চরম দূষণে ভুগছে দিল্লি
দুই দিন ধরে রাজধানী দিল্লির বাসিন্দারা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে রয়েছে আকাশের দিকে, বৃষ্টির আশায়। আবহাওয়া অফিসের আগাম আশ্বাস ছিল, দু-এক দিনের মধ্যেই দিল্লিতে বৃষ্টি হবে। হিমাচল প্রদেশের তুষারপাত তার ইঙ্গিত দিয়েছে। বৃষ্টি হলেই কমে যাবে দিল্লির দূষণ। সাময়িক স্বস্তি পাবে রাজধানী।
বৃষ্টি ছাড়া দিল্লির ভয়াবহ দূষণের যে ভিন্ন কোনো গতি নেই, সেই উপলব্ধি রাজধানীর মানুষের হয়ে গেছে। কারণ, দূষণ দূরীকরণে ফি বছর টন টন তেল পুড়েছে।
প্রায় ৩০ বছর ধরে এই অসহনীয় দূষণই দিল্লির দিবারাত্রির কাব্য। দূষণে কে কাকে টেক্কা দেয়, দিল্লি না বেইজিং, সেই প্রতিযোগিতা হয়ে উঠেছে অন্তহীন।
অথচ দূষণের কারণগুলো কারও অজানা নয়। হেমন্তের শুরু থেকে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। দীপাবলি, ছটপূজা, গুরুপূর্ণিমার মতো ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠান ও অগুনতি বিয়ের দরুন দিল্লিতে এই সময় দেদার বাজি পোড়ানো হয়।
শব্দবাজি যতটা বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, ততটাই দায়ী উত্তরের দুই রাজ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ফসলের গোড়া মাঠে জ্বালিয়ে দেওয়ার আবহমানকালের রীতি।
গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো দূষণে ইন্ধন জোগায় রাজধানীর চার ধারের নির্মাণযজ্ঞ। মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতা শহরে প্রতিদিন যত গাড়ি চলে, দিল্লিতে চলে তার চেয়ে বেশি।
সরকারি হিসাবেই প্রতিদিন রাজধানী দিল্লিতে চলা সব ধরনের যানবাহনের সংখ্যা সোয়া কোটি। এর সঙ্গে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ঔদাসীন্য ও প্রশাসনের অপদার্থতায় ক্রমবর্ধমান শিল্প দূষণ।
এসবের মোকাবিলায় ৩০ বছর ধরে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার যা করে চলেছে, তা নিছকই লোক–দেখানো। দূষণের মাত্রা ও প্রকোপ তাই বছরের পর বছর বেড়ে চলেছে।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।
স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়।
বৃষ্টি তাই একমাত্র ভরসা। তবে মৌখিক উদ্যোগের কিন্তু খামতি নেই। পাঞ্জাব-হরিয়ানার রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনাও সর্বোচ্চ আদালত করেই চলেছেন। দিল্লিসহ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও জানতে চাইছেন তাদের সম্ভাব্য পদক্ষেপ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুতেই হয় না।
দূষণ ছড়ানো কারখানাগুলো দিল্লির বাইরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগও দৃশ্যমান নয়। রাজধানীর জায়গায় জায়গায় নির্মল বাতাস ছড়াতে ‘স্মগ টাওয়ার’ তৈরি করা হয় সেই ২০১৯ সালে।
আজ রাজধানীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড স্বীকার করছে, ওই ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ ব্যবস্থা কার্যকর নয়। রাস্তায় রাস্তায় ধুলো ওড়া বন্ধ করতে জল ছিটাতেও দেখা যায়। দূষণ যদিও যে কে সে–ই। অগত্যা বৃষ্টিই একমাত্র ভরসা।