34 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ১০:৩৮ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
সংকটাপন্ন অবস্থায় বাংলাদেশের প্রাণী জগত
প্রাণী বৈচিত্র্য

সংকটাপন্ন অবস্থায় বাংলাদেশের প্রাণী জগত

সংকটাপন্ন অবস্থায় বাংলাদেশের প্রাণী জগত

খাদ্য ও বাসস্থানের সংকট, বন উজাড় করা, অপরিকল্পিত নগরায়নের মতো নানা কারণে প্রতি বছরই পৃথিবী থেকে কোনো না কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশে প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার এই হার আশঙ্কাজনকভাবে বেশি।

প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএনের ২০১৫ সালের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা ৩১টি। বাংলাদেশ নিয়ে এই সংস্থার ২০০০ সালের প্রতিবেদনে সংখ্যাটি ছিল ১৩।

অর্থাৎ ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে আঞ্চলিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অন্তত ১৬টি প্রজাতির প্রাণী।



আইইউসিএন তাদের ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী বলছে বাংলাদেশে ১৬০০-এর বেশি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৯০টি প্রজাতিই বিলুপ্তির হুমকির মুখে রয়েছে। এই প্রজাতিগুলোকে আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে।

এই ১৬০০ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে ৫০টিরও বেশি প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে চিহ্নিত করেছে আইইউসিএন।

হাতি

বাংলাদেশে যে প্রজাতির হাতি দেখতে পাওয়া যায় সেটিকে এশিয়ান এলিফ্যান্ট বলা হয় যার বৈজ্ঞানিক নাম এলিফাস ম্যাক্সিমাস। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও ময়মনসিংহের পাহাড়ি অঞ্চলে এই হাতি পাওয়া যায়।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের হিসেবে, পৃথিবীতে এই ধরনের হাতির সংখ্যা বর্তমানে ২০ থেকে ৪০ হাজার। তারা বলছে গত ৭৫ বছরে এই প্রজাতির হাতির সংখ্যা প্রায় ৫০ ভাগ কমেছে।

আইইউসিএনের হিসেব মতে এই ধরনের হাতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমারসহ ১৩টি দেশে রয়েছে। সংস্থাটির তালিকা অনুযায়ী বিশ্বে এই প্রাণীটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত হলেও বাংলাদেশে এটি ‘চরম সংকটাপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে।

আইইউসিএন তাদের ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে জানায় যে বাংলাদেশের বনাঞ্চলে ২৮৬টি এবং বন বিভাগের নিয়ন্ত্রাণাধীন চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কে আরো ৯৬টি হাতি রয়েছে।



তবে এই সংখ্যা গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। শুধু ২০২১ সালেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩০টির বেশি হাতি মারা হয়েছে বলে গত বছর এক সংবাদ সম্মেলনে জানায় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর জোট ‘বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট।’

তারা বলছে বাংলাদেশে বনাঞ্চলে হাতির সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২০০।

হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়া, হাতি চলাচলের পথে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি হাতি সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ না নেয়া হাতির সংখ্যা কমে আসার বড় কারণ মনে করা হয়।

চিতা বাঘ

সারা বিশ্বে বিপন্ন বা সংকটাপন্ন না হলেও বাংলাদেশে চিতা বাঘকে চরম সংকটাপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইইউসিএন।

পরিবেশবিদরা বলছেন, একসময় শহরের আশেপাশেও চিতা বাঘ দেখা যেত যার সংখ্যা কমতে কমতে এখন এই প্রাণীটি চরম সংকটাপন্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

‘আপনি পুলিশ অথবা মেডিকেল রেকর্ডে খোঁজ নিলে দেখবেন যে ৪০-৫০ বছর আগেও চিতাবাঘের আক্রমণে মানুষ আহত বা নিহত হওয়ার খবর রয়েছে। কিন্তু এখন জঙ্গলেও চিতা বাঘের দেখা পাওয়া দুষ্কর,’ বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম।

বাংলাদেশে যে ধরনের চিতা বাঘ পাওয়া যায় সেটিকে ইন্ডিয়ান লেপার্ড বলা হয়, যার বৈজ্ঞানিক নাম প্যান্থেরা পার্ডাস। বাংলাদেশসহ পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভূটানে এই ধরনের চিতা বাঘ দেখা যায়।



ভারতের বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভারতে এই ধরনের চিতার সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। অন্যদিকে বাংলাদেশে এর সঠিক সংখ্যাই জানা যায় না।

বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর ২০২১ সালের অনুমান অনুযায়ী বাংলাদেশে চিতার সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০টি। দক্ষিণাঞ্চলের পার্বত্য এলাকাগুলোর পাশাপাশি লালমনিরহাট, শেরপুর, কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলেও চিতা বাঘ দেখতে পাওয়া যায়।

উল্লুক

চার দশক আগেও বাংলাদেশের বনে প্রায় তিন হাজারের মত উল্লুক বা ওয়েস্টার্ন হুলক গিবন ছিল। ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় সেই সংখ্যা এখন নেমে এসেছে ২০০ থেকে ৩০০-তে।

বৈজ্ঞানিকভাবে হুলক হুলক নামে পরিচিত এই প্রাণীটির আবাস শুধু বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারেই। ইউএস ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের অর্থায়নে করা ঐ গবেষণায় দেখা যায় যে চট্টগ্রাম ও সিলেটের বনাঞ্চলে উল্লুকের উপস্থিতি রয়েছে।

গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে এই প্রজাতির ২৬০০ উল্লুক রয়েছে, যার বেশিরভাগই আসামে। মিয়ানমারে কিছু রয়েছে, যার সংখ্যা পরিষ্কারভাবে জানা যায় না।



বাংলাদেশে রয়েছে দুই থেকে তিনশোর মতো উল্লুক। চার দশক আগেও বাংলাদেশের বনে প্রায় তিন হাজারের মত উল্লুক বা ওয়েস্টার্ন হুলক গিবন ছিল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং ঐ গবেষণার প্রধান গবেষক হাবিবুন নাহার বলছেন, ‘এর আগে উল্লুক ছিল, এরকম উখিয়া, সাজেক ভ্যালি, চুনাতির মতো কয়েকটি বন থেকে এই প্রাণীটি হারিয়ে গেছে। আবার কিছু সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রাণীটির সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।’

তিনি বলছেন, বনাঞ্চলে বড় বড় গাছ কেটে ফেলা, খাদ্য সংকট, অবৈধভাবে উল্লুক শিকারের কারণে বনগুলো থেকে এই প্রাণীর সংখ্যা কমছে।

‘উল্লুক যেহেতু বড় বড় গাছের মগডালে থাকে, লাফ দিয়ে যাতায়াত করে। সেখানে এরকম গাছ কেটে ফেলা হলে তাদের বাসস্থানের পরিবেশে নষ্ট হয় যায়, চলাফেরা সীমিত হয়ে যায়।



আবার তারা যেসব খাবার খায়, সেই গাছগুলো কেটে ফেলা হলে খাবারের জন্যও সংকট তৈরি হয়। ফলে অনেক বন থেকে প্রাণীটি হারিয়ে গেছে,’ তিনি বলছেন।

অনেকে পোষার জন্য বেআইনিভাবে উল্লুক আটকে রাখে। কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এই প্রাণীটি খাবার হিসাবেও খায়।

ঘড়িয়াল

সত্তরের দশকেও বাংলাদেশ, ভারত সহ পাকিস্তানের সিন্ধু নদী, উত্তর নেপাল ও ভূটানের নদীতে অহরহ দেখা মিলতো ঘড়িয়ালের। ১৯৭৪ সালেও পৃথিবীতে ৫ থেকে ১০ হাজার ঘড়িয়াল ছিল বলে উঠে আসে গবেষণায়।

তবে নদী ও জলাশয় দখল, অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাছ ধরা ও শিকার করার প্রবণতার কারণে আশির দশকের শেষদিক থেকেই ঘড়িয়াল সারা বিশ্বে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হয় বলে জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান চিড়িয়াখানা।

আইইউসিএনের হিসেবে বর্তমানে ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল মিলে পৃথিবীতে মোট ২০০টির মত ঘড়িয়াল রয়েছে।



বাংলাদেশে ঘড়িয়ালের সংখ্যা সঠিকভাবে না জানা গেলেও আইইউসিএনের গবেষণা অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পদ্মা, যমুনা, মহানন্দা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে ৫৮ বার ঘড়িয়াল দেখা গেছে।

এগুলো ছাড়াও বনরুই, বনগরু, মেছো বাঘ, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন ধরনের ভোঁদড়, বানর, কচ্ছপ বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত