সমুদ্রের অস্বাভাবিক জোয়ারের তাণ্ডবে ভাঙন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ঢেউয়ের ঝাপটায় ক্ষয়ে যাচ্ছে বালু। এতে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য।
ইতিমধ্যে জোয়ার ও ঢেউয়ের তাণ্ডবে গাছ-পালাসহ বেশকিছু স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সৈকতের শূন্য পয়েন্টে থাকা পাবলিক ওয়াস রুম।
এদিকে, জোয়ারের পানিতে সৈকত তলিয়ে থাকায় পর্যটকদের বাধ্য হয়ে রাস্তায় কিংবা একটু উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি উপভোগ করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটা ও অব্যাহত বালুক্ষয়ে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছের মূল। প্রচণ্ড ঢেউয়ের ঝাপটায় গাছের মূল থেক বালু সরে যাওয়ায় গাছ উপড়ে পড়েছে। জোয়ারের সময় সমুদ্রে গোসল করতে মারাত্মক অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে পর্যটকদের। এছাড়া সৈকতের সবুজ বেষ্টনী, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান, দোকান-পাটসহ মসজিদ-মন্দির ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দশ বছরে কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া হাজার হাজার নারিকেল গাছ, ঝাউ বনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা ও একাধিক স্থাপনা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় সৈকতের বেলাভূমিতে এখন আর ওয়াকিং জোন থাকে না। বর্তমানে এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, লগ্নিকারকসহ পর্যটকরা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। এদিকে, ভাঙনরোধ করতে জরুরি ভিত্তিতে কুয়াকাটা পৌরসভা অস্থায়ীভাবে কাজ শুরু করেছে।
কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটক মাসুম বিল্লহ্ বলেন, জোয়ারের সময় সৈকত পানিতে তলিয়ে থাকে। এসময় রাস্তায় কিংবা একটু উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি উপভোগ করতে হয়। এছাড়া সৈকতে পড়ে থাকা গাছের মূল কিংবা বিভিন্ন স্থাপনার ইট-পাথর গোসলের সময় মারাত্মক ঝুঁকি। এগুলো অপসারণ করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এ এম মিজানুর রহমান বুলেট জানান, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দর্শনের প্রসিদ্ধ স্থান পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য হারিয়ে পড়ছে। সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় বালু ক্ষয় হয়ে ইতিমধ্যে বেশকিছু গাছ-পালা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বালু ক্ষয় হতে থাকলে সৈকত তার সৌন্দর্য হারাবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সৈকতের বালু ক্ষয় রোধ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আ. বারেক মোল্লা জানান, সমুদ্র সৈকত রক্ষা করা কুয়াকাটা পৌরসভার একার পক্ষে সম্ভব নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার অবহিত করা হলেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারপরও পাবলিক ওয়াস রুম ও জিরো পয়েন্ট রাস্তা রক্ষার্থে পাচঁ শতাধিক বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়ালিউজ্জামান জানান, বর্তমানে যে বালু ক্ষয় হচ্ছে, এর জন্য কোনো প্রকল্প নেই। যদি বড় আকারে কোনো ভাঙন দেখা দেয়, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হবে। কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার জন্য একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।