উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্রমশ বিলুপ্তির দিকে
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো নতুন এক সতর্কবার্তা দিয়েছে। তারা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এই দেশগুলো ‘বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়বে’।
ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো সাধারনত উন্নয়নশীল দেশ। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) বৈশ্বিক উষ্ণায়নবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই সতর্কবার্তা দিল দেশগুলো।
আইপিসিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীর একটি বড় অংশ বসবাসের অযোগ্য হতে পারে। ফলে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিভিন্ন দেশের নেতারা নড়েচড়ে বসেছেন। আইপিসিসির এই প্রতিবেদনকে ‘বিশ্বকে জেগে ওঠার ডাক’ হিসেবে দেখছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেশ কিছু দেশ। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে এই দেশগুলো।
এমন ঝুঁকিতে থাকা ৫০টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ। তিনি বলেন, ‘অন্য দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ করছে। আর আমরা জীবন দিয়ে এর মূল্য পরিশোধ করছি।’
সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম মালদ্বীপ। এই দেশের পরিস্থিতি উল্লেখ করে নাশিদ বলেন, মালদ্বীপের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ফল হবে ধ্বংসাত্মক। এর ফলে দেশটি ‘বিলুপ্তির ঝুঁকিতে’ পড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
আইপিসিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোয় বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসও বাড়বে। ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর বেশির ভাগই দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার।
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিভিন্ন দেশে দাবানল, বন্যা, তুষার ঝড় বেড়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই পরিস্থিতিকে ‘মানবতার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কসংকেত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা স্পষ্ট যে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানুষই দায়ী। এখনো যেভাবে বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, তাতে দুই দশকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা শিল্পবিপ্লব–পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আধা মিটার বৃদ্ধি পেতে পারে। আর এই শতকের শেষে গিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি দুই মিটারে গিয়ে ঠেকতে পারে। এ প্রসঙ্গে ক্যারিবীয় দেশ অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডার দূত ডিয়ান ব্ল্যাক-লেইন বলেন, এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকা দেশগুলোর ওপর।
ছোট দ্বীপ দেশের জোট অ্যালায়েন্স অব স্মল আইসল্যান্ড স্টেটসের প্রতিনিধিত্ব করছেন ব্ল্যাক-লেইন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে যা ঘটতে যাচ্ছে, তাকেই নিজেদের ভবিষ্যৎ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
আইপিসিসি এমন সময়ে এই প্রতিবেদন দিল, যার তিন মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে বসতে যাচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে প্রতিশ্রুতি দিতে কপ-২৬ নামে পরিচিত এই সম্মেলনে বসবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা।
এদিকে আইপিসিসির এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, যারা এই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের সাহায্য প্রয়োজন।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুসারে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। এ জন্য ১৯০ দেশ ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল।
কিন্তু নতুন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কার্বন নিঃসরণ যথেষ্ট পরিমাণ কমাতে না পারলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়।