জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, দূষণ ও পরিবেশ বিপর্যয়-আঞ্চলিক ও জাতীয় ক্ষেত্রে প্রভাব এবং করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় গতকাল তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন,‘জলবায়ু সম্মেলন থেকে সাহায্য নিয়ে এসে সে অর্থে দেশে সঠিক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, “বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে কথা বলছে একভাবে, সেখানে কান্নাকাটি করে সাহায্য চাচ্ছে। এই করে সাহায্য নিয়ে আসছে। কিন্তু এই সাহায্য দিয়ে যা যা করা দরকার মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য, তা না করে ঠিক উল্টো কাজটা তারা করছে।”
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা ঠেকাতে মিষ্টি পানির প্রবাহ জোরদার রাখার পাশাপাশি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে লবণাক্ত পানির প্রবেশ ঠেকাতে নদীর পানি প্রবাহ শক্তিশালী রাখা এবং দূষণ ও দখল থেকে নদীকে রক্ষা করা।বাংলাদেশ সরকার কী কী করছে তার জন্য? নদী দূষণে শেষ। সব নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রকল্পের নামে এমন সব প্রকল্প করা হচ্ছে যাতে আমাদের নদী-নালা-খাল-বিলের যে অবাধ জলপ্রবাহ ছিল তা জলাবদ্ধতার দেশে পরিণত করছে।যেসব নদী কৃষি থেকে শুরু করে জীবনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়, সেসব নদীর পানি দূষিত করে মানুষের ‘অসুস্থতার উৎসে’ পরিণত করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সরকার ‘উল্টো’ কাজটি করছে বলে অভিযোগ করেন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব।
তিনি বলেন, “বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু নদীর পানি যদি ঠিক থাকত, তাহলে ঢাকা শহরের মানুষের এখন যে পরিমাণ অসুখ-বিসুখ হচ্ছে তার অর্ধেকও হত না। অসুখে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার হত না। ওষুধ খাওয়া বা চিকিৎসার দরকারই হত না।বুড়িগঙ্গা, বালু নদীকে যারা নর্দমা বানাচ্ছে, তাদেরকে সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। আর নদীগুলোর দূষণ থেকে রক্ষার কেউ চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী, পুলিশ, মামলা, ক্রসফায়ারসহ নানা রকম হুমকির মধ্যে রাখছে।”
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল সবচেয়ে নাজুক এবং সমুদ্রের পানি বেড়ে গেলে প্রথমে উপকূলীয় অঞ্চল আক্রান্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষার জন্য সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা উচিত ছিল।কিন্তু সরকার কক্সবাজার থেকে শুরু করে খুলনা পর্যন্ত পুরো উপকূল জুড়ে ভারত, চীন, জাপানসহ অন্যান্য দেশকে নিয়ে একের পর এক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে। বাংলাদেশকে যে রক্ষা করে, সেই সুন্দরবন বিনাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে করতে গিয়ে।”
নদী দূষণ ও বন উজাড় হওয়ার ফলে মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে এবং তাতে ঢাকা শহরে মানুষের চাপ বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব।
বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের আয়োজনে এ সভায় ভারতের রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও সাপ্তাহিক অনিকের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে।পৃথিবীতে অনেক দিন পর পর একটা করে হিমযুগ আসে। প্রায় ১১ হাজার ৬শ বছর আগে হিমযুগ এসেছিল। এখন আমরা আরেকটা হিমযুগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।”
অধ্যাপক শুভাশিস বলেন, “বহুজাতি কোম্পানিগুলো পৃথিবীর উষ্ণায়নের কথা বলে ব্যবসা করছে। তারা উষ্ণতা বৃদ্ধির নামে বাড়াবাড়ি করছে। তারা কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয় না। কোনো যুক্তি-তর্কও তারা মানে না।”
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বাসদের নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, ভারতের কেরালার সমাজকর্মী ভাসুদেব কুরণ প্রসাদ, নেপালের তিলকরাজ ভাণ্ডারী, শ্রীলংকার শানিকা হাসিনি সিলভা আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।