বর্জ্যের স্তূপ আর পলিথিনে অস্তিত্ব সংকটে সিলেটের সুরমা নদী। প্রতিদিন হাজার হাজার টন পলিথিন ফেলা হয় সুরমায়। এতে নাব্যতা হারাচ্ছে নদীটি।
নদীতে পলি জমে পরিণত হয়েছে খেলার মাঠে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা (সিলেট) শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম জানান, সুরমা নদী সিলেট মহানগরীর মানুষের আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে পরিনত হয়েছে। নগরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন খাল ও ছড়া দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পলিথিন ও প্লাস্টিক বোতল সুরমা নদীতে ফেলা হচ্ছে। ছড়া ও খাল সিটি করপোরেশন থেকে একাধিকবার পরিষ্কার করা হলেও মানুষের অসচেতনতা সুরমার জীবন বিপন্ন করে তুলছে।
পলি জমে সুরমা নদীর উৎসমুখ ভরাট হয়ে আছে। জকিগঞ্জের অমলসীদ থেকে কানাইঘাট উপজেলার লোভা নদীর মিলনস্থল পর্যন্ত পলি জমে একাধিক চর জেগেছে। ফলে উৎসনদী বরাক থেকে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে আছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তরেখা দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদী নাব্যতা হারানোয় অদূর ভবিষ্যতে দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই বাপার পক্ষ থেকে সুরমার উৎসমুখ খননের জন্য যৌথ নদী কমিশনে আলোচনা শুরুর দাবি একাধিকবার জানানো হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের কাজিরবাজার মৎস্য ও কলার আড়তের ফেলা বর্জ্যে সিসিকের খাল হয়ে আসা আবর্জনায় নদী ভরাট হচ্ছে। একইভাবে নগরের ছড়ারপার খালের আবর্জনা ও এলাকার শুটকি আড়তের ফেলা বর্জ্যে ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক ও জনপথের (সওজ) এক প্রকৌশলী বলেন, নগরের কাজিরবাজার শাহজালাল (র.) ২য় সেতুর চারটি খুঁটির প্রস্থ নদীর অর্ধেক দখল করে নিয়েছে। ফলে স্রোতপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নদী ভরাট হচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, সুরমার বিভিন্ন পয়েন্টে খনন প্রয়োজন। বিশেষ শুস্ক মৌসুমে সুরমায় পানি না থাকার মূলে উৎসমুখ বরাক মোহনা ভরাট হয়ে যাওয়া। উৎপত্তিস্থল ভরাট হওয়াতে এ মৌসুমে ৩০ শতাংশ পানিও আসে না সুরমায়।
তিনি আরও বলেন, সুরমা খননের কোনো বরাদ্দ আসেনি। তবে নদী তীর প্রতিরক্ষায় এক কোটি ২০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প সময়মতো কাজ না হওয়ায় ফেরত গেছে। এছাড়া নগর সংলগ্ন কানিশাইল এলাকায় সেকেন্ড কিস্তিতে ৮ কোটি টাকার বরাদ্দ এলেও দুই মাস আগে প্রকল্পের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে।