33 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
বিকাল ৫:১৯ | ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বদা সচেতন থাকতে হবে
পরিবেশ বিশ্লেষন

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বদা সচেতন থাকতে হবে

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বদা সচেতন থাকতে হবে

১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস। বর্তমানে পৃথিবীতে এখন প্রকৃতির দুর্যোগ যেন নিত্যসঙ্গী। এরপরও থেমে নেই পরিবেশদূষণ। থেমে নেই অস্ত্র প্রতিযোগিতা। বাদ নেই মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডলের সব স্তরের ফাটল ধরানো।

জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়া-সংক্রান্ত দুর্যোগের ঘটনার পরিমাণ ও তীব্রতা বাড়ছে। ফলে পৃথিবীজুড়ে এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা চলছে। কোথাও ঝড়, কোথাও বন্যা, কোথাও খরা, কোথাও দাবানল, কোথাও শৈত্যপ্রবাহ—লেগেই আছে। প্রকৃতির দোষ দিয়ে অবশ্য লাভ নেই।



কারণ, মানুষেরই অপকর্মের জের টানছে প্রকৃতি। মানুষ প্রকৃতিবিরোধী কাজ করে। প্রকৃতিও ফুঁসতে থাকে সম্পদ ও ভারসাম্য হারানোর ক্ষোভে। ফুঁসতে ফুঁসতে একসময় রুদ্ররোষে থাবা মেরে বসে। লন্ডভন্ড করে দেয় জনপদ।

প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট যেসব ঘটনা বা চরম পরিস্থিতি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, ধনসম্পদ ও পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে বা জীবনহানি ঘটায়, তাকে দুর্যোগ বলে। ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সুনামি, খরা, অতিবৃষ্টি, দাবানল, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, মহামারি, দুর্ভিক্ষ মানবসমাজসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।

এতে অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিরূপ প্রভাব পড়ে। দুর্যোগ উন্নয়নের অগ্রগতি, পরিকল্পনা আর বিনিয়োগকেও প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত তৈরি হয়।

প্রতিদিন হাজারো মানুষ এসব দুর্যোগের জন্য তাদের সব হারিয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। তার মধ্যে আবার সীমিত আয়ের দেশগুলো দুর্যোগের কারণেই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।

সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’-এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। বড় বড় উন্নত দেশ যারা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির বিপক্ষে কথা বলছে, তারাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে এই জ্বালানি। এতে ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বেড়েই চলেছে।

ক্ষয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর রক্ষাকবচ ওজোনস্তর। বাড়ছে খরা, দাবানল, অতিবৃষ্টি, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও শৈত্যপ্রবাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যার মাশুল গুনতে গিয়ে বিপন্ন জীববৈচিত্র্য। হুমকির মুখে বাস্তুসংস্থান। কারও যেন কিচ্ছু করার নেই, আমরা যেন পৃথিবীর ক্ষয় দেখার নীরব দর্শক।

তথ্য অনুসারে ২০১৬ সালে দুর্যোগের ভয়াবহতার দিক থেকে ১৭১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের উন্নতির প্রশংসা করেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস সোসাইটি এশিয়া প্যাসিফিকের হেড অব অপারেশন মার্টিন ফলার।

তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বড় বড় সুযোগ এসে অনেক ক্ষয় ক্ষতি করেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু দুর্যোগের বর্ণনা দেখলে বোঝা যায়। যেমন ১৯৮৮ সালের বন্যায় প্রায় এক কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০৭ সালে দেশে বন্যায় ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় সোয়া কোটি মানুষ।

খেতের ফসল, বাড়িঘর, গবাদিপশু, গাছপালা—সবই ধ্বংস হয়ে যায়। ভেঙে পড়ে দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম কক্সবাজার সমুদ্র-উপকূলে প্রাণ হারায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ। ২০১৭ সালের বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকিসূচক অনুযায়ী, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশ্বে ষষ্ঠ।

বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩২০ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ২ শতাংশ।

অন্যদিকে এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের অন্য এক তথ্যে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি দুর্যোগের শিকার হওয়া ১০ দেশের ৮টিই এশিয়ার এবং বিগত ২০ বছরে দুর্যোগে প্রাণহানির সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। এ ছাড়া ক্ষতি ২ লাখ ৯৭ হাজার কোটি ডলার। চলতি শতকের ২০ বছরে বিশ্বের যে ১০টি দেশ সবচেয়ে বেশি দুর্যোগ-আক্রান্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নবম।

এ সময়ে বাংলাদেশের ১১ কোটি ২০ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে দুর্যোগের শিকার হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০ বছরের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে ২০০২ সালে।

ওই বছর ৬৫ কোটি ৮০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়। ২০১৫ সালে ৪৩ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। গড়ে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ২০ কোটি মানুষ দুর্যোগের কবলে পড়ে। মারা যায় ৬০ হাজার মানুষ।



জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্বের সরাসরি অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৯০৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চরম আবহাওয়া-সংক্রান্ত দুর্যোগের কারণে ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ২৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ক্ষতির ৭৭ শতাংশ।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে জলবায়ু-সম্পর্কিত এবং জিওফিজিক্যাল বিপর্যয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের। আহত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৪৪০ কোটি মানুষ।

সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় হয়েছে ভূমিকম্প ও ভূমিকম্প-পরবর্তী সুনামির জন্য। কিন্তু এত সব বিপর্যয়ের পরও বিশ্ব বড় বড় দেশ এখনো কোনো পরিবেশ রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে একটি দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই আরেকটি দুর্যোগ হানা দেয়। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, ভূমিধস ও হিমবাহ ধসের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা দুর্যোগের শিকার দক্ষিণ এশিয়া।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা আর মাত্র ১ দশমিক ৫ বাড়লে আমাদের এই অঞ্চলের বিপদ বেড়ে যাবে বহুগুণ। ফলে দুর্যোগ মোকাবিলায় আঞ্চলিক সক্ষমতা বাড়ানোসহ বিশ্বের দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং এ–সংক্রান্ত সচেতনতা তৈরিতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।

আমাদের নিজেদের স্বার্থেই জলবায়ু মোকাবিলায় আরও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে এবং উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে তাদের কার্বন নিঃসরণের দায়ে আমাদের ক্ষতিপূরণ তথা জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুত অনুদানের অর্থ আদায়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

সব দেশ একসঙ্গে মিলে নিজেদের সৃষ্ট বিপর্যয় থেকে মানুষকে রক্ষা করার পথে এগিয়ে না এলে মানবজাতিকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হতে পারে। তাই পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত