পরিবেশ রক্ষায় তিন বছরে ৫ হাজার গাছ রোপণ করেন জাফর উদ্দিন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন জাফর উদ্দিন মো. কমরু (৫৫)। ছুটির দিনে বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা লাগান ও পরিচর্যা করেন। নিজ এলাকায় অন্যান্য গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে রোপণ করেছেন প্রায় পাঁচ হাজার তালগাছ। শুধু তালগাছ নয়, পরিবেশ সুরক্ষায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করেন তিনি।
জানা গেছে, রাউজান উপজেলার ডাবুয়া ইউনিয়নের হিংগলা সড়ক, মুসা শাহ সড়ক ও শাহ নগর সড়কের দুই পাশে প্রায় চার কিলোমিটার সড়কে সারি সারি তালগাছের চারা। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সড়কের দুই পাশজুড়ে এসব তাল চারা লাগিয়েছেন জাফর উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে অন্তত পাঁচ হাজার তালবীজ সংগ্রহ করি। পরে সেগুলো সরকারি তিনটি সড়কের দুই পাশে রোপণ করি।
পাঁচ হাজার তালবীজ থেকে এখন সাড়ে তিন হাজারের মতো চারা হয়েছে। এসব চারাগাছ এখন বড় হচ্ছে। চাকরির পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ অন্যান্য বন্ধের দিনে তাল গাছের চারাসহ অন্যান্য গাছের পরিচর্যা করে থাকি। তবে এ পর্যন্ত কত চারা রোপণ করেছি তা আমার মনে নেই। তালগাছই রোপণ করেছি ৫ হাজারের বেশি।’
সুযোগ পেলেই বৃক্ষরোপণ করেন জাফর উদ্দিন। সরকারি কিংবা কারও ব্যক্তিগত জায়গায় হোক যেখানে খালি পান সেখানেই গাছ লাগান। তার মতে, জায়গা কার সেটা দেখার বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে গাছ লাগানো। নিজের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই এসব গাছের চারা রোপণ করছেন বলে জানান তিনি।
এসব তালবীজ কীভাবে সংগ্রহ করা হয়—জানতে চাইলে জাফর উদ্দিন বলেন, ‘রাউজান উপজেলা সদর ফকিরহাট বাজারে আমার একটি ফার্মেসি আছে। বাজারে বিভিন্ন ব্যক্তি তাল বিক্রি করতে আনতো।
তাদের কাছ থেকে এসব তাল কিনতাম না। তাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হয়, তারা বলে, অনেক তাল নষ্ট হয়ে গাছের নিচে পড়ে থাকে। এগুলো কোনও কাজে আসে না। আমি বলতাম এসব নষ্ট তাল আমার জন্য রেখো।
তখন তাদের ফোন নম্বর নিয়ে ২০০-৩০০ করে টাকা দিতাম। কয়দিন পর পর তাদের ফোন করে জানতে চাইতাম। কতটুকু তাল বীজ সংগ্রহ করেছে। এক বস্তা হলে আমি নিজেই সেখানে গিয়ে গাড়ি করে নিয়ে আনতাম। পরে এসব তাল বীজ নিজের হাতে সড়কের দুই পাশে রোপণ করতাম।’
রাউজান উপজেলার ডাবুয়া ইউনিয়নের মৃত হাজী আবদুল খালেকের ছেলে জাফর উদ্দিন। ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স এবং ১৯৮৮ সালে মার্কেটিং বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেন। ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে শাহজালাল হলের শাখা প্রধান হিসেবে তিনি কর্মরত।
জাফর উদ্দিন বলেন, ‘আমার কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৮০টি গাছের চারা রোপণ করেছি। এসব গাছে এখন ফলন হচ্ছে। ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় বিশ্ববিদ্যালয় দেড় বছর বন্ধ ছিল।
ওই সময়ে নিজের ১০ কানি জমিতে বিভিন্ন ফলের বাগান করি। এসব বাগানে ৫৫০টি মাল্টা, ২৫০টি দার্জেলিং কমলা, ৪০০টি আপেল বরই, ৫০০টি থাই পেয়ারা, ৮০০টি লেবু গাছের চারা রোপণ করি।
সাথী ফসল হিসেবে কলাগাছ, বারোমাসি বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে ও লাউচারা রোপণ করি। বর্তমানে অধিকাংশ ফলের চারায় ফলন দিচ্ছে। সড়কের পাঁচ হাজার তাল বীজ লাগানোর পাশাপাশি হিংগলা সড়কে প্রায় ৬০০টি আকাশমণি গাছ রোপণ করেছি।’
জাফর উদ্দিনের বিষয়ে হিংগলা ইউনিয়নের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, তিনি একজন গাছ পাগল মানুষ। অনেক বছর ধরে দেখছি সরকারি-বেসরকারি সব স্থানেই গাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন। সড়কের পাশে হাজার হাজার তালচারা, আকাশমণিসহ বিভিন্ন জাতের গাছ লাগিয়েছেন। এসব গাছ এখন বড় হচ্ছে।
রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন বলেন, ‘জাফর উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বেশ কিছু চারা রোপণ করেছেন শুনেছি। তবে তিনি কত চারা রোপণ করেছেন তা আমার জানা নেই। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সার-বীজ সরবরাহ করা হবে।’