34 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ১২:০৬ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
নাজেহাল অবস্থা নগরবাসীর
বাংলাদেশ পরিবেশ

নাজেহাল অবস্থা নগরবাসীর

নাজেহাল অবস্থা নগরবাসীর

খোঁড়াখুঁড়ি, যানজট, মশার উপদ্রব ও ধুলা দূষণে ঢাকায় বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। চৈত্রের গরমে কর্মব্যস্ত মানুষ বাইরে বের হয়ে যানজট ও ধুলো দূষণে নাকাল হচ্ছেন। ঘরে বসেও মশা ও ধুলা দূষণ থেকে মুক্তি মিলছে না। সবমিলিয়ে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে নগরবাসীর।

স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া, রাজধানীজুড়ে অসমন্বিত উন্নয়ন খোঁড়াখুঁড়ি এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে যানজট ভয়াবহরূপ ধারণ করেছে। উন্নয়ন কাজের কারণে ধুলো তৈরি হলেও তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া, অসমন্বিত উন্নয়ন কাজ ও সঠিক উপায়ে দায়িত্ব পালন না করায় যানজট, খোঁড়াখুঁড়ি, মশা ও ধুলা দূষণ থেকে মুক্তি মিলছে না। রাজধানীবাসীর জীবনমানের উন্নয়ন ও দুর্ভোগ লাঘব করতে হলে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সঠিক পরিকল্পনার আলোকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



কিউলেক্স মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। মশা নিয়ন্ত্রণে বছরজুড়ে গবেষণা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার। এ সময়ে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে শীতের মধ্যে নর্দমা, জলাশয় ও আবর্জনা পরিষ্কার করার দরকার ছিল। কিন্তু, সেটা না করায় মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদরা। তাদের মতে, ৩২-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কিউলেক্স মশার বংশ বিস্তারের সহায়ক। এখন ঢাকার তাপমাত্রা কিউলেক্স মশার বংশ বিস্তারের উপযোগী অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের খুব বেশি কিছু করণীয় নেই।

মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের কাজটি বছরজুড়ে করা দরকার। আর এ কাজটি একটি নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় করা দরকার। যে কাজটি সিটি করপোরেশনের করার কোনো আগ্রহ দেখা যায় না।

জানা যায়, ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট ও কার্ভাড ড্রেন রয়েছে। যেগুলোতে দুই সিটি মশার ওষুধ ছিটাতে পারে না। পাশাপাশি প্লাস্টিক দ্রব্য সামগ্রী, পলিথিন, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আবর্জনায় ওই ড্রেনগুলো ভরাট থাকে। যে কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না।

জমাটবদ্ধ এসব পানিতে কিউলেক্স ভয়াবহরূপে বংশ বিস্তার করছেন। এসব স্থানে মশার প্রজনন ধ্বংস করতে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না। এছাড়াও জলাশয়, খাল, নর্দমা ও যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক দ্রব্য সামগ্রী ও ডাবের খোসার পানিতে ভয়াবহরূপে মশার বংশ বিস্তার ঘটাচ্ছে। মশক নিধনে দুই সিটির পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। তারপরও নগরবাসীকে মশার ধকল সইতে হবে কেন-এমন প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ৮৫ কোটি টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বরাদ্দ ২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকায় কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেড়েছে। রাজধানীতে বর্তমানে যেসব মশা দেখা যাচ্ছে এরমধ্যে ৯৮ ভাগই কিউলেক্স মশা। পানি শুকিয়ে ঘন হচ্ছে। এমন পরিবেশ কিউলেক্স মশার বংশ বিস্তারের জন্য সহায়ক। এখন ঢাকার জলাশয়গুলোতে সার্ভে করে দেখা গেছে মশার ঘনত্ব প্রায় ৬০ ভাগ। ঢাকার টেকসই মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বছরব্যাপী গবেষণা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, শপিংমলসহ সবকিছু এখন স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। সব শ্রেণির পাঠদান স্কুলে করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর যানজটের মাত্রা অনেকাংশে বেড়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা কেন্দ্রীয়করণের প্রভাবেও যানজটের মাত্রা বাড়ছে। যত্রতত্র অসমন্বিত খোঁড়াখুঁড়ি ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে ঢাকার যানজটের তীব্রতা বাড়ছে। চলতি সপ্তাহের যানজট ঢাকার জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বলা চলে যানজটের তীব্রতায় থমকে যাচ্ছে ঢাকার চাকা।



গত দুই সপ্তাহ ধরে দিনভর যানজট থমকে থাকছে রাজধানী। কর্মজীবী মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে রীতিমতো নাজেহাল হতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ প্রয়োজনে কোথাও রওয়ানা হয়ে দীর্ঘসময় যানজটে আটকে থেকে অনেকে আবার বাসায় ফিরে এসেছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, দীর্ঘসময় পর পুরোদমে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। যে কারণে সড়কে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের চাপ পড়েছে। দুই বছর পর এ ধরনের চাপ পড়ায় ট্রাফিক বিভাগকে সেটা ‘ম্যানেজ’ করতে বেগ পেতে হয়েছে। এটা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

এর বাইরে রাজধানীতে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার উন্নয়ন কাজের কারণে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। যেটা শহরের যানজট সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা পালন করছে। সার্বিক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে ট্রাফিক বিভাগ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে ঢাকার যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনতে আন্তঃসংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

কর্মব্যস্ত ঢাকাবাসীর দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বড় সময় কেটে যাচ্ছে সড়কে। সকাল থেকে শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত সড়কে যানজটের ধকল সইতে হচ্ছে। অসমন্বিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। মিরপুরের রূপনগর এলাকার প্রধান সড়কে বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য সড়ক খোঁড়া হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে ওই সড়কের অচলাবস্থা। বৈদ্যুতিক সেবা সংযোগের কাজের জন্য তারা ইচ্ছেমতো খোঁড়াখুঁড়ি করছে। তাদের কাজের ধরন এমন যে, ঢিমেতালে যেভাবে হোক তারা তাদের কাজ করছে। তাদের কাজের জন্য নগরবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে, সেদিকে তাদের কোনো দৃষ্টি নেই। ট্রাফিক পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কেউই এ বিষয়ে দৃষ্টি দিচ্ছেন না।

সরেজমিন দেখা গেছে, রূপনগর আবাসিক এলাকার মোড় থেকে দুয়ারীপাড়া মোড় পর্যন্ত মূল সড়কের ১ ফুট অংশ কেটে ফেলা হচ্ছে। সংস্কার কাজ করতে গিয়ে সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে মাটি, বালু। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। পথচারীরা সড়ক ও ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারছে না। রূপনগর আবাসিক এলাকার মোড়, রূপনগর টিনশেড ও দুয়ারীপাড়া মোড়সহ আশপাশের এলাকার একই চিত্র। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ওই এলাকার সড়কগুলো যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে।



সারা দিনের চিত্রও অনেকটা একই রকম থাকে। বিকল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজটের তীব্রতা আরও বাড়ে। যানজট প্রকট আকার ধারণ করলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়। এ কাজগুলো দিনের বেলায় না করে রাতে করলে দুর্ভোগ কিছুটা কম হতো বলে মনে করেন তারা।

এ উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে ডেসকোর কর্মরত শ্রমিক মো. রেজাউল বলেন, এখানে দুই ধরনের তার বসানো হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্নয়ন কাজ চলছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ বাস্তবায়ন করছি।

এবারও বিশ্বের বায়ুদূষণের মান সবচেয়ে খারাপ বলে স্বীকৃতি মিলেছে। এরপরও ঢাকার বায়ূ দূষণের অনুষঙ্গগুলো বন্ধ হচ্ছে না। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-গাজীপুর সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ, বিমান বন্দর তৃতীয় টার্মিনালের কাজ কয়েক বছর ধরে চলছে। গত কয়েক মাস ধরে এসব কাজের পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটিসহ সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্র এখন খোঁড়াখুঁড়ির কার্যক্রম চলছে।

সেবা সংযোগ লাইন ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গৃহীত উন্নয়ন কাজের কারণে প্রচুর ধুলো সৃষ্টি হচ্ছে। প্রকল্পের শর্তানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব ধুলো ও জনদুর্ভোগ হয় এমন বিষয়গুলো সহনীয় পর্যায় রেখে কাজ করা। কার্যাদেশপত্রে এসব শর্ত দেওয়া থাকলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এরপরও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যথারীতি পাওনা পরিশোধ করছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর দায়িত্ব পালনের উদাসীনতার কারণে ঢাকার বাতাসে ভাসছে বালি আর মাটির কণা। এখন বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাসে ধূলিকণা থেকে যাচ্ছে। ঢুকে পড়ছে বাসাবাড়ি, স্কুল ও কর্মপরিবেশে। বাইরে চলাচলে ধুলোয় চোখ-মুখ ও শরীর প্রায় কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। এসব ধুলোবালু ঢুকে পড়ছে মানুষের ফুসফুসেও। বক্ষব্যাধির বড় কারণ বায়ুদূষণ এজন্য চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়ন কাজ হলে কিছুটা ধুলো সৃষ্টি হবে। তবে এটা এমনিতেই বায়ুতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। পানি ছিটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই নগণ্য।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত