যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্য মতে, বায়ুদূষণে ভারতের দিল্লিকে পিছিয়ে এ বছর শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসে ঢাকা। বায়ুদূষণের ভয়াবহতায় ঢাকা গতকাল রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) আবারও সারা বিশ্বে এক নম্বরে উঠে এসেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযোগ, জনবল সংকটের কারণে অভিযানের কলেবর বাড়ানো যাচ্ছে না। মাত্র দুজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে পাঁচ জেলায় ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন ও রাতের বেলায় বর্জ্য পোড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে যতসংখ্যক জনবল থাকা দরকার তা নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ শতাংশ দায়ী ইটভাটা। আদালতের নির্দেশনার পর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীর আশপাশের ৭৪টি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে দুই কোটি ৬৩ লাখ টাকা।ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে ইটভাটার পরই রয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রাতের বেলায় বর্জ্য পোড়ানো ও যানবাহনের ধোঁয়া। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁদের কঠোর অবস্থানের কারণে ঢাকার বায়ুদূষণে কিছুটা উন্নতি ঘটছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, বায়ুদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে প্রথম দিকে সরকারি সংস্থাগুলো ব্যাপক সক্রিয় ছিল। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানেই কর্মকর্তারা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। অবশ্য রাতের তামপাত্রা কমে যাওয়া ও বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তনও বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ।
তিনি আরও বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় গণনা করে দেখা যায়, প্রতি মিনিটে ১৬০টি যানবাহন চলাচল করছে। সেখানে প্রতি ঘনমিটারে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২.৫ পাওয়া গেছে ১২০ মাইক্রোগ্রাম। দুপুরে একই স্থানে প্রতি মিনিটে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে ৩৫টি। আর ওই সময় প্রতি ঘনমিটারে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২.৫ পাওয়া গেছে ৪০ থেকে ৪৫ মাইক্রোগ্রাম। এতেই প্রমাণিত হয় যে ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ যানবাহন। পক্ষান্তরে আশপাশ এলাকার ইটভাটার দূষণ ঢাকার মধ্যে আসার আশঙ্কা কম। তার চেয়েও বড় সমস্যা হলো যানবাহন থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়া ও রাতের বেলায় বর্জ্য পোড়ানো। বায়ুর মান সূচক অবনতিতে বড় ভূমিকা রাখা এ দুটি বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো অভিযান পরিচালনা করছে না।’
জানা গেছে, রাজধানীর ৪০টি স্থানে রাতে আবর্জনা পোড়ানো হয়। গত ২৫ নভেম্বর সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রাতে আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানের পর থেকে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে নিয়মিত পানি ছিটাতে দেখা যাচ্ছে। গতকাল কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো রেল প্রকল্প এলাকায় সকাল-বিকেল পানি ছিটানো হচ্ছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বনানী অংশেও তেমন চিত্র দেখা গেছে। বনানী অংশে দেখা গেল, প্রকল্পের জন্য ব্যবহৃত বালি ঢেকে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২৫ নভেম্বর আদালত থেকে ঢাকার আশপাশে পাঁচটি জেলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার আদেশ পাওয়ার পর ২৭ নভেম্বর থেকে মাঠে নামে পরিবেশ অধিদপ্তর। অভিযান পরিচালনার পর থেকে বায়ুদূষণের মাত্রা কমে আসে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় এয়ার ভিজ্যুয়ালের তালিকায় ২০-এর মধ্যে ছিল না ঢাকা। তবে গতকাল সকালে ফের বায়ুদূষণে আবারও এক নম্বর অবস্থানে উঠে আসে রাজধানী। বিকেলের দিকে অবশ্য চতুর্থ স্থানে নেমে যায়।
তবে ঢাকার যানবাহন ও আবর্জনা পোড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হলে বায়ুদূষণের মাত্রা আরো কমে আসবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।