ু দূষিত, তারা প্রত্যেকেই আইন করেছে জানিয়ে শুনানিতে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকারকে ইতিমধ্যে আইনের খসড়াও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তবে সরকার বিধিমালা করতে চায়।
শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, মোটরসাইকেল রাস্তার ফুটপাতে তুলে দেওয়া হয়। আইন করে কতটুকু আটকানো যাবে, ব্যক্তি নিজে যদি সচেতন না হন।
শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, ব্যক্তির মনের মধ্যে এই সচেতনতাবোধ যেন থাকে যে আইন লঙ্ঘন করলে এ থেকে পার পাওয়া যাবে না। এই জায়গাটিতে যেন কম্প্রোমাইজ (ছাড়) না হয়। কম্প্রোমাইজ হয়ে গেলে তখন নেতিবাচক দিকে মানুষের সাহস বেড়ে যায়।
রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, আদালত রুলে বায়ুদূষণ কমাতে ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন জনস্বার্থবিরোধী ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
বায়ুদূষণ কমাতে ও বায়ুর মান উন্নয়নে যথাযথ সমন্বয় ও তদারকি নিশ্চিত করে সময় নির্ধারিত একটি কর্মপরিকল্পনা কেন নেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল হয়েছে। স্থানীয় সরকারসচিব, পরিবেশসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, শিল্পসচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।