প্রায় ৬ হাজার কাঁকড়া প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিদিন বাইকচাপায়
পর্যটন মৌসুমে সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে চলাচল করা মোটরবাইকের চাপায় প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার কাঁকড়ার মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের প্রভাবে প্লাস্টিক দূষণ এবং পশুপাখি বিলীন হয়ে সৈকতটি তার পরিবেশগত সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলছে।
এমনই সব তথ্য উঠে এসেছে সমুদ্র পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন মেরিন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে। এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি।
সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ সোহেলের সভাপতিত্বে এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুহাম্মদ আনোয়ারুল হকের সঞ্চালনায় প্রতিবেদনটি পাঠ করেন সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, কেফায়েত শাকিল।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পর্যটন মৌসুমে কুয়াকাটায় প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করে। তবে এসব পর্যটকদের ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর কোনো সুব্যবস্থা নেই। যার কারণে প্রতিদিন এই সৈকতে পর্যটকদের ফেলা প্লাস্টিকের ৯০ শতাংশই চলে যাচ্ছে সমুদ্রে। এর কারণে সমুদ্রের প্রতিবেশ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে।
পর্যটন মৌসুমে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে প্রতিদিন অন্তত ২০০টি মোটরবাইক চলাচল করে। যার প্রতিটির দৈনিক আয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব মোটরবাইক দিনে অন্তত দুই থেকে তিনবার সৈকত হয়ে কাঁকড়ার দ্বীপে যায়।
পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রতিবার একটি মোটরসাইকেলের চাপায় অন্তত দশটি করে কাঁকড়ার মৃত্যু হয়। হিসাব করে দেখা যায়, বাইকচাপায় প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার কাঁকড়ার মৃত্যু হয়। কুয়াকাটায় বন ধংস ও বেদখল এবং ভাঙনে বসতি হারানো এবং মৎস্য সম্পদের হুমকির তথ্যও উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন বন্ধ ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের জন্য কয়েকটি সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সৈকত এলাকায় প্লাস্টিক মোড়কজাত পণ্য নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গড়ে ওঠা টং দোকান উচ্ছেদ করে সৈকতকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, আবর্জনা পরিষ্কার করা, সৈকতে ফুটবল খেলা নিয়ন্ত্রণ ও পর্যটকদের সচেতন করতে একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করে নিয়োগ করা, পুরো সমুদ্র সৈকত এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সৈকত এলাকায় উচ্চস্বরে বাদ্য বাজানো বন্ধ করা ও লাল কাঁকড়া সংরক্ষণে পর্যটক নিয়ন্ত্রণসহ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কুয়াকাটাকে দ্রুত ইসিএ এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা ইত্যাদি।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংস্থা- আইইউসিএন’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার, ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. জাহাঙ্গীর আলম, সেভ আওয়ার সির পরিচালক এসএম আতিকুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ নাথ, চাইনিজ একাডেমি অব সাইন্স-এর বন্যপ্রাণী গবেষক ডা নাছির উদ্দীন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুখলেসুর রহমান, সবুজ আন্দোলনের চেয়ারম্যান বাপ্পী সরদার, সেঞ্চুরি রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমজিআর নাসির উদ্দিন মজুমদার ও কুয়াকাটা প্রেসক্লাব সভাপতি নসির উদ্দিন বিপ্লব প্রমুখ।