পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করে জানালেন, ঘন ঘন কেন এতো বজ্রপাত
ছোটবেলার ‘বিদ্যুৎ-পাঠ’ বুঝি ভুল! মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে আকাশে বিদ্যুৎ চমকায় এবং বাজ পড়ে। কিন্তু বাস্তবেই কি তাই! যদি তাই হয়, তা হলে হঠাৎ করে বছর কয়েক ধরে বজ্রপাতের সংখ্যা এত বাড়ল কেন? মেঘ কি হঠাৎ করে একে অপরকে ধাক্কা মারা বাড়িয়ে দিল নাকি! তানা হলে কেনই বা গত ২ দিনের ঝড়ে এত মানুষের প্রাণ গেল বজ্রপাতে । কারণ জানালেন আবহাওয়াবিদ এবং পরিবেশবিদরা।
আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশবিদদের কথায়, এর অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে দূষণ (Pollution)। গাছ কেটে কেটে বহুতল নির্মাণ, কলকারখানার ধোঁয়া, গাড়ির ধোঁয়া, যেখানে সেখানে বছরভর নির্মাণকাজ চলতে থাকায় অত্যধিকমাত্রায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
সেই তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমানে গাছ লাগানো হচ্ছে না। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে বাতাসে গরম ধূলিকণা বাড়ছে, যেটা বজ্রপাতের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। এদিকে বাতাসের উপরের পরিমণ্ডলে বর্ষার আগে ও পরে মে-জুন মাস নাগাদ প্রচুর পরিমানে জলীয় বাষ্প থেকে যাচ্ছে।
যখনই উষ্ণ বায়ু উপরের দিকে ওঠার চেষ্টা করছে, তখনই অন্যান্য বায়ু এবং জলীয়কণার সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে। ফলে একেকটা জলীয় কণা ব্যাটারির মতো কাজ করছে। আর তখনই বাজ পড়ছে।
সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে বজ্রপাত ও বৃষ্টি হয়। সেই কারণে এই মেঘকে বজ্রগর্ভ মেঘ বলা হয়। গত কয়েক বছর ধরে এপ্রিল থেকে জুন মাসে বাংলায় এই বজ্রগর্ভ মেঘের পরিমাণ বেড়েছে। তার একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য। তেমনই আর একটা কারণ, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।
আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পূর্নভাবে জড়িত দূষণ। দূষণের মাত্রা যত বাড়ছে, গড় তাপমাত্রাও তত বাড়ছে। ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার আদর্শ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া একটা ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার পর বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থেকে যায়। এখন বাংলাতেও তাই হয়েছে। কারণ, কিছু দিন আগেই ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়েছিল অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় যশ বা ইয়াস।
যার কারনে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকেছে রাজ্যে। সেই সঙ্গে মে মাস থেকেই বাংলায় তাপমাত্রা বেড়েছে। সকাল ও দুপুরের দিকে তীব্র গরম। সব মিলিয়ে স্থানীয় বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার আদর্শ পরিবেশ রয়েছে এখানে। আর তারই ফলে প্রায় প্রতিদিন বিকেলের পর থেকে শুরু হচ্ছে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি।
এই কিউমুলোনিম্বাস মেঘের গভীরতা সাধারণত খুবই বেশি। যেমনটা তার গভীরতা ছিল ১২ কিলোমিটার। এই ব্যাপারে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরওলজির বিজ্ঞানী প্রমিত দেববর্মন বলেন, “ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে।
পরিবেশে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা আগের থেকে অনেক বেশি থাকছে। এর ফলে বজ্রপাতের পরিমাণও বাড়ছে। এই বজ্রপাত সাধারণত অল্প জায়গায় মধ্যে ‘ক্লাউড টু গ্রাউন্ড’ অর্থাৎ মেঘ থেকে মাটির দিকে হচ্ছে।”