পাখিদের জন্য গাছে আবাসস্থল
দেশে জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে পরিবেশবান্ধব দেশজ ও পুরোনো গাছ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। গাছগাছালি কমে যাওয়ায় কমেছে স্থানীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখির আবাসস্থল।
এতে ব্যাহত হচ্ছে পাখির স্বাভাবিক প্রজননব্যবস্থা। এ অবস্থায় পাখিদের জন্য ‘ভালোবাসার নীড়’ নামে কিছু করার কথা ভাবেন মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমান ও অনলাইন পোর্টাল আই নিউজের সম্পাদক মৌলভীবাজারের হাসানাত কামাল। তাঁদের এ উদ্যোগের সঙ্গে শামিল হন তরুণ উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী জাহেদ আহমদ চৌধুরী।
ভালোবাসার নীড়ের উদ্যোক্তারা এই পরিকল্পনা হাতে নেন প্রায় দুই বছর আগে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সেই কাজে হাত দিয়েছেন তাঁরা। পাখিদের জন্য গাছে গাছে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে ভালোবাসার নীড় নামে মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল। পাখিদের আপন ভুবনে ফিরিয়ে আনতেই তাঁদের এমন উদ্যোগ।
পরিকল্পনামাফিক মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়-সংলগ্ন গাছগাছালিতে পাখিদের জন্য হাঁড়ি-পাতিল বসানো হয়েছে। পাখিপ্রেমের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে তাঁদের এই কার্যক্রম।
সোমবার শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কের (সাবেক সেন্ট্রাল রোড) অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কার্যালয়ের প্রবেশফটকের দুই পাশে দুটি সাইনবোর্ড ঝুলছে। সেখানে লেখা, পাখির জন্য ভালোবাসার নীড়।
এতে আহ্বান জানানো হয়েছে, ‘আসুন সবাই মিলে পাখিদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলি।’ ওই এলাকায় আম, মেহগনি, লিচু, অর্জুনসহ বিভিন্ন ধরনের গাছগাছালি আছে। ওই গাছগাছালিতে পাখিদের বাসস্থানের জন্য বাঁধা হয়েছে মাটির হাঁড়ি।
ভালোবাসার নীড় উদ্যোক্তাদের একজন মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, রাজশাহীর একটি গ্রামে পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখেছিলেন। সেখানে হাজারো পাখির বাস।
বিষয়টি তাঁকে আলোড়িত করে। সেটা দেখেই পাখির জন্য অভয়ারণ্যের মতো কিছু করার ইচ্ছা জাগে তাঁর। উদ্যোক্তাদের আরেকজন অনলাইন পোর্টাল আই নিউজের সম্পাদক হাসানাত কামাল ঝড়-তুফানে পাখির বাসা ভেঙে পড়ার দৃশ্য দেখেছেন। বৃষ্টি-বাদলে পাখির ছানা মাটিতে পড়ে মারা যায়।
আহত ও বিপন্ন পাখির ছানাদের উদ্ধার করা হলেও তাদের বাঁচানো যায় না। তিনিও পাখিদের জন্য প্রকৃতির মধ্যেই স্থায়ী বাসার মতো কিছু তৈরি করা যায় কি না, ভাবেন। দুজনের ভাবনা মিলে যাওয়ায় কীভাবে সেটি বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেন তাঁরা।
উদ্যোক্তারা জানান, পাখিদের জন্য কিছু করতে তাঁরা পরিকল্পনা শুরু করেন। এ নিয়ে বন্য প্রাণী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা পরিচিত লোকজনের সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু তত দিনে দেশে করোনা মহামারি জেঁকে বসে।
স্থবির হয়ে পড়ে সবকিছু। সম্প্রতি সংক্রমণ কমে আসায় সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তাই তাঁরা আবার কাজে হাত দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃষ্টির পানি জমে না, এমন ছিদ্রযুক্ত মাটির পাতিল সংগ্রহ করেন।
প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়-সংলগ্ন গাছগাছালিতে ২০টি হাঁড়ি-পাতিল বসানো হয়। সেখানে বিভিন্ন ধরনের পাখিদের আনাগোনা আছে। তাঁদের উদ্দেশ্য, শালিক, ঘুঘু, বুলবুলি, চড়ুই, টুনটুনি, দোয়েল, ফিঙেসহ স্থানীয় জাতের পাখিদের রক্ষা করা। যেগুলো বড় হয়ে প্রকৃতি-পরিবেশকে সমৃদ্ধ করবে।