জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে
বর্তমানে বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা পরিবেশের অবক্ষয় ও দূষণ। এখন মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আবহাওয়ার অস্থিরতাসহ অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা।
এসবের মূলে মানুষের কর্মকাণ্ডই প্রধানত দায়ী। যথেচ্ছ বৃক্ষনিধন, জনসংখ্যার আধিক্য, দারিদ্র্য, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, জোরালো শব্দের হর্ন, আবাসিক এলাকায় শিল্প-কারখানা ও ইটভাটার অবস্থান ইত্যাদি পরিবেশকে দূষিত করছে। পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তন।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশেও অস্থায়ী কিংবা স্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, বাড়ছে ঝুঁকি। একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সব দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক বেশি। এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য বর্তমান। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বর্ষা মৌসুম। এ সময় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, যা অনেক সময়ই বন্যায় ভাসিয়ে দেয়।
এ ছাড়া মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের আগ মুহূর্তে কিংবা বিদায়ের পরপরই স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো কিংবা সাগরে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়, যার আঘাতে বাংলাদেশ প্রায় নিয়মিতই আক্রান্ত হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে বাংলাদেশের এই স্বাভাবিক চিত্রটি এখন অনেকখানি বদলে গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে তীব্র ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে স্বাদুপানির এলাকাগুলো লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
ফলে উপকূলীয় বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর পানীয়-জলের সহজলভ্য, স্বাদুপানি-নির্ভর কৃষিকাজ ও জীবিকার ওপর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ প্রভাব এ অঞ্চলের নারী ও শিশুদের ওপর আরো মারাত্মক। স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জীবনেও জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
বহু কিশোরীর বিয়ে হয়ে যায় অল্প বয়সে। তারা স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। পরিবারের সংকটের কারণে বহু কিশোর কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়। বুধবার প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের এই চিত্র উঠে আসে।
এই চিত্র এখন খুব পরিচিত। বর্তমান জলবায়ুর এই পরিবর্তনকে আমরা ‘মানবসৃষ্ট’ বলতে চাই। প্রকৃতির প্রতিশোধ নির্মম। মানুষ যতটুকু প্রকৃতির ওপর আঘাত করবে তার চেয়ে শত গুণ বেশি আঘাত মানুষের ওপর করবে প্রকৃতি। মানুষ প্রকৃতির ওপর যে অত্যাচার চালিয়েছে তার ফল পেতে শুরু করেছে।
অতীতের জলবায়ুর পরিবর্তনগুলো ছিল প্রাকৃতিক। কিন্তু এখন পরিবর্তনটা মানুষই দায়ী। তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমাদের সুন্দর এই ধরিত্রী নিকট ভবিষ্যতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে।
কারণ, ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার বৃদ্ধি বায়ুমণ্ডলের উচ্চ ও নিম্নস্তরে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। আর তাই আর্দ্র অঞ্চল আর্দ্রতর ও শুষ্ক অঞ্চল শুষ্কতর হবে।
ফলে মানুষের জীবনধারণ বা টিকে থাকাই হয়ে উঠবে দুরূহ। আমাদের এই পৃথিবীকে কীভাবে রক্ষা করব এখন সে বিষয়টি নিয়েই ভাবতে হবে সবাইকে।