জলবায়ু পরিবর্তনে শিশুরাই সর্বোচ্চ মূল্য দিচ্ছে
জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা নেই দেশের শিশুদের। তবে দেশের শিশুরাই সর্বোচ্চ মূল্য দিচ্ছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিলের (ইউনিসেফ) তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রতি তিনটির একটি শিশু বা প্রায় দুই কোটি শিশু বিরূপ আবহাওয়া, বন্যা, নদীভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘ভিশনারি স্পিকারস ইভেন্ট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ইউনিসেফ, ওয়ার্ল্ড ভিশন ও প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট (আইইউসিএন)।
বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমসহ শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার চালিকা শক্তি হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন ছিল অনুষ্ঠানের মূল আলোচ্য বিষয়।
অনুষ্ঠানে আলোচকেরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশগত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের অনেকের ঠাঁই হয় শহরের বস্তিতে। তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যায়। শোষণমূলক শিশুশ্রম, শিশু বিয়ে ও পাচারের ফাঁদে আটকা পড়ে লাখ লাখ শিশু।
ইউনিসেফের শিশুদের জন্য জলবায়ুঝুঁকি সূচক বা চিলড্রেনস ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩ দেশের মধ্যে ১৫তম। শিশুরা জলবায়ু ও পরিবেশগত অভিঘাতের ক্ষেত্রে কতটা ঝুঁকিতে, তা এই সূচকে তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, বাংলাদেশের শিশুরা জলবায়ুজনিত সংকটের সম্মুখভাগে। এদের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে শহরের বস্তিতে বাস করা শিশুরা। তাদের অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে, বাল্যবিবাহের শিকার, এমনকি যৌনকর্মীতেও পরিণত হচ্ছে।
শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ দূত বলে মন্তব্য করেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের জাতীয় পরিচালক সুরেশ বার্টলেট।
তিনি বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে শিশুদের সম্পৃক্ত করা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে—এমন জলবায়ুবিষয়ক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতা প্রয়োজন।
জলবায়ু সংকট নারী ও শিশুদের মতো অরক্ষিত গোষ্ঠীগুলোকে আরও নাজুক করে তোলে বলে জানান বাংলাদেশে আইইউসিএনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন।
তিনি বলেন, পরিবেশগত অবক্ষয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্পদের ঘাটতি, সংঘাত ও বাস্তুচ্যুতি কষ্টার্জিত উন্নয়ন অর্জনগুলোকে প্রভাবিত করে। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অবসান এবং পরিবেশগত টেকসই অবস্থা নিশ্চিত করা গেলে তা আন্তসংযুক্ত বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলো অর্জনে সহায়তা করবে।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের চাইল্ড অ্যান্ড ইয়ুথ ফোরামের যুবকর্মী মো. আলমগীর কবির বলেন, পর্যাপ্ত তহবিল, সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ তরুণ জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও এর প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করবে।