পানির জন্য হাহাকার নদীমাতৃক বাংলাদেশে
নদীমাতৃক বাংলাদেশ আজ মরুকরণের প্রক্রিয়ায়। পানির জন্য হাহাকার। মানুষ পানির জন্য আত্মহত্যা করছে। ফারাক্কা বাঁধ মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাঁধ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের।
এই বাঁধ দেওয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক সব আইনকে ভঙ্গ করে। ২০২৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এরপর পদ্মার পানি নিয়ে আর কোনো অসমতার চুক্তি করতে দেওয়া হবে না।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। গঙ্গা (পদ্মা) নিয়ে আর কোনো অসম চুক্তি নয়, সমতার ভিত্তিতে সব অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন, রাজশাহী শাখা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলমের সভাপতিতে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি ও নদী–গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন বাপার সভাপতি মো. জামাত খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহমুদ জামাল কাদেরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক আলফাজ হোসেন, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান, ছাত্র ফেডারেশন নেতা মহব্বত হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ভারত তাঁদের স্বার্থের জন্য সব আইনকানুন উপেক্ষা করে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করেছিল। তখনই ধারণা করা হয়েছিল, এই বাঁধ বাংলাদেশের নদ-নদীর জন্য হুমকিস্বরূপ। বিষয়টি বুঝতে পেরে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ফারাক্কা লংমার্চ করেছিলেন। পদ্মার পানি অপসারণের প্রতিবাদ করেছিলেন।
পরে একাধিক সরকার একাধিক চুক্তি করে। কিন্তু কোনোটিই বাংলাদেশের জন্য সুখকর ছিল না। ২০২৬ সালে ১৯৯৬ সালের করা গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এবার আর আগের মতো চুক্তি করতে দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) রাজশাহীর সভাপতি মো. জামাত খান বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। খাল–বিল, নদীনালা শুকিয়ে গেছে। ফারাক্কা বাঁধ এই অবস্থা সৃষ্টি করেছে। আজ কৃষকের মুখে হাসি নেই। তাঁরা পানির অভাবে ফসল ফলাতে পারছেন না। পানির জন্য আত্মহত্যা করছেন।
পৃথিবীতে এমন দেশ নেই যেখানকার কৃষক এভাবে মরেন। ২০২৬ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এই ফারাক্কার দিকে বাংলাদেশের মানুষকে দৃষ্টি দিতে হবে। পানি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব না। তখন বড় বড় কথা বলে কোনো লাভ হবে না। তাই এই বিষয়ে এখন থেকেই কথা বলা দরকার।’
নদী–গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, পৃথিবীতে নদ-নদীর সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশ অষ্টম। সংখ্যার দিক দিয়ে দূরে থাকলেও বাংলাদেশ কিন্তু নদীমাতৃক দেশ হিসেবে স্বীকৃত।
অথচ কয়েক বছর ধরে চলছে পানির হাহাকার। গঙ্গা ও পদ্মা নদীর অববাহিকায় আট কোটি মানুষ বিরূপ প্রভাবে বিপর্যস্ত। তাঁরা এক মহাবিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকৃতি, নদী না থাকলে তাঁরাও থাকবে না। আন্তর্জাতিক আইনকে তোয়াক্কা না করে ভারত নদীগুলো শাসন করছে। ভারত যেভাবে চাইছে, করছে। আজ ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মায় পানি নেই।’