নাগাল্যান্ড উত্তর-পূর্ব ভারতে একটি রাজ্য। এটির পশ্চিমে আসাম রাজ্য, উত্তরে অরুণাচল প্রদেশ এবং আসাম, পূর্বে মায়ানমার এবং দক্ষিণে মণিপুর সীমানা করেছে। রাজ্যের রাজধানী কোহিমা, এবং বৃহত্তম শহর দিমাপুর ।পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঝাল মরিচের বাড়ি ছিল নাগাল্যান্ড। ২০১০ সালে তকমাটি কেড়ে নেয় মেক্সিকো।
উত্তর-পূর্ব ভারতের স্বর্গের উপত্যকা জুকু ভ্যালি। ২৪০০ মিটার উঁচুতে নাগাল্যান্ড আর মনিপুরের বেশ কিছু অংশ মিলিয়ে এই উপত্যকা। স্থানীয় মতে ‘জুকু’ শব্দের অর্থ “ঠাণ্ডা জল”। মনিপুর আর নাগাল্যান্ড এর বর্ডারে অবস্থিত জুকু ভ্যালি। ভ্যালির ঠিক মাঝ বরাবর দিয়ে বয়ে গেছে একটা সরু স্ট্রীম, যা জুকু এবং জাপফু এই দুই নদীর মিলিত প্রবাহ। অসংখ্য বাহারি ফুলের মেলা বসে রোজ তার দুই পাড়ে। সেই মেলায় শরিক হতেপ্রজাপতি নেমে আসে, রামধনু ডানা পিঠে নিয়ে। মেঘ ছুঁয়ে মাখামাখি হয় তার রঙে।
জুকুভ্যালি পৌঁছানোর দু’টো ট্রেল। বিশ্বেমা এবং জাখামা। বিশ্বেমা ট্রেল ধরে উঠলে বিগিনারদের সেরম কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। শুরুর দিকে ১:৩০ ঘণ্টা খাড়াই পথ হলেও, পুরোটা পথ পাথরের সিঁড়ি বিছানো। তাই খাড়াই পথ ও সহজ হয়ে যায়। জাখামা ট্রেল অপেক্ষাকৃত কঠিন। পুরোটাই খাড়াই এবং রাস্তা হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা প্রচুর। যদি দু’টো ট্রেলই এক্সপ্লোর করতে চায় কেউ তবে জাখামা দিয়ে উঠে বিশ্বেমা দিয়ে নামা অপেক্ষাকৃত সেফ।
ভারতবর্ষের অন্যান্য যে কোনো পাহাড়ি এলাকার ভ্যালিগুলোর সাথে নাগাল্যান্ড এর ভ্যালির একটা পার্থক্য আছে। ছোট ছোট বাঁশগাছ দিয়ে ঢাকা থাকায় পাহাড়গুলো বছরের অধিকাংশ সময়ই সবুজ হয়ে থাকে। চট করে দেখলে মনে হয় যেন একটা আদিম সভ্যতা সারাগায়ে সবুজ রঙের আবির মেখে, পাহাড় সেজে বসে আছে। বৃষ্টি আসে, ভিজে যায় তার শরীর। কিন্তু তার রং মোছেনা, বরং গাঢ় হয়ে যায় আরও।
নাগাল্যান্ডের বাসিন্দা না হলে বা তবে নাগাল্যান্ডে প্রবেশের জন্য ইনার লাইন পারমিট আগে থেকে নিয়ে যেতে হবে অথবা ডিমাপুর বা কোহিমা ডিসি কোর্ট থেকে সংগ্রহ করতে হবে।এই পারমিট যে কেউ খুব সহজে কোলকাতার নাগাল্যান্ড হাউস থেকে ৫০.০০/পারমিট এর বিনিময় করিয়ে নিতে পারবে।সাথে ভোটার বা আধার কার্ডের দুটো কপি নিয়ে গেলেই হয়ে যায়।
ট্রেক করবার সময় অবশ্যই নিজের জল, হাল্কা খাবার, ফল, প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখতে হবে। শীতকালে গেলে সাথে উপযুক্ত গরম পোশাক রাখতে হবে রাতে খুব ঠাণ্ডা পড়ে। বর্ষাকালে গেলে সাথে বর্ষাতি রাখতে হবে। টর্চ অবশ্যই রাখতে হবে।পুরো জায়গা প্লাস্টিক মুক্ত।জুকু ভ্যালিতে থাকার জন্য ট্রেকার’স হাট ছাড়া আর কোন ব্যাবস্থা নেই। কোহিমা থেকে ভিসামার দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। ভিসামাতে কিছু হোমস্টে আছে।
পৌঁছানো :
কলকাতা থেকে ট্রেনে ডিমাপুর অথবা ফ্লাইটে কলকাতা থেকে ডাইরেক্ট ডিমাপুর বা গৌহাটি হয়ে ডিমাপুর পৌঁছে যাওয়া যায় অনায়াসেই। ডিমাপুরে নেমে সোজা চলে যান ডিমাপুর স্টেশন সংলগ্ন শেয়ার ট্যাক্সি বুথে যেখানে মাথাপিছু ৩০০ টাকায় শেয়ার গাড়ি আপনাকে নিয়ে যাবে সোজা কোহিমা AOC স্ট্যান্ড।
শেয়ার গাড়ি থেকে নেমে একটু দূরে পরের শেয়ার গাড়ির স্ট্যান্ড মাঝের এই অল্প দূরত্বের জন্য ১০ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে অনায়াসেই চলে যাওয়া সম্ভব BOC স্ট্যান্ড। এই স্ট্যান্ড থেকে আবার শেয়ার গাড়িতে, ৫০ টাকা মাথাপিছু দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় কিগ্বেমার ডন হোমস্টের সামনে। এই শেয়ার গাড়ি আপনাকে ভিস্বেমা গ্রাম অব্ধিও নিয়ে যেতে পারে; তবে ভিস্বেমা গ্রামে সেরকম থাকার ব্যবস্থা চোখে পরে নি, বা থাকলেও হয়তো আমি দেখতে পাইনি। সেক্ষেত্রে কিগ্বেমার Dawn Homestay আদর্শ।