এ বছর পদ্মার তীব্র স্রোতে ভিটেমাটি হারিয়ে কয়েকশ’ পরিবার এসে আশ্রয় নিয়েছে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের মূল ভূ-খণ্ডে। পৈত্রিক ভিটেমাটি হারানো এ সব পরিবারগুলোর সামনে হতাশা আর অনিশ্চয়তার হাহাকার ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই।
জানা গেছে, শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাগুরখণ্ড মৌজা। মূলত এ মৌজার তিনটি গ্রাম পদ্মা নদীবেষ্টিত একটি চরে আনুমানিক ১৯৩২ সালের দিকে গড়ে উঠেছিল।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আনুমানিক ১৯৩৮ সালের দিকে গ্রামটির প্রথম গোড়া পত্তন শুরু হয়। এরপর ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে পুরো মাগুরখণ্ড এলাকা পদ্মার গর্ভে চলে যায়।
এরপর প্রায় ৪/৫ বছর পানির নিচে থাকার পর চর জেগে ওঠে পদ্মার বুকে। ১৯৯৮ সালের দিকে ফের বসবাসের উপযোগী হয় চরটি। তখন স্থানীয় আলতাফ আকন, সালাম ফকির, দাদন বেপারীসহ কয়েকটি পরিবার প্রথম বাড়ি করে সেখানে। ৭.৫৮ বর্গ কিলোমিটার গ্রামটিতে এরপর একে একে ভাঙনের শিকার ওই পরিবারগুলো আবার বসবাস শুরু করে মাগুরখণ্ড এলাকায়। গড়ে উঠে জনবসতি। স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসে চরটিতে। গড়ে উঠে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, সড়ক।
এর প্রায় ২০ বছর পর ফের ভাঙন শুরু হয় পদ্মার চরের এই গ্রামটিতে। চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন শুরু হলে পুরো গ্রামটিই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর আগে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের দিকে মাগুরখণ্ড মৌজার অন্য দু’টি গ্রাম যথাক্রমে নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাগুরখণ্ড এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাট-বাজার, সড়কসহ প্রায় ৭৫০টি পরিবারের বসবাস ছিল।
চলতি বছর বর্ষার প্রথম দিকে ভাঙন শুরু হয়ে দ্বিতীয় দফার ভাঙনে পুরো গ্রামটিই বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে ভিটেমাটি হারিয়ে ওই পরিবারগুলো কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের মূল ভূ-খণ্ডে, কাওড়াকান্দি ঘাট সংলগ্ন এলাকা ও মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। তবে এদের সবাই অন্যের জমিতে সাময়িক সময়ের জন্য ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেছেন।
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার পদ্মাবেষ্টিত এক জনপদের নাম মাগুরখণ্ড। এ মাগুরখণ্ড মৌজার তিনটি গ্রাম। আইন উদ্দিন হাওলাদারের কান্দি, মুন্সী আব্দুল আজিজ ফকিরেরকান্দি ও হাজী মনসুর খাঁর কান্দি।উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের এ তিনটি গ্রাম ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত।বহু বছর আগে পদ্মার বুকে জেগে ওঠা মাগুরখণ্ড এলাকাটি আবার পদ্মার বুকেই বিলীন হয়ে গেছে। ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে এ বছর প্রায় পুরোপুরিভাবেই হারিয়ে গেছে গ্রাম তিনটি। পদ্মার তীব্র স্রোত এখন বয়ে যাচ্ছে হারিয়ে যাওয়া মাগুরখণ্ডের বুকের ওপর দিয়ে। সাক্ষী হিসেবে কয়েকটি গাছ ও সামান্য একটু ভূমি থাকলেও নেই কোনো বসতি। পদ্মার তীব্র স্রোতে এখন সেখানে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ভাঙনের শিকার মোমিন আকন বলেন, এবছর পুরো গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। কোনো চিহ্নই নেই। আমরা ৫ বছরের জন্য অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি।
হোসেন মাদবর বলেন, আমাদের স্থায়ী গন্তব্য কোথায় হবে জানা নেই। আবার চর জাগলে হয়তো গ্রামে ফিরে যেতে পারবো।
কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. মাহাবুব ফকির বলেন, মাগুরখণ্ড এলাকাটি ১ নম্বর ওয়ার্ডের। যার পুরোটাই এখন পদ্মার গর্ভে। আমার ভিটেমাটিও নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে এবার। কোথায় যাবে এই এলাকার বাসিন্দারা তার কোনো ঠিক ঠিকানা নাই। তবে আমাদের দাবি সরকারিভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলে অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে এই এলাকার মানুষ।