পূর্ব কলকাতার জলাভূমিকে রক্ষা করতে পরিবেশ দপ্তরের ১২০ কোটি টাকার প্রকল্প
পূর্ব কলকাতার (Kolkata) জলাভূমিকে রক্ষা করতে না পারলে শহরে পানির সংকট তৈরি হবে। নষ্ট হয়ে যাবে প্রাকৃতিক সম্পদ। সেজন্য এই জলাভূমিকে বাঁচাতে ১২০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন রাজ্য পরিবেশ দপ্তর।
পাশাপাশি প্রকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করা যায় সে পরিকল্পনাও নেওয়া হল বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিন। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃতি সহায়ক’।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ ভবনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী রত্না দে নাগ বলেন, পরিবেশ দূষণ একটি বিরাট সমস্যা। একা কেউ এর মোকাবিলা করতে পারে না। আমাদের প্রত্যেকের সচেতন হতে হবে।
বনাঞ্চল, মাটি ও জলাভূমি আমাদের রক্ষা করতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি কলকাতার ফুসফুস হিসাবে কাজ করছে। তাই তাকে রক্ষা আমাদেরই করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের গাছ কেটে ফেলা ও প্ল্যাস্টিকের ব্যবহারই যে করোনা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে সেকথাও স্মরণ করিয়ে দেন মন্ত্রী।
বলেন আরো বলেন, ‘আমি উদ্বিগ্ন। অতিমাত্রায় বন ধ্বংস ও প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করেছে। এটা করোনার বংশ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এটা আমাদের যেভাবেই হোক রুখতে হবে।’
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে, দূষণ নিয়ন্ত্রনে সাধারণ মানুষের কী কী করা উচিৎ সেকথা তুলে ধরেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব বিবেক কুমার বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে চ্যালেঞ্জ করলে কী বড় ধরনের বিপদ হতে পারে এই করোনা ভাইরাস আমাদেরকে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা কীভাবে বেড়েছে। অথচ যে গাছ আমাদের সারা
জীবন অক্সিজেন দেয়, সেটা কাটার কথা ভাবি। সেটা করলে হবে না, গাছ লাগানোর কথা আমাদের ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে পরিবেশ বাঁচলে আমরা বাঁচবো। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, আমফানের কারনে প্রচুর গাছ পড়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি কাঁটিয়ে উঠতে গত চার মাসে ১৭ হাজার গাছের চারা বৃহত্তর কলকাতা এলাকায় লাগানো হয়েছে।
পূর্ব কলকাতার জলাভূমি রক্ষায় পরিবেশ দফতরের কী পরিকল্পনা রয়েছে সেকথাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, পূর্ব কলকাতার জলাভূমি পরিবেশের সম্পদ, এটাকে আমরা শহরের ফুসফুস এবং কিডনি বলতে পারি। এই সম্পদকে আমরা কীভাবে রক্ষা করবো তার ৫ বছরের পরিকল্পনা তৈরি করেছি। ১২০ কোটি টাকার পরিকল্পনা।
এর মধ্যে ৫টি বিষয় আছে। কেউ এই জলাভূমিকে আক্রমন করলে কীভাবে আটকাবে, এটা আইনগত দিক। তাছাড়া যাঁরা মৎস্যচাষ বা কৃষি কাজ করছে এই জলাভূমিকে কেন্দ্র করে তাদের অর্গানিক উপায়ে কী করে কাজ করাতে পারি তা দেখা হবে, রিসার্চ করা হবে। তাছাড়া দিঘা এবং সুন্দরবনের জন্য কোস্টাল জোনাল ম্যানেজমেন্ট পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। সেই মতোই কাজ হবে।
এর পাশাপাশি যশের ক্ষতি পূরণ করতে ও প্রকৃতির ধ্বংসলীলা থেকে প্রকৃতিকে রক্ষা করতে প্রকৃতিকেই কাজে লাগানোর কথা বলেন তিনি। সেই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃতি সহায়ক’। তিনি আরো জানান, আমফানের পর সুন্দরবনে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ চারা লাগানো হয়েছে।
দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রের ঢেউ এবং হাওয়া ইত্যাদি থেকে কিভাবে প্রাকৃতিকে রক্ষা করা যায় সেকারনে একটা এক্সপার্ট কমিটি তৈরি হয়েছে। প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করা যায়, এই কমিটি সেই রিপোর্ট দেবে। সেই মতো কাজ করা হবে।