জলবায়ুর ক্ষতি পোষাতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশের মতো দেশ
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি তীব্র হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ঝড়-বন্যা বেড়ে যাওয়ার ক্ষতি পোষাতে পারছে না বাংলাদেশ। বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়লে এই ক্ষতি আরও বাড়বে।
ফলে জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিলসহ নানা খাত থেকে বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য তহবিল বাড়াতে হবে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিজ্ঞানীদের প্যানেল-আইপিসিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব আশঙ্কা ও সুপারিশ করা হয়েছে।
আইপিসিসির ওয়ার্কিং গ্রুপ-২ থেকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৯ থেকে ২১ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হতে পারে।
কেবল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে চলতি শতকে দেশের কিছু কিছু অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন ৩১ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে। একই কারণে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর এক-তৃতীয়াংশ স্থানান্তর করার প্রয়োজন হতে পারে।
অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানির চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে এ মুহূর্তে ১০ শতাংশ মানুষ পানির সংকটের মধ্যে আছে। ২০৫০ সাল নাগাদ তা বেড়ে ২৫ শতাংশ হতে পারে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের উজান থেকে আসা গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যার ভয়াবহতা বাড়তে পারে।
এ ব্যাপারে আইপিসিসির সাবেক সদস্য ও বাংলাদেশ পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাংলাদেশ নিজের সামর্থ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তা যে যথেষ্ট নয়, পরিস্থিতি যে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, তা বুঝে বাংলাদেশকে জলবায়ুবিষয়ক নীতি ও পরিকল্পনা নিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আন্তর্জাতিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা, বাজারব্যবস্থা, আর্থিক খাত এবং বাণিজ্যিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার কারণে বাংলাদেশ পণ্যের সহজলভ্যতা কমবে এবং দাম বাড়বে।
সেই সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাজারেও ধস নামতে পারে। কৃষি উৎপাদনে ধস, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বিপর্যয় এবং পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সামগ্রিকভাবে আর্থিক অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
আইপিসিসির বিজ্ঞানী দলের অন্যতম সমন্বয়কারী ও প্রধান লেখক রওশন আরা বেগম বলেন, ‘এ প্রতিবেদন থেকে এটি স্পষ্ট যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।
তাই বাংলাদেশকে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে অভিযোজন খাতে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করা উচিত।’