হুমকির মুখে অতিথি পাখির অভয়স্থল
শীত মৌসুমে তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে শীত প্রধান দেশ থেকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলে বসবার শুরু করে অতিথি পাখির দল।
এরই ধারাবাহিকতায় অন্য বছরের চেয়ে এই বছর বরিশাল নগরীর বিবিরপুকুর পাড়ের পূর্ব দিকের অধিক পাখি দেখা যায়। পাখিদের কিচির-মিচির কলরবে মুখর বরিশাল শহরের অন্যতম সৌন্দর্য পরিসর বিবিরপুকুরের পূর্বপাড়ের পাখির অভয়স্থল নানাভাবেই এখন হুমকির মুখে।
একসময় পরম নিরাপদ স্থান ভেবেই হয়তো শহরের কর্মব্যস্ত এলাকায় পাখিরা এই অভয়স্থল গড়ে তুলেছিল। কিন্তু শহর উন্নয়নের মহড়ায় পুকুরের চারপাশ ঘিরে গড়ে ওঠা বহু হাইরাইজ বিল্ডিং ও এর আলোকসজ্জায় ব্যবহৃত মেটাল হ্যালাইডের উজ্জ্বল আলো, দিনের অধিকাংশ সময়ই রাস্তার যানজটে বাজানো গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন ও যত্রতত্র মাইকের আওয়াজ, আতশবাজি উল্লাস, অতিরিক্ত বিষাক্ত ধোঁয়া সৃষ্টিকারী শব্দবাজির ভয়ের কারণে এখানকার পাখিরা তাদের দীর্ঘদিনের নিরাপদ জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই বিবিরপুকুর পাড়ের বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশনের দেয়াল ঘেরা অরণ্য শোভিত বিশাল অফিস চত্বরের গাছে গাছে শত শত পাখির আগমন ঘটে। আর তখনই শহরের অন্যতম ব্যস্ত গির্জামহল্লা এলাকা পাখির ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে।
এখানের প্রতিটি গাছের ডালপালায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে থাকে সাদা ও হালকা খয়েরি পালকের অজস্র বক। আর তাতেই যেন বড় বড় গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে জীবন্ত বকফুল ফুটে থাকার অনন্য দৃশ্য তৈরি হয়। ডালে ডালে দেখা যায় পাখিদের বাসা, কোনো কোনো পাখি বাসায় ডিমে তা দিচ্ছে, আবার কোনো পাখির বাসাতে বাচ্চা ফুটেছে।
সেইসব বাসায় পাখি মা-বাবার মুখ থেকে হাঁ করে খাবার খাচ্ছে ছানাগুলো। শুধু বক নয়, রঙের বৈচিত্র্য ফোটাতেই কি-না, ছোপ ছোপ কিছু কালো পানকৌড়ির দেখাও মেলে উজ্জ্বল সাদা বকের ভিড়ে। প্রতিদিন বিকেল পড়লেই এই এলাকায় পাখিদের সুরেলা ধ্বনিতে মুগ্ধ হয়ে বহু পথচারি থমকে দাঁড়িয়ে দুদ-পাখিদের ওড়াউড়ি দেখে।
পাখি দেখার আনন্দ উপভোগ করতে শিশু, বৃদ্ধ, যুবক-যুবতী অনেকেই আসেন। সারা বছরই এখানকার পাখির সমারোহ থাকত বলে শহরের দূর-দূরান্ত থেকেও বহু পাখিপ্রেমী ও সৌখিন মানুষও বিবিরপুকুর পাড়ের পাখি সমারোহ দেখতে আসতেন। বরিশালে আসা বহু পর্যটকও শহরের একচিলতে অরণ্যে এত পাখির সমাবেশ দেখে আশ্চর্য হতেন।
সাধারণত সারাবছরই এখাকার বড় বড় মেহগনি, রেইনন্ট্রি, কাঁঠাল, আম এবং চাম্বল গাছের ঝোপঝাড়ের আশ্রয় পেতে ঝুঁট-শালিক, বুলবুলি, বসন্তবৌরি, দোয়েল, বেনেবৌ, কুটুরে পেঁচা, গো-শালিক, কোকিল, কাক, টিয়া, ঘুঘু, বক, চড়ুই, মুনিয়া, মাছরাঙাসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখিরাই এখানে নিয়মিত আসত।
পাখিদের কিচির-মিচির কলরবে মুখর বরিশাল শহরের অন্যতম সৌন্দর্য পরিসর বিবিরপুকুরের পূর্বপাড়ের পাখির অভয়স্থল নানাভাবেই এখন হুমকির মুখে। বরিশালের পলাশপুর ৫নং ওয়ার্ড এর কাজির গোরস্তানের পাশের একটি বাড়িও সন্ধ্যা হলেই পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে। বাড়িটি এছাড়াও বরিশালের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর অতিথি পাখি আসতে দেখা গেছে।
এর মধ্যে বালি হাঁস, পান কৌরি, সাঁদা বকসহ নাম না জানা বিদেশি অনেক পাখির আগমন ঘটেছে বরিশাল নগরীতে। বিবিরপুকুর পাড়ে অতিথি পাখিদের নজরকারা দৃশ্য উপভোগ করতে অনেক পথচারি কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে পরছেন। সুন্দর সাদা পাখিগুলোর ছবি তুলে প্রিয়জনকে পাঠাচ্ছেন।
আবার কেউ এই ছবিগুলো ফেসবুকে দিয়ে একে অপরকে জানান দিচ্ছেন। শীতের আগমনের সাথে সাথে অতিথি পাখির আসা যেন প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক নিয়ম। গত এক যুগের ব্যবধানে বরিশালে অতিথি পাখির হার আগমন এই বছর অনেক বেশি।
বরিশাল সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (গোপনীয় শাখা/ শিক্ষা ও কল্যাণ) সুব্রত বিশ্বাস দাস বলেন, অতিথি পাখি কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো জনসচেতনতার অভাব। শিকারিরাও এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবহিত নয়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী পাখি শিকার, হত্যা, আটক ও ক্রয়-বিক্রয় দনীয় অপরাধ।
যার শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা। আর আমরা যার যার অবস্থান থেকেই পারি, এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে। অতিথি পাখিদের জন্য একটু ভালোবাসা আর একটু সচেতনতাই পারে আমাদের দেশ বরিশালসহ পুরো বরিশালে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত করে রাখতে আমাদের সকালের এক হয়ে কাজ করতে হবে।