অস্তিত্বহীনতায় ভুগছে গড়াই নদীর খাল, হুমকিতে কৃষি ও পরিবেশ
প্রায় সাত দশক আগে কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর উপজেলার আংশিক কৃষি জমির জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, স্থানীয় জলপথ সম্প্রসারণে খননকৃত সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ থেকে ২৫ মিটার চওড়া গড়াই নদীর খালটি এখন অস্তিত্বহীনতায় ভুগছে।
অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে নদী কমিশনের বিধি না মেনে কথিত উন্নয়নের অজুহাতে খোদ সরকারি দপ্তরের খামখেয়ালি ও অদূরদর্শিতার কারণেই বেদখল হয়ে গেছে খালটি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই খালটি ২০১৮ সালে উন্নয়নের কথা বলে কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ অনাপত্তি পত্রের মাধ্যমে নিজেদের আয়ত্বে নেয়।
পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্যোগে সরকারি অর্থ ব্যয়ে খালটির মূল প্রবাহ চ্যানেলে মাটি ভরাট করে একাধিক কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণ করার কারণেই দখলবাজির ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তবে এলজিইডির দাবি, খালটির ওপর যে কয়টি ব্রিজ কালভার্ট করা হয়েছে তা বাপাউবো’র সঙ্গে পরামর্শ করেই করা হয়েছে। এলজিইডির এমন দাবিকে নাচক করে বাপাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, কোনরূপ এনওসি ছাড়াই এলজিইডি বিধি না মেনে এসব কালভার্ট করেছেন।
বাপাউবো সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া নামক স্থান থেকে গড়াই নদীর ডান তীর থেকে উৎসারিত হয়ে কমলাপুর, মঙ্গলবাড়িয়া বাজার, উদিবাড়ি, বাড়াদি, উদিবাড়ি কলোনি, চৌড়হাস মন্দিরপাড়া, চেচুয়া, ফুলবাড়িয়া, জগতি, বাইপাস হয়ে মিনাপাড়া পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গোড়াই খাল।
নদী-খাল সুরক্ষা আইন না মেনে খালটির মূল প্রবাহ চ্যানেল ভরাট করে সড়ক বিভাগ একটি ও এলজিইডির ১৫টি কালভার্টসহ রাস্তা নির্মাণের কারণেই এমন দৈন্যদশায় গোড়াই খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
কমলাপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নির্মাণ শ্রমিক ফারুক হোসেনের অভিযোগ, ‘উন্নয়নের কথা বলে এখন দেখছি খালের পাড়ে মাটি ভরাট করে দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৬০/৭০ ফিট চওড়া খালের দুইপাড়ে ভরাট হয়ে এখন ২৫/৩০ ফিট আছে তাও আবার সংস্কার না করায় ময়লা আবর্জনা জমে থাকে।’
সদর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের চাষি হালিম শেখ জানান, ‘গড়ই খাল ভরাট হয়ে দখল হতে হতে কোনো কোনো জাগায় এর চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলায় এই খাল দিয়ে এখন আর পানি নিষ্কাশন হয় না। সেই কারণে আমাদের মাঠ বছরের বেশি সময়ই ডুবে থাকে। কোনো চাষ হয় না বলেই এখন এই মাঠও হারিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর হয়ে।’
নদী পরিব্রাজক দল কুষ্টিয়ার সভাপতি খলিলুর রহমান মজু বলেন, ‘উন্নয়নের নামে পার বেঁধে ভরাট করে কোনোভাবেই খাল দখল করা যাবে না। খাল বা নদীর সীমানার মধ্যে এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে মূল প্রবাহ বা চ্যানেল বাধাগ্রস্ত হয়।’
কুষ্টিয়া পৌর এলাকার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত গড়াই খালটি সংস্কার করতে ২০১৮ সারে বাপাউবো’র অনাপত্তি পত্র নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি স্বীকার করে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আসলে খালটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে ঘাটতি ছিল।’
তবে অদূরদর্শিতা, অবহেলা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে খাল দখল হয়েছে এমন অভিযোগকে নাকচ করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এলজিইডি কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি দাবি করেন, ওই খালের ওপর ব্রিজ কালভার্ট যে কয়টা হয়েছে তার সবগুলিই পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনাপত্তি নিয়েই করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো জায়গায় সরকারি অন্যান্য সংস্থা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আবেদন করলে সেখানকার মূল অবকাঠামো অক্ষুন্ণ রাখাসহ কিছু শর্ত সাপেক্ষে আমরা অনাপত্তি দেই।
কিন্তু কুষ্টিয়া পৌর এলাকাধীন কমলাপুর ও মঙ্গলবাড়িয়া এলাকায় গড়াই খালের ওপর ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণে এলজিইডি আমাদের কাছ থেকে কোনো এনওসি নেয়নি।’