খাবার সঙ্কটে লোকালয়ে সুন্দরবনের বাঘ
সুন্দরবনের পাশে জনবসতি গড়ে উঠেছে। নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘসহ অন্য বন্যপ্রাণী খাবারের খোঁজে চলে আসছে লোকালয়ে।
সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা শরণখোলা উপজেলার খেজুরবাড়িয়া গ্রামে একটি বাঘের আনাগোনা টের পাচ্ছিলেন গ্রামবাসী। প্রায় এক সপ্তাহ বাঘটি লোকালয়ে ঘোরাফেরা করায় আতঙ্কে ছিলেন ওই গ্রামসহ চার গ্রামের মানুষ। শেষ পর্যন্ত অঘটনের কোনো খবর যদিও আসেনি।
ওই বাঘটি গ্রামে আসে ৫ জুন। এরপর থেকেই গ্রামের বাসিন্দাদের থাকতে হয়েছে সতর্ক। বন ও লোকালয়ের মধ্যবর্তী ভোলা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘ অনায়াসে লোকালয়ে চলে আসছে।
এর প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ২৪ মে সুন্দরবনের কাছে ঘাস খাওয়ার সময় শরণখোলার ধানসাগর গ্রামের আফজাল হাওলাদারের একটি গরু বাঘের আক্রমণে গুরুতর জখম হয়। আর ৩১ এপ্রিল খালেরচরে ঘাস খাওয়ার সময় এ উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের সোবহান হাওলাদারের একটি মহিষকে আক্রমণ করে বাঘ।
সুন্দরবনের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবন থেকে শুধু বাঘ নয়, হরিণ, অজগর, কুমির ও বন্য শূকর লোকালয়ে চলে আসছে। পরে সেগুলো আবার বনে অবমুক্ত করছি আমরা।’
সুন্দরবনের সীমান্তবর্তী এই কয়টি কাছাকাছি এলাকায় বাঘের আনাগোনার তথ্য এগুলো। এর বাইরেও সাম্প্রতিক সময়ে বাঘসহ অন্যান্য প্রাণী প্রায়ই বন পেরিয়ে গ্রামের কাছে কিংবা লোকালয়ে চলে আসছে।
২০২১ সালে মার্চে সুন্দরবনের ভোলা নদের ধুনচেবাড়িয়ার চর থেকে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃতদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ। এরকম বিভিন্ন সময়েই লোকালয়ে বাঘের উপস্থিতির কথা জানান স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাবারের সন্ধান, বন-সংলগ্ন এলাকায় লোকালয় গড়ে ওঠা এবং বন ও লোকালয়ের মধ্যবর্তী নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে লোকালয়ে আসছে এসব বন্যপ্রাণী।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরীর মতে, বাঘের আবাসন এলাকায় মানুষের বিচরণ বেড়েছে। সুন্দরবন নির্ভরশীল পেশাজীবীরা বনজসম্পদ আহরণে অবাধে বনে প্রবেশ করছেন। ফলে বাঘও তার স্থান ত্যাগ করছে।
অভিজ্ঞতা তুলে ধরে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর জানান, বাঘের প্রধান খাবার হরিণ, বন্য শুকর। বন ছেড়ে এসব প্রাণী লোকালয়ের কাছে আনাগোনা বাড়লে শিকারীরও বনের বাইরে যেতে হয়।
বাঘের বয়স ১২-১৩ বছর হলে তার শিকারি দাঁত পড়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, তখন হরিণ বা বন্য শূকর ধরলেও তা শেষ পর্যন্ত শিকার করতে পারে না, ছুটে যায়। তখন খাবারের সন্ধানে মাঝে মধ্যে বন-সংলগ্ন লোকালয়ে চলে যায়।
বন্যপ্রাণী লোকালয়ে আসার এই প্রবণতা রোধে বন বিভাগকেই উদ্যোগ নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বনে প্রতিকূল পরিবেশ, পানি এবং মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণেও বন্যপ্রাণী আবাসস্থল ছেড়ে লোকালয়ে আসছে।’