35 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ২:১৫ | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
তীব্র দাবদাহের অন্যতম কারন হচ্ছে বায়ুদূষণ
পরিবেশ দূষণ

তীব্র দাবদাহের অন্যতম কারন হচ্ছে বায়ুদূষণ

তীব্র দাবদাহের অন্যতম কারন হচ্ছে বায়ুদূষণ

সারা দেশে প্রবাহমান তীব্র দাবদাহের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বায়ুদূষণও দায়ী। ধুলিকণা এবং দূষিত গ্যাসের তাপ শোষণ করার ক্ষমতা থাকার কারণে বর্তমানে অত্যধিক দূষিত বায়ুতে অবস্থিত ধুলিকণা এবং গ্যাসীয় পদার্থগুলো সূর্যের তাপমাত্রাকে শোষণ করে তাপ প্রবাহ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।

পাশাপাশি সালাফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই তাপমাত্রার বৃদ্ধি কমাতে বায়ু দূষণ কমানো জরুরি বলে জানিয়েছেন বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বায়ুমান বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

রবিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগ চত্বর বায়ুদূষণ কমাতে জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিতে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন।

মানববন্ধনটির সহ-আয়োজক ছিলো বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ), বারসিক, সেভ ফিউচার বাংলাদেশ, জিএলটিএস, গ্রীন ভয়েজ, পরিবেশ উদ্যোগ, সিপিআরডি, সিজিইডি এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস। মনববন্ধন থেকে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ৪টি দাবি ও ১৫ দফা সুপারিশ করা হয়।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার আরো বলেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিভিন্ন শহর ধীরে ধীরে বসবাসের যোগ্যতা হারাচ্ছে।



অথচ দেশে বায়ুদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। অতি দ্রুত বায়ুদূষণ কমাতে পদক্ষেপ না নিলে জনজীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

বায়ু দূষণ ও তাপমাত্রা কমানোর জন্য বনায়ন ও জলাভূমি সংরক্ষণের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, বায়ু দূষণের জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে বেড়ে উঠবে।

এই জায়গা থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। নিশ্চয়ই আমরা ঘুরে দাঁড়াবো। আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তাআলা আমাদেরকে এমন এক দেশ দিয়েছেন যেখানে বীজ বপন করলেই গাছ হয়, শুধু লালন-পালন করলেই আমরা এই ক্ষতিকর বায়ুদূষণ থেকে মুক্তিলাভ করতে পারি। আজকে আমরা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ হই এই শহরকে আবার সাজাবো এবং এর জন্য সকলকে একসাথে হয়ে কাজ করবো।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশে বায়ুদূষণ এখন একটি উদ্বেগজনক জায়গায় আছে, অথচ রাষ্ট্র কিন্তু এখানে নির্বিকার।

এই বায়ুদূষণ নিয়ে যে গবেষণা হচ্ছে বেশির ভাগই হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে। সরকারি যে কয়েকটা গবেষণা হচ্ছে সেখানে অল্প জায়গাতে বায়ুমান পরিমাপ করা হচ্ছে কিন্তু তা দিয়ে পুরো শহরের যে ক্রান্তিক অবস্থা সেটা বুঝার উপায় নেই। অথচ রাষ্ট্রর উচিত ছিল সরকারি ভাবে সকলকে নিয়ে আলোচনা করা, গবেষণা করা ও করনীয়গুলি ঠিক করা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, বায়ুদূষণের ফলে ধীরে ধীরে আমরা অসুস্থ জাতিতে পরিণত হচ্ছি।

সকলকে নিয়মিত ভাবে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। সরকারকে বিভিন্ন পর্যায়ে দূষণের উৎস গুলো কমিয়ে আনতে আইনের প্রয়োগ করতে হবে।

বারসিক এর সমন্বয়কারী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বায়ুদূষণ আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বায়ুদূষণ আমাদের সমস্ত নগর এলাকার মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

নগর হলো উন্নত জীবন ধারণের স্থান হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়ন, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়ার কারণে নগরের বায়ু প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে এবং পরিবেশ দিন দিন বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। তাই বায়ুদূষণ কমানোর জন্য এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী।

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, প্রাণঘাতী বায়ুদূষণের মোকাবিলায় সরকারী পদক্ষেপ কেবল একটি দায়িত্ব নয়, নৈতিক আবশ্যক।



কারণ এটি আমদের শিশু ও তরুণদের নির্মল শ্বাস-প্রশ্বাসের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে। বায়ুদূষণের কারণে আমাদের ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। তাই সরকারকে দ্বৈতনীতি পরিহার করে পরিবেশগত সুবিচার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হতে হবে আজকেই, এখনই।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা বলেন, ঢাকা একদিকে যেমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত অন্যদিকে বায়ুদূষণের পরিমাণও দিন দিন বেড়ে চলেছে।

এর কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, পরিবেশ অবক্ষয় এবং নানাবিধ সম্পদগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে আমাদের প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।

পরিবেশ উদ্যোগ এর সমন্বয়ক মাহমুদা ইসলাম বলেন, বায়ু দূষণে প্রতিনিয়ত ঢাকা প্রথম দশটি শহরের মধ্যে থাকার পরেও কোন সমন্বিত উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

উপরন্ত যেসব আইন বিধিমালা আছে সেগুলো ঠিকমতো মানা হচ্ছে না বরং গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে আমরা এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

মানববন্ধন থেকে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ৪টি দাবি ও ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

দাবিগুলো হলো-

  • ১.ভবিষ্যতে বায়ু দূষণের মারাত্মক প্রভাব হ্রাস করার জন্য বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ তে PM2.5 এর পূর্ববর্তী মানমাত্রা কমপক্ষে প্রতিঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম বজায় রাখতে হবে।
  • ২. বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ এ নির্গমন মানমাত্রাগুলোকে আরও শক্তিশালী করা এবং আগত Integrated Energy and Power Master Plan (IEPMP) তে স্টাক ইমিশনের মানমাত্রাগুলোকে পুনঃবিবেচনা এবং অন্তভুক্ত করতে হবে।
  • ৩. পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত বায়ু দূষণ রোধ নির্দেশিকার ১৬ নং পৃষ্ঠার ১৯ নং ক্রম অনুযায়ী আমদানীকৃত ডিজেলে কম সালফারযুক্ত (৫০ পিপিএম) আমদানি ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
  • ৪. নতুন পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২৩ এর তফসিল-১ অনুযায়ী কয়লা ও তেল ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্লান্ট (৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত) এবং গ্যাস ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্লান্ট (১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত) কমলা শ্রেণীর অন্তভুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান। যা লাল শ্রেণীভুক্ত করতে হবে।

সুপারিশগুলো হলো-

    • ১. অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসাবে সেন্ড বক্ল এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে।
    • ২. ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করা যেতে পারে।
    • ৩. নির্মাণকাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে।
    • ৪. হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এর সমন্বয়ে দূষিত শহরগুলোতে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
    • ৫. রাস্তায় ধূলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে।



  • ৬. সরকারী ও বেসরকারি উদ্দ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সকলকে উৎসাহিত করতে হবে।
  • ৭. নগরজুড়ে আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ৮. দূষিত শহরগুলোর আশেপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।
  • ৯. সিটি গভর্নেন্স এর প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়ন মূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের মাধ্যমে স্বল্প নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।
  • ১০. নির্মল বায়ু আইন যতদ্রুত সম্ভব প্রণয়ন করতে হবে।
  • ১১. পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষন স্টেশন (ক্যামস) এর ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়াও বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে।
  • ১২. গণপরিবহনসহ ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।
  • ১৩. পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস ও পরিবেশ পুলিশ চালু এবং পরিবেশ আদালত কার্যাবলী গতিশীল করতে হবে।
  • ১৪. সব ধরনের শিল্প কারখানাকে (লাল, কমলা শ্রেণী) Real Time Monitoring প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূষণ নির্গমনের মাত্রা পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সার্বক্ষনিক নজরদারিতে রাখলে দূষণের নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।
  • ১৫. সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য নির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত