পরিবেশের ক্ষতির অন্যতম কারন সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ
বাংলাদেশের প্রকৃতিতে প্রতিদিন ছড়িয়ে পড়ছে কমপক্ষে ১৯ কোটি ৫০ লাখ সিগারেট ও বিড়ির অবশিষ্টাংশ। তামাক শুকাতে (কিউরিং) অনেক গাছ কাটা হচ্ছে। তামাক শুকানো ও সিগারেট–বিড়ি খাওয়ার সময় সৃষ্ট ধোঁয়া থেকেও ঘটছে পরিবেশের দূষণ।
পরিবেশগত এ ক্ষতির আর্থিক মূল্য কত, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে এর হিসাব নেই। এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় পার পেয়ে যাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। সিগারেট–বিড়ির অবশিষ্টাংশ মাটি ও পানিতে গিয়ে মিশে গুরুত্বপূর্ণ অণুজীবগুলো ধ্বংস করে। এতে পানি ও মাটির ক্ষতি হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ‘টোব্যাকো: থ্রেট টু আওয়ার এনভায়রনমেন্ট’ প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের দেড় কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সিগারেট খান। বিড়ি খান ৫৩ লাখ মানুষ। আর ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন।
ডব্লিউএইচওর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১২ কোটি ৩০ লাখ সিগারেট খাওয়া হয়। সমপরিমাণ সিগারেটের ফিল্টার আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়। আর প্রতিদিন খাওয়া হয় ৭ কোটি ২০ লাখ বিড়ি, অর্থাৎ সমপরিমাণ অবিশষ্টাংশও আবর্জনা হিসেবে যেখানে–সেখানে ফেলা হচ্ছে। এই হিসাবে প্রতিদিন সিগারেট–বিড়ির সাড়ে ১৯ কোটি অবশিষ্টাংশ প্রকৃতিতে মিশছে।
সিগারেটের ফিল্টার দেখতে কাগজের মতো হলেও তা আসলে একধরনের প্লাস্টিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘সিগারেটের ফিল্টার সেলুলোজ অ্যাসিটেট ধরনের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এটি পচনযোগ্য, তবে এ জন্য দীর্ঘ সময় লাগে। ফিল্টারের সঙ্গে থাকে নিকোটিন, বেনজিন এবং ক্যাডমিয়াম ও আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু। সিগারেট ও বিড়ির অবশিষ্টাংশ মাটি ও পানিতে গিয়ে মিশে গুরুত্বপূর্ণ অণুজীবগুলো ধ্বংস করে। এতে পানি ও মাটির ক্ষতি হয়।’
সিগারেট-বিড়ির জ্বলন্ত অবশিষ্টাংশ দেশে অগ্নিকাণ্ডের তৃতীয় প্রধান কারণ বলে জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের পরিবেশগত ক্ষতির দিকও আছে।’ সিগারেট বা বিড়ি তৈরি হয় তামাকপাতা থেকে। এই পাতা শুকানো হয় চুল্লিতে (তন্দুর)। উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) হিসাব অনুযায়ী, এক মৌসুমে প্রতি তন্দুরের জন্য লাগে ২৪০ মণ কাঠ।
তামাকসংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তথ্যভান্ডার টোব্যাকো অ্যাটলাসের হিসাবে বাংলাদেশের ৩১ শতাংশ বন ধ্বংসের কারণ তামাক।
তামাকবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য ইউনিয়নের কারিগরি উপদেষ্টা সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘অন্তত দুটো ক্ষেত্রে সিগারেট-বিড়ি কোম্পানিগুলোর দায় আছে। সিগারেট-বিড়ির অবশিষ্টাংশ পরিবেশগত ক্ষতি করে, তামাকের জন্য কাঠ পোড়ানো বা বন উজাড়। অথচ এসব কোম্পানিই কৃষকদের আগাম অর্থ দিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে।’
পরিবেশদূষণের জন্য তামাক কোম্পানিগুলোকে এখন পর্যন্ত দায়বদ্ধতার মধ্যে আনতে পারেনি সরকার। জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (আইন) খোন্দকার মো. ফজলুল হক বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা তৈরি হচ্ছে। প্রথমবারের মতো সিগারেট-বিড়ির অবশিষ্টাংশ নিয়ন্ত্রণে দায় নিরূপণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মল বায়ু বিধিমালা তৈরি হচ্ছে, সেখানে তামাকের জন্য দূষণের দায় মেটাতে হবে কোম্পানিগুলোকে।’