জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব দেখলো বিশ্ব
গত ফেব্রুয়ারি ছিল রেকর্ডে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ ফেব্রুয়ারি মাস। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার রেকর্ডও সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এমন উষ্ণতা দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের বার্তা দেয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য বলছে, ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত প্রাক-শিল্প সময়কালে যে গড় তাপমাত্রা ছিল, সেই তুলনায় গত ফেব্রুয়ারির তাপমাত্রা ছিল ১.৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের তুলনায় ০.৮১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত ১২ মাসের বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছিল রেকর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ, প্রাক-শিল্প সময়কালের চেয়ে ১.৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানিয়েছে, দৈনিক বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা হিসেবে ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালে যে উষ্ণতার মাত্রা ছিল, গত ৮ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চারদিন সেই সময়ের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও বেশি ছিল।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপের তাপমাত্রা ১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের গড়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। ইউরোপে গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল ছিল, তবে এই মহাদেশের জন্য দ্বিতীয় উষ্ণতম সময় ছিল এটি।
এদিকে ফেব্রুয়ারিতে মেরু অঞ্চলের বাইরে বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা রেকর্ড যে কোনো মাসের চেয়ে সর্বোচ্চ ২১.০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। যা ২০২৩ সালের আগস্টে নির্ধারিত ২০.৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পূর্ববর্তী রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়।
কোপার্নিকাসের তথ্যমতে, জানুয়ারি মাসের শেষে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় দৈনিক তাপমাত্রা ২১.০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়।
কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের পরিচালক কার্লো বুনটেম্পো বলেন, গত কয়েক মাসের রেকর্ডের দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় যোগ হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাস। জলবায়ু ব্যবস্থার ক্রমাগত উষ্ণায়ন অনিবার্যভাবে বিশ্বকে চরম তাপমাত্রার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আমরা যদি বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস স্বাভাবিক অবস্থায় স্থিতিশীল করতে না পারি, অনিবার্যভাবে নতুন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের রেকর্ড ও এর পরিণতির মুখোমুখি হবো।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গ্রান্থাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্টের জলবায়ুবিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. ফ্রেডেরিক অটো বলেন, আমাদের জলবায়ু উষ্ণ হচ্ছে, এমন অনেক প্রমাণ রয়েছে।
আপনি যদি জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্বীকার করতে চান, তবে আপনি এও দাবি করতে পারেন যে পৃথিবী সমতল! আবহাওয়া স্টেশন, উপগ্রহ সবকিছু থেকে পাওয়া তথ্য ইঙ্গিত করে যে, আমাদের গ্রহটি একটি বিপজ্জনক গতিতে উত্তপ্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মানুষ তেল, গ্যাস ও কয়লা পোড়াতে থাকে, তাই জলবায়ু উষ্ণ হতে থাকে। এটি খুব সহজ ও স্পষ্ট বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কোনো সিলভার বুলেট বা ম্যাজিক নেই! আমরা জানি কী করতে হবে- জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করুন।
জ্বালানি পোড়ানোর বদলে টেকসই ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা তা না করবো, ততক্ষণ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো জীবন ও জীবিকা ধ্বংস করতেই থাকবে।