24 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ১১:২৯ | ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা, কোটি টাকা খরচ করেও নিরসনে নেই কোন ফল
পরিবেশগত সমস্যা

বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা, কোটি টাকা খরচ করেও নিরসনে নেই কোন ফল

রাজধানীতে কিছুক্ষন বৃষ্টিপাত হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।কোথাও কাদামাটি, আবার কোথাও হাঁটুপানি। লেগে যায় ভয়াবহ যানজট।ফলে চরম দুর্ভোগের কবলে পড়ে নগরবাসীন্দারা।মূলত সঠিক জায়গায় ময়লা আবর্জনা,পলিথিন না ফেলে রাস্তার আনাচে কানাচে ফেলে যেমন দূষণ করছে পরিবেশ তেমনি সেগুলো নগরের ড্রেনে পড়ে আটকে সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতা।যদিও ঘটনাটি নতুন নয়। তবে এ সংকট নিরসনের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও দুর্ভোগ না কমার বদলে বরং দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ২০১৮ সালে সরকার ওয়াসাকে ৪০ কোটি টাকা দিয়েছিল আর চলতি বছরে ৫ কোটি টাকা দিয়েছে।কিন্তু ফল হিসেবে গতকাল সোয়া ঘন্টার বৃষ্টিতে ওয়াসা ভবনের সামনের সড়ক এবং এর আশপাশের এলাকায় পানি জমে ছিল।রাজধানীর বড় অংশসহ সকল অলি গলি রাস্তা পানির নিচে ডুবে ছিল।

জানা যায়, ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  ঢাকা ওয়াসা জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় অন্তত ৫২৩ কোটি টাকা খরচ করেছে। এর মধ্যে তিনটি পাম্পস্টেশনের (পানিনিষ্কাশনের জন্য) জন্য ব্যয় করেছে ৩৩৮ কোটি টাকা। কিন্তু সমস্যা না কমে আরও বেড়েছে।

রাজধানীতে গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৭ মিলিমিটারের বৃষ্টিতে বেশির ভাগ এলাকা অচল হয়ে পড়লেও এর দায় অবশ্য  ঢাকা ওয়াসা একা নিতে রাজি নয়। সংস্থার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নালা দিয়ে বৃষ্টির পানি বিভিন্ন খালে যায়। নালা ভরাট হয়ে থাকায় পানিনিষ্কাশন হতে পারে না। ভূ–উপরিভাগের নালা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানের বক্তব্য হচ্ছে, ওয়াসার পাম্পের নিষ্কাশনক্ষমতা কম হওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে।

রাজধানীর রামপুরা, কল্যাণপুর ও গোপীবাগে ওয়াসার তিনটি পাম্পস্টেশন রয়েছে। এ ছাড়া গোড়ান চটবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও পাম্পস্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনের কাজ হচ্ছে বৃষ্টির পানি সেচের মাধ্যমে খালে–নদীতে ফেলা। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা বলছেন, ওয়াসার পাম্পের পরিমাণ যথেষ্ট নয়। আবার এসব পাম্পের ক্ষমতাও (পানি সেচ) কম।

রাজধানীর ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী, রাজধানীর মোট আয়তনের ১২ শতাংশ জলাধার থাকার কথা। কিন্তু ওয়াসার কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, রাজধানীতে জলাধারের পরিমাণ ২ শতাংশের মতো। বৃষ্টির পানি দ্রুত না সরার এটিও অন্যতম কারণ।

ঢাকা ওয়াসার গভীর নর্দমা রয়েছে ৩৮৫ কিলোমিটার, বক্স কালভার্ট ১০ কিলোমিটার এবং খাল রয়েছে ৮০ কিলোমিটার। ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সরকারের কাছ থেকে নেওয়া ৪০ কোটি টাকায় রাজধানীর ২৬টি খালের মধ্যে ১৯টি খাল খনন ও পরিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া ৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট, ২৮০ কিলোমিটার গভীর নর্দমা পরিষ্কার করার কথা জানিয়েছে ওয়াসা। এর বাইরে গভীর নর্দমায় বৃষ্টির পানি যাওয়ার জন্য ১ হাজার ৩০০টি ক্যাচপিট (সড়কের পাশে বৃষ্টির পানি প্রবেশের পথ) বসানো হয় ওই টাকায়। যেসব খাল খনন ও পরিষ্কার করার কথা বলেছে ওয়াসা, সেগুলোর মধ্যে ধোলাইখাল, দেবধোলাইখাল, ডিএনডি খাল, সুতিখোলা খাল, কল্যাণপুর প্রধান ও ‘খ’ খাল, কল্যাণপুর পাম্পস্টেশনের পাশে বাঁধসংলগ্ন খাল, রূপনগর প্রধান খাল, মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল, বেগুনবাড়ি খাল, উত্তরার কসাইবাড়ি খাল অন্যতম।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, টাকা খরচ হচ্ছে, কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী তা হচ্ছে না। বাসাবাড়ি থেকে খাল ও নদী পর্যন্ত পানিনিষ্কাশনের বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে না বুঝে শুধু রাস্তা কেটে পাইপ বসালে কিংবা কালভার্ট নির্মাণ করলে টাকাটা পানিতেই যাবে। তিনি বলেন, সব সময় নালা পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি খালগুলো দখলমুক্ত এবং খনন করে প্রবহমান রাখতে হবে। যাতে বৃষ্টির পানি খাল হয়ে নদী পর্যন্ত যেতে পারে। সে জন্য ঢাকা ও চারপাশের নদীরও খনন দরকার।

ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে ২ হাজার কিলোমিটারের বেশি নর্দমা রয়েছে। এর মধ্যে পানিনিষ্কাশনের জন্য ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার। এর ৫০০ কিলোমিটার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি), বাকিটা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। দুই সিটি করপোরেশনের ভূ–উপরিস্থ (সারফেস) নর্দমা রয়েছে প্রায় ১৮ কিলোমিটার। বক্স কালভার্ট রয়েছে সাড়ে চার কিলোমিটার। সিটি করপোরেশনের ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন ওয়াসার গভীর নর্দমার সঙ্গে যুক্ত।

ওয়াসার পাশাপাশি পানিনিষ্কাশনে (ড্রেনেজ ব্যবস্থা) টাকা খরচ করেছে দুই সিটি করপোরেশনও। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন পানিনিষ্কাশনের জন্য গত ১০ বছরে গভীর নর্দমা (পাইপলাইন) নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যয় করেছে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটির খরচ ৬৭৩ কোটি টাকা এবং উত্তর সিটি খরচ করেছে ৪৪০ কোটি টাকা। এই তথ্য সংস্থাগুলোর বিভিন্ন প্রকল্পের নথি পর্যালোচনা এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া।

এসব গভীর নর্দমা ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানিনিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন ওয়াসার প্রকৌশলীরা। তাঁরা বলছেন, বৃষ্টি হলে দ্রুত পানি না নামার এটিও বড় কারণ।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, বৃষ্টির পানি সরানোর মূল দায়িত্ব ওয়াসার। এরপরও জলাবদ্ধতা যাতে দীর্ঘ সময় না থাকে, সেদিকে লক্ষ রেখে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ করে সিটি করপোরেশন। শান্তিনগরের জলাবদ্ধতার সমস্যা ওয়াসা নয়, সিটি করপোরেশনই দূর করেছে।

তবে মেয়র এই দাবি করলেও গতকাল দুপুরে শান্তিনগরে প্রায় এক ঘণ্টা পানি জমে ছিল। তা ছাড়া আশপাশের এলাকা রাজারবাগ, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, বিজয়নগরে হাঁটুপানি জমে ছিল প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত। অথচ শান্তিনগর ও আশপাশের এলাকার পানিনিষ্কাশনের জন্য তিন ধাপে দুই বছর আগে প্রায় ৭০ কোটি টাকা খরচ করেছিল দক্ষিণ সিটি।

সার্বিক বিষয়ে নগর বিশ্লেষক ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন  বলেন, নালা পরিষ্কারের কাজটি শুধু বর্ষার আগে করা হয়, কিন্তু এটি সারা বছরের কাজ। ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য কী করছে, তা নিয়মিত তদারকি দরকার। ঢাকা ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন একে অন্যকে দোষ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে। তাদের কাজে সমন্বয় না হলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রাজধানীর মানুষ মুক্তি পাবে না।

তবে নগরের জলাবদ্ধতা ও সার্বিক বিষয় নিয়ে ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) একেএম শহীদ উদ্দিন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নও করা হয়েছে। ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর জলাবদ্ধতা তুলনামূলক কম। অনেক জায়গায় ময়লা-আবর্জনা জমা হয়ে ক্যাচপিটগুলো বন্ধ হয়ে যায়, এতে পানি নামতে পারে না। আমাদের কর্মচারীরা সার্বক্ষণিক কাজ করছে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত