সমুদ্রের তলদেশে উষ্ণতায় মরছে প্রবাল, ভারসাম্য রক্ষায় নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করছে বিজ্ঞানী
সমুদ্রগর্ভে উষ্ণতার আঁচ, তাপমাত্রা বাড়ছে জলের নিচেও। সেই উষ্ণতা একে একে কেড়ে নিচ্ছে সমুদ্রের তলদেশে সম্পদ প্রবাল দ্বীপের (Coral Reef) প্রাণ। এভাবে গত কয়েক বছরে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারনে বিলীন হয়ে গেছে প্রবাল-প্রাচীর সহ সাগরের তলদেশের জীববৈচিত্র্যের অনেক বড় একটা অংশ।
কিন্তু এগুলো বাঁচাতে না পারলে জগতের ভারসাম্য রক্ষা করা দায়। সেজন্য এই প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচাতে নতুন প্রযুক্তির সাহায্য নিতে চলেছেন বিশেষজ্ঞরা। যার আভিধানিক নাম – ওশেন শট (Ocean-Shot)।
কীভাবে কাজ করবে এই প্রযুক্তি? বিজ্ঞানীরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন, যেসব প্রবালের সারি ইতিমধ্যেই মৃত, তাদেরকে কাজে লাগানো হবে এই প্রযুক্তিতে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অ্যান্টিগা ও বারবুডা বরাবর প্রায় ১ হেক্টর জায়গা জুড়ে কাজ করবে এই ওশেন-শট (Ocean-Shot)।
মৃত প্রবালদের দিয়ে একেকটি মডিউল তৈরি করা হবে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে সমুদ্রের তলদেশের জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদদের রক্ষা করবে। বিশেষত, ঝঞ্ঝা এবং সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি থেকে আগলে রাখবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের নেপথ্যে রয়েছেন, মার্কিন শিল্পপতি জন পল।
তাঁর আর্থিক সহযোগিতায় কাজ করবেন সমুদ্র বিজ্ঞানী, ডেবোরা ব্রসনন। তিনি জানিয়েছেন, ওশেন-শট প্রকল্প বাস্তবায়নের এটাই সঠিক সময়। কারণ, এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক কোরাল রিফ (Coral Reef) মৃত। বাকি অর্ধেক ঝুঁকিতে আছে।
বাস্তবত, ঘনঘন হারিকেন ও টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমুদ্রের তলদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বড় একটা কারণ। সেজন্য কোরাল ব্লিচিং (Coral Bleaching) অর্থাৎ জলের মধ্যে অম্লপদার্থ মিশে প্রবাল দ্বীপের রঙিন চেহারা কেড়ে নিয়ে ফ্যাকাশে করে তোলে।
এমনই ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সমুদ্রবিজ্ঞানী ডেবোরা ব্রসনন বলেন, সমুদ্রের জলে এই অম্ল মিশ্রণের সম্ভাবনা যত কমানো যায়, ততই সমুদ্রের জীবমহল ভালভাবে থাকতে পারে।
সমুদ্রের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ২৫ শতাংশই নির্ভর করে প্রবাল দ্বীপের উপর। ধীরে ধীরে তাদের মৃত্যুতে মাছ, লবস্টার ও ছোট কচ্ছপের মতো প্রাণীরা বিপন্ন হতে থাকে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুমুখে ঢলে পড়ে তাঁরা। শুধু তাই নয়, এভাবে জলতলের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হতে থাকলে সেটা সমুদ্র পর্যটনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
প্রাকৃতিক জ্বালানিও দিন দিন দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়বে। যা পুরো বিশ্বের কাছেই সংকটজনক। তাই অতিসত্তর প্রবাল দ্বীপকে চাঙ্গা করে তোলার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর জলভাগকে সুরক্ষিত রাখতে হবে বলে মনে করেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা।
ব্রসনন বলেন, আপাতত ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে কাজ শুরু করবে ওশেন-শট। তার সাফল্যের পরিপেক্ষিতে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদদের উপর এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে।