30 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৮:২১ | ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব আদিবাসীদের ওপর
জলবায়ু

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব আদিবাসীদের ওপর

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব আদিবাসীদের ওপর

বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে মোটাদাগে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, অতিবৃষ্টি, নদীভাঙন, পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বজ্রপাত, তাপমাত্রার পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় সাধারণত আলোচিত হয়।

মানুষের জীবন-জীবিকা, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবও সেসব আলোচনায় স্থান পায়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সফরে আসা জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূতের মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন এবং বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা প্রতিবেদনেও বজ্রপাতে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়া (যা বিশ্বের মধ্যে প্রথম),

জীবন-জীবিকা হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ মানুষের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা, জলবায়ু ও পরিবেশ অধিকার কর্মীদের সরকারের হেনস্তা এবং গাছপালা কেটে বনায়ন ধ্বংসে কিছু প্রভাবশালী ও অসাধু সরকারি কর্মকর্তার ভূমিকা- এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশকে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সংকটাপন্ন দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে জাতিসংঘের ওই দূত জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় অধিক কার্বন নিঃসরণকারী উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

দেশের অপরাপর ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, যেমন- দরিদ্র, বয়স্ক, নারী, শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন গোষ্ঠীর ন্যায় আদিবাসীরাও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের শিকার।



তবে বাংলাদেশে অন্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় আদিবাসীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ অভিঘাতের মাত্রা অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ হলো, সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আদিবাসীদের প্রান্তিক অবস্থান, প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা এবং তাদের ভৌগোলিকগত অবস্থান।

দেশের অধিকাংশ আদিবাসী জনগোষ্ঠী প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দা। খাদ্য, পানি, বাসস্থান তৈরির সামগ্রীসহ পূজা-পার্বণ ও সংস্কৃতিচর্চার বিভিন্ন উপাদানের জন্য আদিবাসীরা প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।

মানুষের ন্যায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিও বিপদাপন্ন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রত্যক্ষ ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াও আদিবাসী জনগোষ্ঠী সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কিংবা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর গৃহীত প্রকৃতিবিনাশী বিভিন্ন কার্যক্রমে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এর মধ্যে রয়েছে আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি দখল করে রাবার চাষ, পর্যটনসহ নানা ধরনের স্থাপনা তৈরি, বনায়নের নামে জমি দখল, ঝিরি-ঝরনার পাথর-বালু উত্তোলন ইত্যাদি।

এ কারণে প্রাকৃতিক বনভূমি, জীববৈচিত্র্য, পানিসহ স্থানীয় প্রতিবেশ ও পরিবেশের যেমন অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদসহ খাদ্য ও পানীয় জলের চরম সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে আদিবাসীরা।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খরার কারণে বাংলাদেশের অনেক জায়গার কৃষক চাষাবাদের জন্য পানির সংকটে পড়েন। কর্তৃপক্ষের কাছে ধান বাঁচানোর জন্য বারবার পানি চেয়ে আর্তি জানানোর পরেও জাতিগত বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার কারণে পানি না পেয়ে কোনো অ-আদিবাসী কৃষককে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে- এ রকম ঘটনা দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।



কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহীর দুই সাঁওতাল কৃষকের বিষ খেয়ে মৃত্যুবরণ প্রমাণ করেছে জলবায়ু অভিঘাতজনিত সংকটের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হওয়ার ঘটনা মিলে তাঁদের অতি সংকটাপন্ন জীবনের বাস্তবতা।

বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাসিয়া পানচাষিদের সঠিক সময়ে চারা রোপণ করতে না পারা, ফসলে নতুন পোকামাকড়ের আক্রমণ, সুপেয় পানির অভাব, বনভূমির অভাবে লোকালয়ে আসা বন্যপ্রাণীর উপদ্রব, পানির প্রাপ্যতা না থাকায় আদিবাসী কিশোরীদের জন্মবিরতিকরণ পিল খেয়ে স্বাভাবিক মাসিক চক্র থামিয়ে অস্বস্তি ও লজ্জা থেকে বাঁচার চেষ্টা ইত্যাদি একাধারে যেমন জলবায়ু সম্পর্কিত সমস্যা, তেমনি রাষ্ট্রের মধ্যে তাদের অধস্তনতা নির্দেশ করে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় আদিবাসীরা স্থানীয় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের কদাচিৎ সহযোগিতা পায়।

বাংলাদেশের ‘উন্নয়ন’ জোয়ারের সর্বগ্রাসী ঢেউ এখন বনবাদাড়ে অবস্থিত আদিবাসীদের পর্ণকুটিরের উঠান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তবে এ উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এবং লাভের ভাগ আদিবাসীদের ভাগ্যে জুটে না।

খোদ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গৃহীত প্রকল্পের কারণেই আদিবাসীরা ক্ষতি বা সম্ভাব্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের মতো এ প্রকল্পগুলোও আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সম্মতির তোয়াক্কা না করে চাপিয়ে দেওয়া হয়।

সংশ্নিষ্ট এলাকায় আদিবাসীদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংক্রান্ত প্রথাগত জ্ঞান ও চর্চার মূল্য এখানে নেই। এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ সরকারি বন বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত টেকসই বন ও জীবিকা বা সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুড (সুফল) প্রজেক্ট।

বনকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর বন নির্ভরতা কমিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, বৃক্ষাচ্ছাদন বৃদ্ধি এবং টেকসই বন ব্যবস্থাপনা এ প্রকল্পের লক্ষ্য হলেও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প না আদিবাসীদের না পরিবেশের জন্য সুফল বয়ে আনছে।



প্রাকৃতিক বন ও বনের জীববৈচিত্র্যের জন্য এ প্রকল্পই কাল হয়ে উঠছে এবং সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে আদিবাসী সমাজের জীবন-জীবিকা ও আবাসন এ প্রকল্পের কারণে আরও বিপন্ন হতে পারে- এমন আশঙ্কা পরিবেশবিদদের (সমকাল, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১)।

‘উন্নয়নের নামে বন বিভাগ একের পর এক প্রকল্প আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের দাপট কাজে লাগিয়ে আমাদের বাড়ির উঠান পর্যন্ত সামাজিক বনায়নের (সুফল প্রকল্প) গাছ লাগিয়ে দখল করেছে’- এটি এ প্রকল্প সম্পর্কে ভুক্তভোগী এক আদিবাসী অধিকার কর্মীর অভিযোগ।

আদিবাসীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবের মাত্রা দেশের অপরাপর জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক বেশি এবং বহুমাত্রিক।

আদিবাসীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব চিহ্নিতকরণ ও মোকাবিলায় তাই এগুলোকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে এবং গৃহীত সংশ্নিষ্ট প্রকল্পসহ সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পে আদিবাসীদের সম্মতি ও অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত